ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১

মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে মাইক্রোপ্লাস্টিক

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫

মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে মাইক্রোপ্লাস্টিক

সান্তা লুজিয়া দ্বীপে প্লাস্টিক আবর্জনায় ঢাকা একটি সৈকতের দৃশ্য।

একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক যেগুলোর আকার ৫ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট সেগুলো ইঁদুরের মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করতে পারে। যদিও মানুষের মধ্যে এ ধরনের প্রভাব পড়ে কিনা তা এখনও অস্পষ্ট। গবেষণাটি উদ্বেগজনক কারণ ইতোমধ্যে বিভিন্ন গবেষণায় শরীরের প্রায় প্রতিটি অংশে, যেমন ফুসফুস, অস্থিমজ্জা এবং প্রজনন অঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

গবেষণাটি গত সপ্তাহে সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। রক্তপ্রবাহে মাইক্রোপ্লাস্টিক কোষের বাধা সৃষ্টি করে সেরিব্রাল থ্রম্বোসিসকে প্ররোচিত করতে পারে এবং স্নায়ুবিহারিক অস্বাভাবিকতার দিকে পরিচালিত করতে পারে

গবেষণার জন্য, বিজ্ঞানীরা ইঁদুরকে ফ্লুরোসেন্ট পলিস্টাইরিনের ছোট ছোট টুকরা খাইয়েছেন। পলিস্টাইরিন হলো একটি সাধারণ প্লাস্টিক, যা অ্যাপ্লায়েন্স, প্যাকেজিং এবং খেলনা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এরপর, একটি বিশেষায়িত মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে তারা ইঁদুরের মস্তিষ্কে প্লাস্টিকের প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন, যার জন্য ইঁদুরের খুলি সার্জারি করে একটি স্বচ্ছ জানালা স্থাপন করা হয়েছিল।

ইঁদুরের পলিস্টাইরিন গ্রহণের প্রায় তিন ঘণ্টা পরে, বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন যে প্রাণীর ইমিউন কোষগুলো প্লাস্টিকের কিছু অংশ শোষণ করেছে। ন্যাচারে-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুসারে, ‘ইমিউন কোষ, যেমন নিউট্রোফিল এবং ফ্যাগোসাইটস, উজ্জ্বল প্লাস্টিকের কণাগুলো গ্রহণ করেছিল। এর কিছু কোষ মস্তিষ্কের কর্টেক্স নামক অংশের ছোট রক্তনালির সংকীর্ণ বাঁকে আটকা পড়েছিল।’

এই কোষগুলো রক্তনালিতে আটকে গিয়ে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়, যা অনেকটা রক্তজমাট বাঁধার মতো। কিছু বাধা সময়ের সাথে সরে গেলেও, কিছু দিনের পর দিন থেকে গিয়েছিল। এর ফলে ইঁদুরদের চলাচল ক্ষমতা কমে যায়।

গবেষণার প্রধান লেখক পেকিং ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিকেল গবেষক হাইপেং হুয়াং, ন্যাচার-কে বলেন, ‘আমাদের দল ইঁদুরের হৃদপিণ্ড এবং যকৃতে একই ধরনের বাধা দেখতে পেয়েছে, তবে এই গবেষণার ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি।’

এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত 'মানব রক্তে প্লাস্টিক কণা দূষণের আবিষ্কার এবং পরিমাণ নির্ধারণ' নামে ২০২২ সালের একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে যে মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলি মানুষের রক্তে ছিল। 

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিশেষজ্ঞদের অনুমান একজন ব্যক্তি প্রতি বছর ৭৮,০০০ থেকে ২১১,০০০ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা খাবার, পানীয় বা শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারেন।

এই বিষয়টি ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

এম হাসান

×