মো. শাহাব উদ্দিন
বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর প্রতি জলবায়ু অভিযোজনের অর্থায়ন দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) রাতে জলবায়ু সম্মেলনের হাই-লেভেল সেগমেন্টে রাষ্ট্রীয় স্টেটমেন্টে বাংলাদশ প্রতিনিধি দলের নেতা পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এ আহ্বান জানিয়েছেন।
এ সময় তিনি বলেছেন, চলমান জলবায়ু সম্মেলনকে সফল করতে হলে চলতি বছর থেকেই ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সরবাহ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে জলবায়ু অর্থায়নের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট করতে হবে। ২০২৫ সাল পরবর্তী জলবায়ু অর্থায়নের জন্য নিশ্চিত করতে হবে নিউ কালেকটিভ কোয়ানটিফাই গোলের অগ্রগতি।
এ সময় বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের লস এন্ড ডেমেজের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আর্থিক ম্যাকানিজম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ১ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের লক্ষ্য ঠিক রাখতে হলে বিদ্যমান কার্বন নিঃসরণ ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতির মধ্যকার বিরাট ব্যবধান আবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে।
এজন্য গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
কার্বন নিঃসরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির প্রতিবেদনে দেখা যায়, আমরা এখনও ভুল পথেই পরিচালিত হচ্ছি। ভূপৃষ্ঠে গ্রীন হাউজ গ্যাসের ঘনত্ব অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ফলে দেড় ডিগ্রী সেলসিয়াসের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি বর্তমানের চেয়ে ৭ গুণ বৃদ্ধি করতে হবে।
মিশরের পর্যটন শহর শার্ম আল শেখে চলমান ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনে মঙ্গলবার থেকে দ্বিতীয় দাফায় দুই দিনের এই হাই-লেভেল সেগমেন্ট শুরু হয়েছে। এই সেগমেন্টে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান মন্ত্রীরা বক্তব্য দেন। এই হাই লেভেল সেগমেন্টের মধ্যদিয়েই শুরু হয়ে যাবে এবারের জলবায়ু সম্মেলনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। এটি চলবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত। এই বৈঠকেই এবারের জলবায়ু সম্মেলনের চুক্তি অনুমোদন করা হবে।
এর আগে গত ৭ ও ৮ নবেম্বর প্রথম দফায় হাই-লেভেল সেগমেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। ওই সেগমেন্টে ১১০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান বক্তব্য দেন। ওই সেগমেন্টেরই অংশ হিসাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিশেষ অধিবেশনে ১১ নভেম্বর জলবায়ু সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে- জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত একটি দেশ। অথচ বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণ মাত্র দশমিক ৪৮ শতাংশ। ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দুর্যোগের একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে এই শতাব্দী শেষে বাংলাদেশের ১২ থেকে ১৭ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে, যা অনেক ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশের চেয়েও বড়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে তার জলবায়ু ঝুঁকিকে টিকে থাকার সক্ষমতায় পরিণত করতে প্রতিনিয়ত লড়াই করছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাষ্ট ফাণ্ড গঠন করেছে। ইতিমধ্যে এ তহবিল থেকে ৪৯ কোটি ডলার অর্থ দিয়ে ৮৫০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমরা আমাদের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম উদ্বাস্তু আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। ১৩৯ তলা বিশিষ্ট এই আবাসন কমপ্লেক্সে ৪ হাজার ৪০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার বসবাস করতে পারবে।
এছাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ৪ লাখ ৪২ হাজার গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয় প্রদান করা হয়েছে।
তিনি জানান, এ বছরেরই ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থায় ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান জমা দিয়েছে। এই অভিযোজন পরিকল্পনায় ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ১১৩টি করণীয় চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হলে ২৭ বছরে ২৩০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এই পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে।
পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, যে সকল দেশ গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী, তাদের উচিত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মানুষের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব গ্রহণ করা। আমরা দেখতে চাই, উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রতি বছর প্রদান করছে, যার সিংহ ভাগই সুনির্দিষ্টভাবে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে।
তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হয়েও বাংলাদেশ নবাযনযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি দক্ষতা ও জ্বালানি সংরক্ষণের মতো স্বল্প কার্বন উন্নয়নের পথে হাঁটছে। আমরা ইতিমধ্যে ৬৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করেছি। দেশের গ্রীডবিহীন এলাকায় এই সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। বর্তমানে আমরা গ্রীড ভিত্তিক সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে নজর দিচ্ছি।
এসআর