ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

উপকূলে কেন প্রাণ হারাচ্ছে মা কচ্ছপ?

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০২:১১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

উপকূলে কেন প্রাণ হারাচ্ছে মা কচ্ছপ?

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে মাত্র দুই সপ্তাহে এমন ৫০টির বেশি মরা কচ্ছপ পাওয়া গেছে। পরিবেশ রক্ষাকর্মীরা বলছেন, উপকূলে ডিম পাড়তে এসে জেলেদের জালে আটকা পড়ে কিংবা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক মা কচ্ছপগুলো। উখিয়ার সোনারপাড়া সমুদ্র উপকূলে বালিয়াড়িতে পড়ে রয়েছে মৃত সামুদ্রিক কচ্ছপ। এই সৈকতে একদিনেই পাওয়া যায় ৫টি মৃত কচ্ছপ। 

এসব কাছিমের সবকটির পেটে ডিম ছিল। মৃত্যুর পর বালিয়াড়িতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে ডিম। আর কাছিমের সামনে ও পেছনের ডানাগুলো ছিল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে কচ্ছপের গায়ে রয়েছে একাধিক আঘাতের চিহ্ন।
 
সোনারপাড়া সৈকতের জেলেরা বলেন, ‘কিছু দিন ধরে সাগর থেকে ভেসে আসছে কচ্ছপ। কি কারণে মারা যাচ্ছে সেটা জানি না। মৃত ভেসে আসার পর দেখা যাচ্ছে গায়ে ক্ষত রয়েছে।’
  
কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল দিয়ে প্রতিদিনই সাগরে মাছ শিকারে যায় শত শত ট্রলার। কাছিমের ডিম সংরক্ষণকারিদের দাবি, জেলেদের জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে উপকূলে ডিম পাড়তে আসা সামুদ্রিক কাছিম। প্রতিদিনই বালিয়াড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে ৩ থেকে ৫টি কাছিম।

ইনানী সৈকতের ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘ইনানি বীচ-এ ব্যবসা করি। এখানে গত ১০ দিনের মধ্যে কাছিম ১০ থেকে ১৫টা মতো মৃত কাছিম দেখেছি বালিয়াড়িতে পড়ে রয়েছে। সে কাছিমগুলোর পেটে ডিম ছিল।’

সোনারপাড়ার কাছিমের ডিম সংরক্ষণকারী নবী হোসেন বলেন, ‘এ বছর ডিম পারার জন্য যতগুলো কাছিম কিনারায় আসছে এগুলো জালে আটকা পড়ছে। জালে যখন আটকে যায়, জেলেরা তখন পা ভেঙে দেয় বা কেটে দেয়। কিনারায় যে কাছিমগুলো আমরা দেখছি সব কাছিমের মধ্যে ডিম আছে। প্রতিটি কাছিমে একশো বা দেড়শো ডিম রয়েছে।’
 
নবী হোসেন আরও বলেন, ‘কথায় আছে, ডাবে আছে মিঠা পানি, আল্লাহ তাআলার মেহেরবানি। এরকম যদি কাছিম মারা যায় আমাদের দেশের সম্পদ কমে যাবে। কারণ কোনো প্রাণী সাগরের জেলিফিশ খেতে পারে না, শুধুমাত্র কাছিমই খেতে পারে। এই পর্যন্ত ২০টার মতো মৃত কাছিম ভেসে উঠেছে। সৈকতের উত্তর সোনাপাড়া, মংগারটেক থেকে ইনানি বিচের আগে পর্যন্ত সব এসেছে মৃত কাছিম।’
 
কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের দরিয়ানগর, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, প্যাঁচারদ্বীপ, ইনানী, পাতুয়ারটেক ও সোনাদিয়া সৈকতে মৃত কাছিম ভেসে আসছে বেশি। প্রতিটি কচ্ছপই মা কচ্ছপ এবং যা ডিম পাড়তে উপকূলে বালিয়াড়িতে আসতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে। তবে কচ্ছপের ডিম পাড়ার স্থানগুলো নিরাপদ জোন করার দাবি পরিবেশবাদি সংগঠনগুলো।
 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কচ্ছপ প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট স্থানে এসে ডিম পাড়ে। কিন্তু আমরা দেখেছি বিভিন্ন এনজিও এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান কচ্ছপের ডিম পাড়ার স্থানে অভয়ারণ্য বলে ফান্ডের টাকা লুটপাট করছে। কিন্তু এতে কচ্ছপের কোনো উপকার হচ্ছে না।’ 
 
কচ্ছপ নিয়ে কাজ করা সংস্থা নেকম জানিয়েছে, গত একমাসে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে জীবিত ১০টি মা কচ্ছপ থেকে সংগ্রহ করা হয় ১ হাজার ৭১০টি ডিম। আর গেল বছর কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে মারা যায় ১১০টিরও বেশি কচ্ছপ।

শহীদ

×