জলবায়ু
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ–২৯) নভেম্বর ১১-২২, ২০১৪ তারিখে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছরের মতো এবার ও বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল তাতে যোগ দেবে। কপ ২৮-এ বাংলাদেশের কিছু ভালো অর্জন রয়েছে। জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা, অর্থের সহজলভ্য এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে ন্যায্য প্রাপ্তির পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ তহবিল বরাদ্দের জন্য জলবায়ু অর্থায়নের পক্ষে দরকষাকষি করে অনেকাংশে সফল হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর ১০০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছিল। জলবায়ু তহবিলের অর্থ প্রাপ্তির জটিলতার বিষয় নিয়েও কথা বলেছিল বাংলাদেশ।
৭০০ মিলিয়ন ডলার লোকসান ও ক্ষতি তহবিল প্রতিষ্ঠা ছিল কপ ২৮-এর একটি মূল অর্জন। জলবায়ুজনিত দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশ ন্যায়সংগত আন্তর্জাতিক অর্থায়নের পক্ষে কাজ করে আসছে। অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে নতুন অর্থায়ন প্রক্রিয়াগুলো কার্যকরী এবং সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার ভিত্তিও তৈরি করেছে। আশা করা যায়, এর সুফল অচিরেই মিলবে।
বাংলাদেশ এই সম্মেলনে যাচ্ছে আমূল বদলে যাওয়া এক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। অপর দিকে পৃথিবীজুড়ে তাপমাত্রা বাড়ছে, জীববৈচিত্র্যের হচ্ছে ক্ষতি আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে উঠছে নৈমিত্তিক ঘটনা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য সমর্থন পাওয়া বাংলাদেশের জন্য আবশ্যক।
২৯তম কপ বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য অভিযোজন, প্রশমন এবং ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। সে হিসেবে কপ ২৯-এ বাংলাদেশ জলবায়ু সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ, উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জনে বৈশ্বিক পদক্ষেপের হকদার বটে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতি নিরূপণ করার জন্য একটি ক্লাইমেট ভালনারিবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট করা হয়েছিল। এই দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায় যে মধ্য ও উপকূলীয় বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলো প্রবল বৃষ্টিপাত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বন্যা ও নদীভাঙনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বার্ষিক বর্ষা বন্যা বাংলাদেশের মোট ভূমির প্রায় ১৮ শতাংশ প্রভাবিত করে। ফলে বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলের প্লাবনভূমিতে কৃষি, অবকাঠামো ও জীবিকাকে প্রভাবিত হয়।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল খরাপ্রবণ, শুষ্ক মৌসুমে তীব্র পানিসংকটের সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো ঘূর্ণিঝড়ের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ঘটনাগুলো তীব্রতর হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। ফলে মিঠাপানির সম্পদ এবং আবাদযোগ্য জমি দূষিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। দেশে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা চরম উষ্ণ দিনগুলোর স্থায়িত্ব বাড়িয়ে তুলতে পারে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। এই প্রবণতা দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের পরিধি বাড়ানো না হলে ২০৫০ সাল নাগাদ, জলবায়ু প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপির ২ শতাংশ ক্ষতি হতে পারে।
দরকষাকষিতে দক্ষ লোকজনের স্বল্পতার কারণে প্রায়ই উপযুক্ত ফোরামে বাংলাদেশের যথাযথ চিত্র তুলে ধরা সম্ভব হয় না। তবে বাংলাদেশ জলবায়ু নীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ২০২১ সালে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) হালনাগাদ করেছে, যাতে গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাসের জন্য উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যগুলো সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নবায়নযোগ্য শক্তি, শক্তি দক্ষতা এবং টেকসই কৃষিব্যবস্থা।
এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করা নির্ভর করছে উন্নত দেশগুলো থেকে যথেষ্ট আর্থিক সহায়তা এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের ওপর। কপ ২৯এর কেন্দ্রীয় বিষয়ের মধ্যে তাই এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শহিদ