ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট, জলবায়ুর ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট, জলবায়ুর ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি

বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটে র‍্যালি

অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটে দাবি ছিল- বিশ্বনেতারা যেন জলবায়ু সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ সম্প্রদায়গুলিকে ক্ষয়ক্ষতির অর্থ প্রদানের। 

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচি শুরু করে র‍্যালি নিয়ে শাহবাগ হয়ে রাজু ভাস্কর্য্য গিয়ে প্ল্যা-কার্ড প্রদর্শনীর মাধ্যমে আজকের বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট শেষ হয়েছে।

বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের ০.৪৭ শতাংশেরও কম অবদান রাখা সত্ত্বেও ১৮ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং জলবায়ু  ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। 

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়ের হিমবাহ ও মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে থাকায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রাণঘাতী দুর্যোগের ঝুঁকি আরও বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, খরা, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙন এবং মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

বাংলাদেশ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ১৭ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। এর ফলে দেশের ২ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়বে। 

এছাড়াও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ২৭ শতাংশ মানুষ বর্তমানে বন্যার ঝুঁকিতে আছে। চলতি শতাব্দীতে উপকূলীয় বন্যার এই ঝুঁকি বেড়ে ৩৫ শতাংশ হতে পারে। বর্তমানে বন্যায় উপকূলীয় এলাকায় বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি হয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও জলবায়ু কর্মী এবং সেইভ ফিউচার বাংলাদেশ এর প্রধান সমন্বয়ক নয়ন সরকার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বজুড়ে দৃশ্যমান। বর্তমানে আমরা মহা সংকটের মধ্যে রয়েছি, যেটা জলবায়ু সংকট। বিশ্ব নেতারা জরুরিভাবে জলবায়ু পদক্ষেপ না নিয়ে সময় অপচয় করে জলবায়ু সংকট দীর্ঘ করছেন। বাংলাদেশ বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের ০.৪৭ শতাংশেরও কম কার্বন নির্গমন করে কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে রয়েছে। আজ বাংলাদেশের হাজারও মানুষের জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। শিশুদের জীবন এবং ভবিষ্যত হুমকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যসব উপকূলীয় দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা নদী ভাঙনে মানুষেরা সহায়সম্বল হারিয়ে ফেলে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত ২০ বছরে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারের গড়ে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৪৯১ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির অর্থ চাই এখনই। আমরা জলবায়ু পদক্ষেপ ও জলবায়ু সুবিচার চাই।’ 

তিনি বলেন, আজ দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশ ভালো নেই। অথচ পরিবেশ-প্রকৃতি সবচেয়ে বেশি ভালা থাকার কথা ছিল যাতে করে আমরা ভালো থাকতে পারি। কিন্তু আমরা কি গাছ, বন, পাহাড়, বন্যপ্রাণী, নদী, জলাশয়কে ভালো থাকতে দিয়েছি? না, দেইনি। দূষিত এবং ধ্বংস করে চলছি। আজ দেশে পরিবেশ ধ্বংসের মহোৎসব চলছে। পরিবেশ-জীববৈচিত্র ধ্বংস করে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় এটা জানার পরেও কেনো এত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে? জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ধ্বংস করা বন্ধ করুন। সময় এসেছে বন্ধ করার। এখনই সময় পরিবর্তনের৷ 

এমতাবস্থায় আজকের বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের আমাদের দাবিগুলো- প্রথমত: আমরা জলবায়ু পদক্ষেপ ও জলবায়ু সুবিচার চাই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতির অর্থ আমাদের দিতে হবে। প্যারিস এগ্রিমেন্ট বাস্তবায়ন করতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি তে নামিয়ে আনতে হবে। কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে। 

দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি, জলবায়ু শরনার্থীদের টেকসই পুর্নবাসন করতে হবে। সুপেয় পানির স্থায়ী সমাধান করতে হবে। অভিযোজন প্রক্রিয়া বাড়াতে হবে। উপকূল জুড়ে টেকসই ব্লক বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। কয়লা নয় নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে অগ্রসর হতে হবে। পাঠ্য বইয়ে জলবায়ু-পরিবেশ শিক্ষা যুক্ত করতে হবে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করতে হবে। শব্দ ও বায়ু দূষণ রোধ করতে হবে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে সেসকল প্রকল্প এবং পরিবেশ দূষণকারী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও দেশের পাহাড়-টিলা, বনাঞ্চল, গাছ-পালা, বন্যপ্রাণী এবং নদী, জলাশয় রক্ষা করতে হবে। সর্বোপরি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে এবং পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নিতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, ‘শ্বনেতারা, আপনাদের প্রতিশ্রুত তহবিল সংগ্রহ ও প্রদান করতে ব্যার্থ হয়েছেন কিন্তু আমরা আজকের বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট থেকে ক্রাউড ফান্ডিং রেইজ করা শুরু করেছি।' উক্ত ক্রাউড ফান্ডিং-এ সকলকে ডোনেট করার আহ্বান জানাই। আপনারা জানেন যে, বিশ্ব নেতারা তাদের প্রতিশ্রুত তহবিল গঠন ও প্রদান করতে ব্যার্থ হচ্ছে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষয়ক্ষতির অর্থ দিচ্ছে না। 'সেইভ ফিউচার বাংলাদেশ' এর তরুণদের উদ্যোগে আজকে আমরা ক্রাউড ফান্ডিং রেইজ করা শুরু করেছি। আমরা চাই এই দৃশ্য দেখে বিশ্ব নেতারা লজ্জা পাক। এটাও আমাদের একটা প্রতিবাদ। যেটা তারা পারেনি সেটা আমরা শুরু করেছি। তহবিল সংগ্রহ করা ছোট পরিসরে শুরু করা হলেও বড় পরিসরে শুরু করার দায়িত্ব বিশ্ব নেতাদের।

এমএইচ

×