সিপিআরডিসহ ২৫টি বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের যৌথ সংবাদ সম্মেলন
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে না বরং এটি আমাদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, অনেকেই বলেন এর আগের সম্মেলনগুলো থেকে বাংলাদেশ বা অন্যান্য দেশ কি পেয়েছে। কিন্তু এখানে সেই বিষয়টি হলো দরকষাকষি কীভাবে হবে। যদি এটা ভালোভাবে করা না যায় তাহলে আমরা যে প্রত্যাশা করি তা পাব না।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিপর্যয় মোকাবিলায় জাতিসংঘের উদ্যোগে কনফারেন্স অব দ্য কার্টিজ- কপ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘সবাই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কথা বলে, অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের রূপরেখা সম্মেলনেই কোন (ইউএনএফসিসিসি) গণতন্ত্র নেই।’
আগামী ৬-১৮ নভেম্বর মিশরে এর ২৭তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু নিয়ে কাজ করেন এমন একাধিক সংগঠনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার জটিলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৭টি দেশ এখানে সদস্য। এখানে বলা আছে একটি শব্দ বা সেমিকোলনের যদি কেউ বিরোধিতা করে তাহলে হবে না। প্রত্যেকবার এমনটা হয়। এটা কেমন হলো না? এখন জরুরি অবস্থা, তখন যদি কেউ বিরোধিতা করে তাহলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
এ জন্য আমি বলি সবাই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কথা বললেও জলবায়ু পরিবর্তনের রূপরেখা সম্মেলনে (ইউএনএফসিসিসি) গণতন্ত্র নেই। একটা বা দুইটা দেশ পুরো প্রক্রিয়া জিম্মি করে রেখেছে।
এ সময় কপ-২৭ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিজেদের জায়গা থেকে শক্ত অবস্থান নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবে বলেও জানান সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
বিগত বছরের সম্মেলনে সময়ক্ষেপণ করার অভিযোগ তুলে সাবের চৌধুরী বলেন, ‘বিগত বছরে কি হয় একটি নাটক, ড্রামা হয়। গভীর রাত পর্যন্ত দরকষাকষি হচ্ছে। কপ শেষ হয়ে যাচ্ছে, আবার আরও একদিন চলবে। তখন কী হয়, অনেক দেশের প্রতিনিধিরা থাকে না।
এখন যদি দেখা যায় ১৮ তারিখের জায়গায় ২০ তারিখ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়, তখন অনেক দেশের প্রতিনিধিরা থাকবে না। দেখা গেল বাংলাদেশও থাকবে না। আমরা তো টিকিটে বুক করে চলে আসব। পরে যে কয় দেশের লোক থাকবে তাদের নিয়ে যদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বলা হয় এটা কপ-২৭ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত তাহলে তো হবে না।’
এমন অবস্থায় বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বক্তব্য হবে ১৮ তারিখের মধ্যে যেসব সিদ্ধান্ত হবে সেটার সঙ্গে বাংলাদেশ আছে। এরপর যদি কোনো সিদ্ধান্ত হয় তাহলে তা পরবর্তীতে কপ-২৮ সম্মেলনে সংশোধন করা হবে।’
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা কি কপ বা এমন সংস্থার দিকে তাকিয়ে থাকব, না নিজস্ব ফান্ড থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় খরচ করব? সেটা ভাবতে হবে। কারণ আন্তর্জাতিক ফান্ডিং থেকে কিছু হবে না। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা একসঙ্গে হওয়া উচিত বলেও মনে করেন এই সংসদ সদস্য।
অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, উন্নত দেশগুলোর কর্মকান্ড, উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে অনেক সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোটি মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে গরিব মানুষরা। এছাড়াও নারী ও যুবকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এর প্রভাবে। শুধু তাই নয়, আমাদের বার্ষিক বড় একটি টাকা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় খরচ করতে হচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলা এখন জীবন বাঁচানোর জন্য, পরবর্তী প্রজন্মকে নিরাপদে রাখতে অধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমএস