
ছবি: সংগৃহীত
ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে ভলান্টিয়ার পয়েন্টের সৈকতটি রাজা পেঙ্গুইনদের সবচেয়ে বড় উপনিবেশের আবাসস্থল।
এই সময়ে — দক্ষিণ আটলান্টিকের গ্রীষ্মে — ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের পেঙ্গুইনরা এই নির্জন সৈকতগুলোর রুকারিতে জড়ো হয় তাদের তুলতুলে ছানাদের বড় করার জন্য। প্রায় এক মিটার উচ্চতার এসব পেঙ্গুইন তাদের ছানাদের ঘিরে প্রতিরক্ষামূলক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে তুমুল তর্কে মেতে থাকতে দেখা যায়।
বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়া রোধে, দর্শনার্থীদের পাখিদের থেকে ছয় মিটার দূরে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আপনি যদি এক-দুই মিনিটের জন্য পেছন ফেরেন, তবে কৌতূহলী বা এলাকা রক্ষাকারী কোনো পেঙ্গুইন থপথপ করে ঠিক আপনার কাছে চলে আসবে, যেন রঙিন ওয়েটসুট পরা তিন ফুট লম্বা কোনো দুষ্টু ছেলে আপনাকে পাশের চোখে দেখছে।এই দ্বীপগুলিতে পেঙ্গুইনরা সবচেয়ে দৃশ্যমান ও সহজে দেখা যায় এমন সামুদ্রিক জীবগুলোর মধ্যে একটি।
এখানে বিভিন্ন জাতের পেঙ্গুইন আছে — গর্ত খোঁড়া ম্যাজেলানিক পেঙ্গুইন এবং লাল ঠোঁটের, হলুদ পায়ের জেন্টু পেঙ্গুইন। ফকল্যান্ডের ৭৪০টি দ্বীপজুড়ে পাঁচটি ভিন্ন প্রজাতির প্রায় এক মিলিয়ন পেঙ্গুইন বাস করে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ অ্যান্টার্কটিকা এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশের মধ্যে প্রথম বরফমুক্ত ভূমির মধ্যে একটি এবং এখানকার অনেক প্রজাতি তাদের পরিসরের উত্তরাংশে অবস্থান করছে, যা আশা করা হচ্ছে পৃথিবীতে তাপমাত্রা আরও গরম হওয়ার সাথে সাথে আরও দক্ষিণে চলে যাবে।
রকহপার জাতের পেঙ্গুইনের সংখ্যা দ্বীপপুঞ্জে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে এবং মনে করা হচ্ছে এটি তাদের প্রধান খাদ্য উৎস, ঝিনুক সদৃশ ক্রিল এর ঘাটতি এবং এটি দক্ষিণে আরও ঠান্ডা পানিতে চলে যাওয়ার ফলে প্রজাতিটির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।১৯শ ও ২০শ শতাব্দীতে কিং পেঙ্গুইনদের থেকে চর্বি, তেল, ডিম এবং পালক সংগ্রহ করা হত, তবে ১৯৬৯ সালে বাণিজ্যিক শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও চোরাশিকার এখনও হয়, তবে তা খুবিই কম।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক বছর ধরে হুমকির মুখে আছে পেঙ্গুইনের নানা প্রজাতি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে এম্পেরর পেঙ্গুইন। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমাতে না পারলে এম্পেরর পেঙ্গুইনদের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না।
এছাড়াও ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে, যার ফলে এর পিট মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে, প্রতি বছর প্রায় নয়টি ফুটবল মাঠ সমান মাটি উড়ে যেতে দেখছি," বলেছেন এস্থার বার্ট্রাম, ফকল্যান্ডস কনজারভেশন-এর প্রধান নির্বাহী।”
শুষ্ক পরিবেশ বন্য অগ্নিকাণ্ড সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিক আগুনগুলো গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী আবাসস্থল পুড়িয়ে দিয়েছে। ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের সংরক্ষণ গোষ্ঠী এবং গবেষকরা পরিবর্তিত পরিবেশ ব্যবস্থার অধ্যয়ন করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল পুনরুদ্ধ প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন, কারণ বিদেশী উন্নয়ন ও সংরক্ষণের বাজেট হুমকির সম্মুখীন।
ডেফ্রা, যা এই প্রকল্পটি পরিচালনা করে, নিশ্চিত করতে পারেনি যে ডারউইন প্লাস প্রকল্পটি ২০২৫ সালের পরেও চলবে কিনা। ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ এবং ওয়েস্টমিনস্টারের আর্থিক সংকটের মধ্যে ৮,০০০ মাইল সমুদ্রের দূরত্ব থাকায়, সেখানে থাকা বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর মূল্য সহজেই উপেক্ষিত হয়।
মেহেদী হাসান