ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

জীবজগতে রয়েছে বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ। এমন কয়েকটি মজার উদ্ভিদের কথা জানাচ্ছেন- চয়ন বিকাশ ভদ্র

বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ

বাদুড় ফুল উড়ন্ত বাদুড়ের মতো দেখায় বলে একে ব্যাট ফ্লাওয়ার বা বাদুড় ফুল বলে। টাক্কা গাছ নামেও পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো- Tacca chantrieri, এটি Dioscoreaceae পরিবারের উদ্ভিদ। ভাল করে দেখলে কালো রঙের ¯প্যাদ দ্বারা ঢাকা এই ফুলগুলোকে মনে হবে বাদুড় যেন তার মুখটাই হা করে রেখেছে। কিছু কিছু ফুলকে দেখলেই হিংস্র ও ভয়ঙ্কর বলে মনে হবে, তাই হয়ত বা এর আরেক নাম ডেভিলস ফ্লাওয়ার। এই বাদুড়মুখো ফুলটি চীনের ইউনান প্রদেশে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও আরও দুইটি জায়গাতেও পাওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে- থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার। ব্যাট ফ্লাওয়ার যদিও অস্বাভাবিক দেখতে কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এর জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়েই চলছে এবং বিভিন্ন বাগানে একে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ইহা বাগানের পরিবেশ থেকে বনেই সব থেকে ভালভাবে জন্মায়। অদ্ভুত এই ফুলটির প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় ইউরোপ এবং আমেরিকাতে গত শতাব্দীতে। আজ যা একটি উদ্ভট ফুল হিসাবে পরিচিত যা গাঢ় বেগুনি (প্রায়ই কালো) রঙের মতো দেখায়। বানর অর্কিড পৃথিবীর বিস্ময়কর একটি ফুল বানর অর্কিড। এরা পরিপূর্ণ অবস্থায় দেখতে খানিকটা বাঁদরের আকৃতি ধারণ করে বলে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ইকুয়েডর এবং পেরুর পাহাড়ে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এক হাজার থেকে দুই হাজার মিটার উচ্চতায় অদ্ভুত এ ধরনের ফুলের দেখা মেলে। ফুলটি প্রথম দেখে একে ফুল মনে হওয়ার সম্ভাবনা কমই। কারণ ফুলটির তিনটি পাপড়ির মাঝখানে স্পষ্টই দেখা যাবে জিভ বের করে থাকা একটি বাঁদরের মুখ। বিরল এ ফুলটির বৈজ্ঞানিক নাম উৎধপঁষধ ংরসরধ, তবে বাঁদরের মুখটির কারণে অর্কিড পরিবারভুক্ত এ ফুলটিকে মাঙ্কি অর্কিড বা বাঁদর অর্কিডও বলা হয়। ১৯৭৮ সালে উদ্ভিদবিজ্ঞানী লুয়ের ফুলটি প্রথম দেখেন ও এর নামকরণ করেন। এ রকম বিচিত্র আরও কিছু অর্কিড রয়েছে। যার মধ্যে বি অর্কিড, বার্ডস হেড অর্কিড, ফ্লাইং ডাক অর্কিড অন্যতম। এসব অর্কিডের মধ্যে যথাক্রমে মৌমাছি, পাখির মাথা, উড়ন্ত হাঁসের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। কেরোসিন ফল বর্তমান জ্বালানি সঙ্কটের যুগে আমরা জ্বালানির নতুন নতুন উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। সোচ্চার হচ্ছি বৃক্ষ নিধনের বিপক্ষে এবং গাছ লাগাচ্ছি পরিবেশ রক্ষার জন্য। এ অবস্থায় তোমরা যদি জান যে কোন গাছের ফল কেরোসিন কূপির মতো জ্বলে তাহলে খুব অবাক হওয়ার কথা। এমন এক ধরনের গাছই কিন্তু রয়েছে ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জে। এসব গাছের শক্ত ফল কেরোসিন কূপির কাজ করতে পারে। এ রকম একেকটা ফল পনেরো মিনিট ধরে জ্বলতে পারে। একেকটা গাছে বছরে একশো থেকে এক শ’ চল্লিশ ঝুড়ি ফল হয়। এরা দেখতে বড় বাদামের মতো। যে কোন মাটিতে এই গাছ জন্মায়। আড়াই একর জমিতে আড়াই শ’ থেকে তিন শ’টি গাছ লাগানো যায়। এতে