ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বাইডেনের বক্তব্যে জলবায়ু আলোচনায় আশার সঞ্চার

কাওসার রহমান, শার্ম আল শেখ (মিশর) থেকে

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১২ নভেম্বর ২০২২

বাইডেনের বক্তব্যে জলবায়ু আলোচনায় আশার সঞ্চার

জলবায়ু অর্থায়নের দাবিতে আজ শনিবার বিক্ষোভ করে আফ্রিকান দেশগুলো। ছবি: জনকণ্ঠ।

  • বক্তব্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে সম্মেলনে
  • গতি পাবে জলবায়ু আলোচনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বক্তব্য জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে আশার সঞ্চার করেছে। সম্মেলনে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে তার বক্তব্যের নানা দিক। চলমান জলবায়ু আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য নিয়ে হচ্ছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। 

বিশেষ করে, জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে উন্নত দেশগুলোর বৈশ্বিক মন্দার অজুহাত সম্মেলনের শুরুতে যে হতাশার সৃষ্টি করেছিল, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কার্বন দুষণকারী দেশের ইতিবাচক বক্তব্যের পর সেই হতাশা এখন কেটে গছে।  বিশ্লেষকরা আশা করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যের পর জলবায়ু আলোচনা আরও গতি পাবে।

জাতিসংষের ২৭তম জলবায়ু আসর এবার আফ্রিকার দেশ মিশরের শার্ম আল শেখে গত ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। এবারের সম্মেলনে বিশ্বের একশটির বেশি দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান যোগ দিয়েছেন। এছাড়া বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের ৩০ হাজারেরও অধিক মন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তা, সুশীর সমাজের প্রতিনিধি ও সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেছেন।

বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি দেশ হিসাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার দুপুরে শার্ম আল শেখ এসে সন্ধ্যায় জলবায়ু সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কার্বন দুষণকারী দেশের রাষ্ট্র প্রধান হিসাবে জলবায়ু সম্মেলনে এসে কী বলেন তার প্রতি দৃষ্টি ছিল অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের।

জো বাইডেনের বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো ছিল  যুক্তরাষ্ট্রের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ভুল স্বীকার করা। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প সরকারের আমলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া সঠিক হয়নি। ভূল বুঝতে পেরেই যুক্তরাষ্ট্র আবার জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে এসেছে।  

বর্তমানে বিশ্বের দুই শত দেশের নেতারা শার্ম আল শেখে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ি কার্বন নিঃসরণ কমাতে আলোচনা করছেন। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন বলছে, গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত ২৬তম জলবায়ু সম্মেলনের পর থেকে কার্বন কমানোর অগ্রগতি নিতান্তই অপর্যাপ্ত। এ কারণে চীনের পর বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্বন দুষণকারী দেশ হিসাবে এ ব্যাপারে  জো বাইডেন কি বলেন সবার দৃষ্টি ছিল সেদিকে।

এ প্রসঙ্গে বাইডেন বলেছেন, ‌‌২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য অর্জনের পথে যুক্তরাষ্ট্র আবার ফিরে এসেছে। এ ব্যাপারে তিনি অন্যান্য দেশগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ সময়ে বাইডেন স্বীকার করেন, গরীব দেশগুলোকে জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সঠিক ভূমিকা পালন করেনি। এজন্য তিনি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অভিযোজন কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিতে অভিযোজন তহবিলে বা এ্যাডাপটেশন ফান্ডে নতুন করে ১০০ মিলিয়ন বা ১০  কোট ডলার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আফ্রিকার দেশগুলোর অভিযোজন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে নতুন করে ১৫০ মিলিয়ন বা ১৫ কোটি ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দ্বীপ দেশগুলোর জন্যও ২০ মিলিয়ন ডলার প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন।

বর্তমানে শার্ম আল শেখে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আলোকে গ্লোবাল গোল অন এ্যাডাপটেশন চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনা চলছে। প্যারিস চুক্তিতে গ্লোবাল গোল অন এ্যাডাপটেশনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই গোলের লক্ষ্য কি, গ্লোবাল গোল  বলতে কী বুঝায়, কিভাবে এই গোল বাস্তবায়ন হবে তা বলা নেই। 

এবারের সম্মেলনে সেই গোল ঠিক করার কাজ চলছে। যা আগামী বছর আবুধাবিতে অনুষ্ঠেয় ২৮তম জলবায়ু সম্মেলনে এটি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অভিযোজন তহবিলে প্রতিশ্রুতি বাড়ানোর জো বাইডেনের এই ঘোষণা গ্লোবাল গোল অন এ্যাডাপটেশন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকারের এক শীর্ষক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, জলবায়ু সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের যোগদান এবং বক্তব্য প্রদান সম্মেলনের আলোচনায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর নৈতিক মনোবল আরও বাড়িয়ে দেবে।

এ প্রসঙ্গে সম্মেলনে যোগদানকারী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি তথ্যমন্ত্রী  ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এবারের সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ  বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান  অংশ গ্রহণ করেছেন। এতেই প্রতিয়মান হয় বিশ্ব নেতারা জলবায়ু পরিববর্তনকে গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। এই গুরুত্বটা আমি মনে করি বিশ্বে কার্বন নি:সরণ কমানোর কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। বৈশ্বিক  তাপমাত্রা কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।   

তবে সম্মেলনের পর্যবেক্ষকরা মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যে ভিন্ন মত প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশের এক পর্যবেক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, বাইডেনের এই বক্তব্য প্যারিস চুক্তির সঙ্গে মেলেনা। যুক্তরাষ্ট্র বড় অর্থনীতির দেশ, বড় কার্বন দুষণকারী। তাদের উচিত উন্নত দেশগুলো যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার অংশ জলবায়ু তহবিলে প্রদান করা এবং অন্য দেশগুলোকেও বলা হয় তাদের অংশ জলবায়ু তহবিলে প্রদানের জন্য।

তিনি বলেন, বাইডেন এডহক ভিত্তিতে জলবায়ু তহবিলে অর্থ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। অভিযোজনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রয়োজন ৬০০ বিলিয়ন ডলার। ওই অর্থের অংশ দেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।
 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×