সবুজের ছোঁয়া
অফিস থেকে এসেই বারান্দায় গাছের কাছে ছুটে যান রফিক আহমেদ। সেখানে তিনি কিছু ইনডর প্ল্যান্ট রেখেছেন। জায়গা অল্প, তবে সাজানো গুছানো তাঁর বাগান। টবে, র্যাকের ওপর, গ্রিলে ঝুলিয়ে তিনি গাছ রেখেছেন। লতা জাতীয় গাছে গ্রীল সেজেছে দারুণ রূপে। চোখ ফেরানো মুশকিল। ‘সারাদিনের খাটাখাটনি, মানসিক চাপ- সব কিছুই একটুখানি সবুজের ছোঁয়ায় হারিয়ে যায়। সতেজ হয়ে যায় মন-প্রাণ’-বলেন রফিক আহমেদ।
যান্ত্রিক এই নগরীতে রফিকের মতো অনেকেই সবুজে সুখ খুঁজে পান। আহামরি টাকা-পয়সা খরচ হয়, তাও না। শৌখিন কাজে ইচ্ছেটাই আসল। পরিত্যক্ত জিনিসে বারান্দা ভরে রেখে কি লাভ? একটুখানি সবুজের উপস্থিতি পাল্টে দিতে পারে বহুদিনের ধুলা জমা বারান্দার চিত্র। সেটাই বলছিলেন ইভা রহমান। তিনিও বারান্দায় ইনডোর প্ল্যান্ট রেখেছেন। সঙ্গে আছে বসার জায়গাও। স্বামী-স্ত্রী দুজনে সেখানে বসে চা-নাস্তা খান। বুদ্ধি করে তিনি খাঁচায় এক জোড়া পোষাপাখিও রেখেছেন।
প্রাকৃতিক একটা আবহ এখন তার বারান্দা জুড়ে। মেহমান আসলে ঘরে বসার চেয়ে এখানে বসতে পছন্দ করে- হেসে বলেন তিনি। অথচ কিছুদিন আগেও এই বারান্দায় বসবার উপায়ই ছিল না। বারান্দা, বসার ঘর, সিঁড়ি, রান্নাঘর, পড়ার টেবিল, ছাদে গাছ রাখছেন অনেকেই। স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে বয়স্ক, প্রবীণ। সকলেই একটুখানি সবুজের প্রতি ঝুঁকছেন। মানসিক প্রশান্তি মিলছে তাদের গাছের ছোঁয়ায়। ঘরের গাছে তাপমাত্রা যেমন কমিয়ে রাখে, তেমনি সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। অবসরটা হয়ে ওঠে রঙিন।
ইনডর প্ল্যান্টের আহামরি যতœআত্তি লাগে না। মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিতে হয়। মিডিয়া (মাটির মিশ্রণ) যেন ভালো হয়। গাছের পাতায় ধুলো জমলে পরিষ্কার করা দরকার। পানি স্প্রে করলেই হয়ে যায়। একটুখানি ইউরিয়া সার পানিতে গুলে তা গাছে স্প্রে করলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। দুইমাস পর পর করতে হবে। মোটা দাগে এগুলোই ইনডর প্লান্টের যতœ বলেন এক্সপার্ট বাগানী জাকিয়া সুলতানা। আসলে শখের বাগানিরা সমস্যায় পড়ে অন্য জায়গায়। ভালো গাছ খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হয় তাদের।
অনলাইনে অনেকেরই ভরসা হয় না। দেখায় এক জিনিস দেয় অন্য জিনিস। অমিলটা আকাশ-পাতাল। আবার নার্সারি, ফুটপাথের গাছের ব্যবসায়ীরা যেনতেন গাছ ধরিয়ে দিতে বেশ পটু। এই যখন অবস্থা তখন উপায়টা কি? নতুন বাগানীরা কি করবেন? তারা তো আর সেভাবে গাছ চিনেন না। দুনিয়ার সব জায়গায়ই ভালো-মন্দ উভয়ই থাকে। দুয়ে মিলেই এই সমাজ। অনলাইনে কিছু বিশ্বস্ত সেলার আছে, যারা কথা ও কাজে মিল রাখেন।
এমনকি কুরিয়ারে গাছ নষ্ট হলে তা পাল্টেও দেন। বিক্রির পরে খোঁজ-খবর রাখেন। বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে পিছু হটেন না একদম। ব্যবসাটাই তাদের কাছে সব না। ক্রেতা সন্তুষ্টি, সবুজের প্রসার হোক এমনটাই চান তাঁরা। শুধু রিভিউ নয়। এরা গাছের নানা গ্রুপ দ্বারা বিশ্বস্ত বিক্রেতার পরিচিতি পেয়েছেন। গাছের গ্রুপগুলোই এদের বিশ্বস্ত হিসেবে সেলার কোড দিয়েছে। এবার জেনে নিন এ রকম কিছু পেইজের খবর।
অরণীর : বারো হাজারের বেশি ফলোয়ার্স এই পেজের। পছন্দের সব প্ল্যান্ট এখানে খুঁজে পাবেন।
: বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বুশরা ইসলাম নামে এক তরুণীর গাছের সম্ভার। অন্যান্য গাছের পাশাপাশি এখানে প্রায় সব প্রজাতির পাথোস পাওয়া যাবে।
পেজের ফলোয়ার্স প্রায় চল্লিশ হাজার। শুধু গাছ নয়। গাছের সঙ্গে আনুষঙ্গিক সকলকিছু এরা বিক্রি করে। এছাড়া আছে জংগলবাড়ি, চক্কর, গ্রীন ই বিডি, আসিফ দ্য ক্যাকটোবয়, অষপড়াব ইত্যাদি। কাটামুকুট, বাগান বিলাসে যাদের একটু আগ্রহ বেশি। তারা গ্রীন ই বিডি পেজে যোগাযোগ করতে পারেন।
ডেলিভারি এবং পেমেন্ট : ঢাকার মধ্যে হলে বেশিরভাগ বিক্রেতা ক্যাশ অন ডেলিভারি করেন। অর্ডার দেওয়ার এক কিংবা দুদিনের মধ্যে গাছ পৌঁছে যায় বাসায়। ঢাকার বাইরে তারা কুরিয়ারে গাছ পাঠান। সেক্ষেত্রে অগ্রিম পেমেন্ট করতে হয়। বিশ্বস্ত বিক্রেতার প্রায় সকলেই কুরিয়ারে গাছ নষ্ট হলে পরে টাকা ফেরত দেন। অথবা পুনরায় গাছ পাঠিয়ে দেন।
গাছের দরদাম : পঞ্চাশ টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত গাছের দাম রয়েছে। চারা কিনলে কম দাম। পরিণত, বয়স্ক ঝোপালো গাছের দাম খানিকটা বেশি। গাছের বয়স, প্রজাতি, সাইজ, মান ইত্যাদি ভেদে দাম ওঠানামা করে।
সতর্কতা : ইনডোর অথবা আউটডোর যেটাই হোক না কেন। গাছ কিনেই যেমন লাগানো যাবে না। তেমনি অন্য গাছদের সঙ্গে মিশানো যাবে না। কমপক্ষে সাতদিন তাকে এক জায়গায় রেখে দিতে হবে। সম্ভব হলে ছত্রাক নাশক অথবা পানিতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড গুলে স্প্রে করা যেতে পারে।
চলছে বর্ষাকাল। গাছ লাগানোর উত্তম সময়। এখনই শুরু করতে পারেন আপনার শখের বাগান করা। সামান্য যতেœই আপনার বাগান পাবে পরিপূর্ণতা।