এক্সপেরিয়েন্স শেয়ারিং বাংলাদেশ এন্ড আদার্স পার্টিস
- ৪৬ হাজার মানুষের এক মহাযজ্ঞ
- লস এন্ড ডেমেজের জন্য স্বতন্ত্র তহবিল দাবি বাংলাদেশের
সময় যতই ফুরিয়ে আসছে, শার্ম আল শেখে চলমান জলবায়ু সম্মেলনে ততই চাপ বাড়ছে। ভয়াবহ জলবাযু সংকটের হাত থেকে ধরণীকে বাঁচাতে সম্মেলন থেকে একটি ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত বের করে আনতে প্রায় দুইশ দেশের নাগরিক সমাজ একের পর চাপ সৃষ্টি করছে। চাপ সৃষ্টি করছে উন্নত দেশ ও দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর যাতে তারা কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে তীব্র হয়ে উঠা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় তৎপর হয়।
নাগরিক সমাজের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের সরকারী দলের প্রতিনিধিরাও এই চাপ সৃস্টিতে অংশ নিচ্ছে। মুল আলোচনার পাশাপাশি সাইডলাইনে সংবাদ সম্মেলন, সভা-সেমিনার, বিক্ষোভ, মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচীর মাধ্যমে এই চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও সোমবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের দাবি ও অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এতে চলমান জলবায়ু সম্মেলনের অগ্রগতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের লস এন্ড ডেমেজের ক্ষতি পোষাতে স্বতন্ত্র তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছে।
শার্ম আল শেখে সোমবার থেকে জলবায়ু সম্মেলনের শেষ সপ্তাহের দরকষাকষি শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই সস্মেলন কেন্দ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে। আয়োজক কর্তৃপক্ষ মিশর প্রেসিডেন্সির প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সোমবার দিন শেষে শার্ম আল শেখ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৪৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিশাল এই অংশগ্রহণকারীদের নানা কর্মসূচীতে জলবায়ু সম্মেলনে এক মহাযজ্ঞ চলছে।
প্রথাগত প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলোর বাইরেও নাচ গান, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার দাবিগুলো নিয়ে চিত্রাংকন প্রভৃতি কর্মকান্ডে দিনভর মুখর থাকছে। তবে কর্মসূচীর মুলেই রয়েছে পৃথিবীকে জলবায়ু বিপর্যয়ের হাত থকে রক্ষা করা। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে বাঁচাও, বৈ্শ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে অধিক পরিমানে কার্বন নিঃসরণ কমাও, প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার দ্রুত ছাড় কর।
জলবায়ু অধিকার কর্মীদের এবারের আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে শিশু ও তরুণদের অংশগ্রহণে। এই প্রথম জাতিসংঘ শিশু ও তরুণদের জন্যও জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের জন্য খোলা হয়ে্ছে একটি স্টল। স্টলটিতে দিনভর নানা চিত্র অংকন করে তারা তাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। দাবি জানাচ্ছে, সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের কাছে। তাদের দাবি হচ্ছে, ভবিষ্যত প্রজম্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলা।
এতসব যজ্ঞের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে বাংলাদেশ সংবাদ সম্মেলন করে চলমান আলোচনায় জলবায়ু অর্থায়নের অগ্রগতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশ বলছে, প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি এখনও পূরণ হয়নি। জলবায়ু অর্থায়নের হিসাবে প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়ে বাংলাদেশ জরুরি ভিত্তিতে জলবায়ু অর্থায়নের সাধারণ সংজ্ঞা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে।
অভিযোজন অর্থায়ন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একমাত্র রক্ষা কবচ হচ্ছে অভিযোজন। কিন্তু অভিযোজন অর্থায়নে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান এখনও অনেক। বাংলাদেশ জোড়াল কণ্ঠে আবারও জলবায়ু অর্থায়নের ৫০ শতাংশ অভিযোজন ও ৫০ শতাংশ মিটিগেশনে বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে অভিযোজনের অর্থ অনুদান হিসাবে চায় বাংলাদেশ। যা হতে হবে নতুন এবং বিদ্যমান সরকারি সহায়তার অতিরিক্ত।
প্যারিস চুক্তি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বলছে, বিশ্ব সম্প্রদায় প্যারিস জলবাযু চুক্তি বাস্তবায়ন থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। এই চুক্তি বাস্তবায়নে প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর সত্যিকার প্রতিশ্রুতির অভাব দেখা যাচ্ছে। এবারের সম্মেলনে মিটিগেশন কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনার ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে মানব জাতির টিকে থাকার প্রশ্ন জড়িত। কিন্তু বিদ্যমান হারে যদি কার্বন নিঃসরণ অব্যাহত থাকে তাহলে কোন অভিযোজন ও রেজিলিয়েন্স পদক্ষেপই কাজে আসবে না।
বাংলাদেশ লস এন্ড ডেমেজের জন্য পৃথক তহবিল গঠনের দাবি করে বলছে, সান্টিয়াগো নেটওর্য়াকে লস এন্ড ডেমেজের জন্য সচিবালয় স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ আশা করছে, ২০২৪ সালের মধ্যে লস এন্ড ডেমেজের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির সিদ্ধান্ত চলমান ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনেই গ্রহণ করা হবে।
জলবায়ু সম্মেলনের মুল কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্টিত এই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
এমএস