ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

বিপন্ন হালদা, জীব-বৈচিত্র্য হুমকিতে

 নিজস্ব সংবাদদাতা,ফটিকছড়ি।

প্রকাশিত: ০১:১৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিপন্ন হালদা, জীব-বৈচিত্র্য হুমকিতে

 

কারখানার বর্জ্য, বিষ দিয়ে শাখা খালের মাছ নিধন, ড্রেজারের আঘাত, চোরাইভাবে বড়শি দিয়ে মাছ শিকারিদের লোভের ফাঁদে পড়ে বিপন্ন হতে বসেছে হালদা নদীর মা মাছ। দূষণে এ নদীর ডলফিন মারা যাচ্ছে একের পর এক। মৃত্যু হচ্ছে মা মাছসহ বিভিন্ন প্রকারের মাছের। বিভিন্ন খালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের কারখানার বর্জ্য হালদা নদীতে এসে পড়া, হালদা পাড়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যের কারণে এ নদী দূষিত হয়ে পড়ছে বলে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি ও গবেষকরা মনে করছেন। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি ও গবেষকদের নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্স এন্ড ল্যাবরেটরি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায়ও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভায় গবেষকেরা দূষণকেই মাছ ও ডলফিনের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন। দূষণের প্রভাবে হালদায় গেল ছয় বছরে ৪৫টি ডলফিন ও প্রায় অর্ধশত মা মাছের অকালমৃত্যু হয়েছে। 
 
এদিকে,  জোয়ারের পানির সাথে এসব তেল ছড়িয়ে পড়েছে হালদার আশপাশের ২০ কিলোমিটার এলাকায়। এতে করে হালদা এবং কর্ণফুলীর মৎস সম্পদসহ জীব বৈচিত্র হুমকির  মুখে পড়েছে।  দেখা দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়ের।জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলিত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত হালদা ও এর শাখা খালে মোট ৪৫টি ডলফিন মরে ভেসে ওঠে। দু-একটি ছাড়া প্রায় সব ডলফিনেরই শরীরে আঘাতের চিহ্ন শনাক্ত করেছিল উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ। একাধিক ডলফিনকে হত্যাও করা হয়।


 হালদা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকাভুক্ত (অতি বিপন্ন প্রজাতি) জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী হলো ডলফিন। বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন আছে মাত্র ১ হাজার ১০০টি। এরমধ্যে শুধু হালদাতেই ছিল ১৭০টি। গেল ছয় বছরে হালদায় ৪৫টি ডলফিন মারা যাওয়ার ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন নদী ও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।

তা ছাড়া, প্রতিনিয়তই দূষণের মাত্রা বাড়ছে। এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে হালদার পরিণতি হবে ভয়াবহ। হালদার সঙ্গে যুক্ত বিশেষ করে কাটাখালী ও খন্দকিয়াসহ আরও কয়েকটি খালের বিষাক্ত বর্জ্য এসে পড়ছে নদীতে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ‘অনন্যা’ আবাসিক ও তৎসংলগ্ন আবাসিক এলাকার বর্জ্য প্রকল্পের মূল নালা হয়ে কুয়াইশ, কৃষ্ণ ও খন্দকিয়া খাল হয়ে হালদায় পড়ছে বলে ওই বিশেষজ্ঞ মনে করেন।
 
নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্বনামধন্য শিক্ষক প্রফেসর ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন ‘মৃত ডলফিন উদ্ধারে কাজ করেন এবং নদীর সুরক্ষায় কাজ করেন বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। উদ্ধার হওয়া মরা ডলফিন ও মরা মাছের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা ল্যাবরেটরির মাধ্যমে ময়নাতদন্ত করা হয়। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডলফিন ও মা মাছের মৃত্যুর কারণ পাওয়া যায় হালদা দূষণ।

 

ইউনুস/সাজিদ

×