ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

দৃষ্টিনন্দন পাখি ‘ডাহুক’ বিলুপ্তির পথে!

শরিফুল রোমান, মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ:

প্রকাশিত: ০০:২৩, ১২ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০০:২৫, ১২ মার্চ ২০২৫

দৃষ্টিনন্দন পাখি ‘ডাহুক’ বিলুপ্তির পথে!

আমাদের দেশে যে ক’টি পাখি ডাকের জন্য বিখ্যাত তাদের মধ্যে ডাহুক অন্যতম। প্রয়াত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ ডাহুকের ডাককে লালন ফকিরের গানের সাথে তুলনা করেছেন।
কালের বিবর্তন আর মানুষের অসচেতনতার কারণে দৃষ্টিনন্দন পাখি ডাহুক আজ বিলুপ্তির পথে। 

গ্রাম-বাংলার মানুষের কাছে অতি পরিচিত পাখি ডাহুক। বর্ষা মৌসুমে কচুরিপানায়, ঝোপঝাড়ে বসে উঁচু স্বরে 'কুব' 'কুব' করে ডাকে। ডাহুক পাখিদের ডাকাডাকিতে চারপাশ আন্দোলিত হয়। রাত যতো গভীর হয়, নিঝুম হয় ততো ডাহুকের ডাকাডাকি  বেড়ে যায়। ডাহুকের ডাক শোনা যায় বহুদূর থেকে।

ডাহুক কচুরি পাতার ফাঁক দিয়ে লম্বা লম্বা পায়ে পানির ওপর চলাফেরা করতে করতে খাবার সংগ্রহ করে। চতুর এ পাখি সঙ্গী ছাড়া একা একা ঘোরাঘুরি পছন্দ করে না। পাখিটি স্ত্রী ও পুরুষের আকৃতি দেখতে প্রায় অবিকল হয়ে থাকে। মাঝারি আকৃতির জলের পাখি ডাহুক। খুব সতর্ক পাখি। আত্মগোপনে পারদর্শী। 

বিভিন্ন হাওর-বাঁওড়, খাল, বিল-ঝিল, ডোবা, নালা-দীঘির পাশের ঝোপঝাড়ে দল বেঁধে বাস করে ডাহুক পাখি। ডাহুক পাখির তেল দিয়ে বিভিন্ন রোগের টোটকা তৈরি হয় কবিরাজদের এমন বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণেই এ পাখিটি  সবচেয়ে বেশি শিকারে পরিণত হচ্ছে। 

গ্রাম-গঞ্জে পুকুরে বসবাস করা ডাহুক মা ছানাসহ বেশি দেখা যায়। এ পাখির কপাল ধবধবে সাদা, মাথা চাঁদের মতো, ঘাড়, পিঠ, ডানা ও লেজের উপরিভাগ কালো। আর গলা, বুক, চিবুক ও দুই চোখই সাদা। পেট ও লেজের তলার রঙ খয়েরি। ডানার নিচে, বুকের দু’পাশটা কালো। ঠোঁট হলদে ও লাল, পা হলদে। লম্বা পায়ের আঙুলগুলো ধারালো। পানিতে ভাসা ছানা ধরার জন্য কেউ চেষ্টা করলে মুহূর্তেই এরা আচমকা আত্মগোপন করতে খুব পটু।

বর্ষা ঋতুতে এদের বংশ বিস্তার ঘটে। বাসা করে পানির কাছে ঝোপঝাড়ের কিংবা গাছগাছালির ডালে। এরা আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ডিম পাড়ে ৬ থেকে ৭টি। ডিমের রঙ হলুদ। ডিম ফোটে প্রায় ২০ থেকে ২৪ দিনে। মাস তিনেক পর বাচ্চারা আলাদা জীবন বেছে নেয়। পাঁচ-সাতটি ডিম পাড়ে এরা, ডিমের রং ফিকে হলুদ বা গোলাপি মেশানো সাদা। ডাহুক-ডাহুকি মিলেই ডিমে তা দেয়। বাচ্চার রং সব সময় হয় কালো। ডিম ফোটে প্রায় ২১-২৪ দিনে। আর ২৪-৩০ ঘণ্টা পরই বাচ্চারা বাসা ছাড়ে। মাস তিনেক পরে বাচ্চারা আলাদা জীবন বেছে নেয়। প্রজননের সময় একটি পুরুষ ডাহুক অন্য একটি পুরুষ ডাহুককে সহ্য করতে পারে না। দেখলেই তারা মারামারি করে। 

ডাহুকের প্রিয় খাদ্য জলজ পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ। এছাড়া শাপলা-পদ্ম ফুলের নরম অংশ, কচি পানিফল, জলজ শেওলা, লতাগুল্মের নরম অংশ, ধান, কাউন, ডাল, সরিষা, শামুক, কেঁচো, জোঁক, মাছ, ছোট মাছ, শাকসবজি ও ফল খেয়ে থাকে। 

প্রতিটি এলাকায় তরুণ-যুবকরা সমাজকে সচেতন করতে এগিয়ে এলে ডাহুকসহ অন্য পাখিদেরও সংরক্ষণ করা সম্ভব বলেও মত দেন এ পাখিপ্রেমী রুদ্র কমল। খাদ্যসংকট ও প্রজননকালীন সময়ে শিকারিদের উৎপাতসহ নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব এ প্রজাতির পাখি। 

আফরোজা

×