আগ্নেয়গিরি
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে ২০২২ সালে একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। সেই অগ্ন্যুৎপাতের কারণে স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের শীত আরও শীতল হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। সেই অগ্ন্যুৎপাতের কারণে আগামী বছরগুলোয় বাল্টিক সাগরে বরফের আবরণ বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা। গেল কয়েক দশক বাল্টিক সাগরে বরফের আবরণ তেমন দেখা যায়নি। আবারও ফিরে আসবে বরফ।
২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই নামের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। তখন রেকর্ড ১০ থেকে ১৫ কোটি টন সমুদ্রের পানি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বাষ্পীভূত হয়েছিল। এই পানি দিয়ে ৬০ হাজার অলিম্পিক আকারের সুইমিং পুল পূর্ণ করা যায়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের বিজ্ঞানীরা জানান, সেই অগ্ন্যুৎপাতের পর ২০২৩ সালে ওজোনস্তরে অস্বাভাবিকভাবে বেশ বড় আকারের ছিদ্র দেখা যায়। সেই ছিদ্রের কারণে ২০২৪ সালে অস্ট্রেলিয়া গ্রীষ্মের সময় বেশি শুষ্ক ছিল। আগ্নেয়গিরির কারণে যে বাষ্প তৈরি হয়, তার ভবিষ্যৎ প্রভাব পরিমাপ করা বেশ কঠিন একটি কাজ। সেই অগ্ন্যুৎপাতের তথ্যাদির মাধ্যমে জলবায়ু মডেল তৈরি করেন বিজ্ঞানীরা। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে আসছে শীতে এই প্রভাব বেশি পড়তে পারে। জার্নাল অব ক্লাইমেটে এমন একটি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারজুড়ে জলীয় বাষ্প পরিমাপ করার জন্য উপগ্রহ ব্যবহার করেন। ১৯৭৯ সাল থেকে উপগ্রহ ব্যবহার করা হচ্ছে। টোঙ্গা আগ্নেয়গিরির কারণে ওজোনস্তরের ছিদ্রের মাত্রা বাড়ছে বলা যায়। সেই প্রভাব অস্ট্রেলিয়ায় দেখা গেছে। সেই প্রভাব এখন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলেও দেখা যাবে। বিজ্ঞানীরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখছেন, আসলে শীতকালে ঠান্ডার পরিমাণ আদৌও বাড়বে কি না।
বিভিন্ন জলবায়ু মডেল থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় স্বাভাবিক শীতের চেয়ে শীতল ও আর্দ্রতার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। একইভাবে স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় শীতের মাত্রা বাড়বে আর উত্তর আমেরিকায় উষ্ণ শীত দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে বাতাসের বায়ুমণ্ডলীয় তরঙ্গ বিশ্ব আবহাওয়াকে প্রভাবিত করছে। এই তরঙ্গ বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নানা জায়গায় পরিবর্তন করছে। অগ্নুৎপাতের প্রায় তিন বছর পরও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
বিজ্ঞানী মার্টিন জুকার বলেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে তাপমাত্রা ১ থেকে ১ দশমিক ৫ সেন্টিগ্রেড কমতে পারে। সম্ভাব্যভাবে ১৯৮০ সালের মতো ঠান্ডা দশক দেখা যাবে। সে সময় বাল্টিক সাগরের ৯৬ শতাংশ বরফে ঢেকে গিয়েছিল। লা নিনার কারণেও ইউরোপের অন্যান্য অংশে শীতল শীত দেখা যাবে। আবহাওয়াবিদেরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে লা নিনার কারণে এ বছরের শীতকাল ইউরোপে গত বছরের তুলনায় শীতল হবে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৬০ শতাংশের মতো লা নিনা পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে। এতে আল্পস পর্বতমালায় আরও ঘন ঘন ও ভারী তুষারপাত হতে পারে।
সূত্র: ইউরোনিউজ
শিহাব উদ্দিন