ফল ধরে গাছ লাগানোর পাঁচ বছর পরে। অদ্ভুত এই গাছটার নাম হলোÑ বাগিলুম্বান। এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম , এটি চরঃঃড়ঢ়ড়ৎধপবব পরিবারের সদস্য। ড্রাগন ফুল ড্রাগন ফুল এক রহস্যময় ফুল। মাথার খুলির মতো দেখতে শুকিয়ে যাওয়া এই ফুলটির দিকে তাকালে বিশ্বাস করা কঠিন যে, এই ফুলটি ফোটার সময় কত সুন্দর ছিল। এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম অহঃরৎৎযরহঁস সধলঁং। ইউরোপ কিংবা উত্তর আমেরিকার সৌখিন মানুষদের বাগানের অতি পরিচিত একটি ফুলের নাম ড্রাগন ফুল। বাহারি বর্ণের আকারে বেশ বড় এই ফুলটি ফুটে থাকার সময় দেখতে অতি চমৎকার হলেও যখন এর পাপড়ি শুকিয়ে মরে যায় তখন তা ভয়ঙ্কর মাথার খুলির আকৃতি ধারণ করে। আর এই কারণেই ফুলটির নাম রাখা হয়েছে ড্রাগন ফুল। রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে অদ্ভুত রূপের জন্য ড্রাগন ফুলকে বঞ্চনা, সন্দেহ ও রহস্যময়তার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। পাশাপাশি একে করুণার প্রতীক হিসেবেও বিবেচনা করা হতো। পৃথিবীর অধিকাংশ ফুল ফোটার সময় যে রূপ নিয়ে ফোটে, শুকিয়ে মরে যাবার সময়ও তার ওই একই রূপ থাকে। কিন্তু ড্রাগনই একমাত্র ফুল যার পাপড়িগুলো শুকিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে তা ভয়ঙ্কর মাথার খুলির রূপ ধারণ করে। রাফলেশিয়া ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে প্রকৃতিপ্রেমীরা শুধু মুগ্ধই হন না, মাঝে মধ্যে বিস্মিতও হন। বিস্ময়কর এমনই একটি ফুলের নাম জধভভষবংরধ ধৎহড়ষফরর. এটি জধভভষবংরধপবধব পরিবারভুক্ত একটি ফুল। গবেষকদের তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীতে বড় আকৃতির ফুলের মধ্যে এই বর্গের ফুলই সবচেয়ে বড়। সাধারণত এই ফুল বেশি দেখা যায় ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের যে বনগুলোতে সবসময় ঝরঝর করে বৃষ্টি পড়ে সেখানে। আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি বছর আগে এই ফুলটি ফুটতে শুরু করে। একেকটি ফুলের ওজন এগারো কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং চওড়া হয় প্রায় এক মিটার। মূল, কা- ও পাতাবিহীন রাফলেশিয়া মূলত পরজীবী। এটি ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় ফুল। রাফলেশিয়ার পাতা না থাকায় এটি নিজে খাদ্য তৈরি করতে পারে না। ফুলটি সবাইকে মুগ্ধ করলেও এর গন্ধ কিন্তু মোটেও কাউকে আকৃষ্ট করে না। সবচেয়ে বাজে গন্ধ ছড়ায় ফুলটি। পচা মাংসের মতো দুর্গন্ধের কারণে ফুলটির আরেক নাম দেয়া হয়েছে মৃতদেহ ফুল। এটি পাওয়া যায় মূলত মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স এবং থাইল্যান্ডে। সূর্যশিশির সূর্যশিশির পতঙ্গভুক উদ্ভিদ। এ জাতীয় উদ্ভিদের শিকারের পদ্ধতিকে সক্রিয় ফ্লইপেপার ট্রাপ বলে। এদের একটি প্রজাতির নাম উৎড়ংবৎধ পধঢ়বহংরং. এ পদ্ধতিতে উদ্ভিদগুলো নিজেদের শরীরের চিটচিটে আঠালো একধরনের পদার্থের সাহায্যে পোকামাকড়কে ফাঁদে ফেলে। ড্রোসেরার সরু উপাঙ্গের ন্যায় পাতায় ডগায় একধরনের আঠালো লালাগ্রন্থি শিশিরবিন্দুর ন্যায় জমে থাকে। এর আশপাশে কোন পোকামাকড় এলে এর পাতাগুলো সেই দিকে খুব দ্রুত প্রসারিত হয় এবং পোকাগুলোকে লালাগ্রন্থির সঙ্গে আটকে ফেলে। একবার পোকাগুলোকে ফাঁদে আটকে ফেলতে পারলে খুব সহজেই খাবারে পরিণত করে। এ উদ্ভিদের আদি বাস দক্ষিণ আফ্রিকায়। এর প্রায় ২০০টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
×