জলবায়ু সম্মেলনে ন্যায্যতার দাবিতে বিক্ষোভ।
দুর্বল অভিযোজন গোল খসড়ার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে বৈশ্বিক জলবায়ু অভিযোজনের অর্থ দ্বিগুণ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ চাইছে বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন হ্রাসে প্রধান নির্গমনকারী দেশগুলোর রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির সীমার মধ্যে রাখতে উন্নত দেশগুলোকেই নেতৃত্বের ভূমিকা দিতে হবে।
রবিবার (১০ ডিসেম্বর) দুবাইএক্সপো সেন্টারের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৮তম জলবায়ু সম্মেলন থেকে এই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে জবাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের পার্টি হেড প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু বিষয়ক দূত সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে ফসিল ফুয়েলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অনেক দেশ অনেক কথা বলছে। কিন্তু বিজ্ঞান কি বলছে আমদের সেটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ২৮তম জলবায়ু সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিজ্ঞানের ভিত্তিতে গ্রহণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আলোচনার খসড়াগুলোতে সব বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আগামী দুই দিন হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই দিনে আশা করছি, আমরা এই সম্মেলন থেকে একটি গ্রহণযোগ্য ফল বের করে আনতে পারব।’
অভিযোজনের গোলের দুর্বল খসড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা ‘বৈশ্বিক অভিযোজন লক্ষ্যের যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে তা পর্যালোচনা করছি। আশা করছি, সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে আমরা শেষ দুই দিনে এই খসড়াকে শক্তিশালী করতে পারব।’
বাংলাদেশের প্রেস কনফারেন্সে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক এবং আবুধাবিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ‘প্যারিস চুক্তির ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য রাখতে ২০৩০ সালের জন্য নির্গমন হ্রাসের প্রতিশ্রুতির উচ্চাকাঙ্খা সাত গুণ বেশি হওয়া দরকার।’
বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোকে তাদের ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ), স্বল্পোন্নত দেশের তহবিল (এলডিসিএফ), অভিযোজন তহবিল (এএফ) এবং জিইএফ ট্রাস্ট তহবিলকে পর্যাপ্ত সংস্থান দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে এবং সেই তহবিলের প্রবেশাধিকার দ্রুত এবং সহজ হওয়া উচিত।’
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘প্যারিস চুক্তির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অভিযোজন ও প্রশমন লক্ষ্য নির্ধারণ চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান হচ্ছে অনুদান-ভিত্তিক অর্থায়ন এবং অভিযোজন ও প্রশমনে ভারসাম্যপূর্ণ ৫০:৫০ ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্ধ। বাস্তবায়নের জন্য দ্বিগুণ অভিযোজন তহবিল চাই। আমরা জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য সময়সীমাবদ্ধ বাস্তবায়নযোগ্য লক্ষ্যগুলোর ওপর জোর দিয়ে অভিযোজন সংক্রান্ত গ্লোবাল গোলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উন্মুখ।’
বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন শাহাব উদ্দিন সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে গৃহীত ৭০ কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষয়ক্ষতির তহবিলের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জন্য কপ-২৮ প্রেসিডেন্সি এবং কিছু সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মিটিগেশন ওয়ার্ক প্রোগ্রামের অগ্রগতি এবং গ্লোবাল স্টক টেক (জিএসটি) এর অধীনে প্রশমন কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে অপর্যাপ্ত।’
তিনি জরুরি ভিত্তিতে জলবায়ু অর্থের একটি সাধারণ সংজ্ঞা ঠিক করতে অর্থ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির (এসসিএফ) প্রতি আহ্বান জানান। জলবায়ু অর্থায়নের নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোল সংক্রান্ত আলোচনার জন্যও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লস এন্ড ডেমেজের অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেতে বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিষয়ে পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘এই তহবিল থেকে অর্থ নিতে বাংলাদেশ পুরোপুরি প্রস্তত। এ ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।’
এম হাসান