ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সম্প্র্রীতির বারতায় শুরু রবীন্দ্রসংগীত পরিষদের অধিবেশন

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:২০, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

সম্প্র্রীতির বারতায় শুরু রবীন্দ্রসংগীত পরিষদের অধিবেশন

ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাচ-গানের পরিবেশনা

বিভেদের বিপরীতে উচ্চারিত হলো সম্প্রীতির বারতা। বলা হলো মুক্ত সমাজে সকল মানুষের সমঅধিকারের কথা। গাওয়া হলো সাম্যের গান। সুরের আশ্রয়ে ব্যক্ত হলো সম্প্রীতির প্রত্যাশা। প্রকাশিত হলো মানবিক সমাজ গড়ার আকাক্সক্ষা। এভাবেই  সম্প্রীতি ও মানবতার র্মমবাণীকে ধারণ করে শুরু হলো জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের ৪৩তম বার্ষিক অধিবেশন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এশ্বর্যময় সৃষ্টির নির্যাসে সজ্জিত হয়েছে এই আয়োজন। বৃহস্পতিবার থেকে থেকে সূচনা হওয়া তিন দিনব্যাপী অধিবেশন চলবে শনিবার পর্যন্ত। গানের সঙ্গে  আবৃত্তি, পাঠ, নাচ  ও গীতি আলেখ্যর পরিবেশনা আয়োজনে যুক্ত করেছে বর্ণিলতা। পরিষদের অন্তর্ভুক্ত সারাদেশের পাঁচ শতাধিক শিল্পী, সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্র্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হওয়া অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে  ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে।
মাঘের শীতল বিকেলে বোধনসংগীতের আশ্রয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনেকগুলো কণ্ঠ মিলে যায় এক স্বরে। সকলে মিলে গেয়ে শোনায় ‘এই কথাটা ধরে রাখিস, মুক্তি তোরে পেতেই হবে’। এরপর পরিষদের শিল্পীরা কণ্ঠে তুলে কণ্ঠে তুলে নেন কাজী নজরুলের অভয় বাণী। গেয়ে শোনান- বল্্ নাহি ভয় নাহি ভয়/ বল্্ মাভৈ মাভৈ সত্যের  জয় ...। ফকির লালন সাঁইয়ের মানবতাবাদী দর্শনও ছুঁয়ে যায় তাদের কণ্ঠ।  সেই সুবাদে গাওয়া হয়Ñ মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি/মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই মূল হারাবি...? 
প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে ৪৩তম অধিবেশন উদ্বোধন করেন অতিথিরা।  এ সময় গাওয়া হয় ‘আগুনের পরশমনি  ছোঁয়াও প্রাণে’ শীর্ষক সংগীত। সেই সুরের সহযোগে পরিবেশিত হয় সমবেত নাচ।
উদ্বোধকের আশীর্বচনে সংগীতগুণী ফাহমিদা খাতুন বলেন, সভ্যতা ও সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরক। অন্যদিকে মানুষের জীবনধারার সমান্তরালে বহমান থাকে সংস্কতি। তাই এদেশে যখনই সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন নেমে এসেছে তখনই প্রতিরোধ হয়েছে। ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় বাঙালি চিরকালই সংগ্রাম করেছে। পাকিস্তানি শাসনামল থেকেই পূর্ববঙ্গের মানুষের সেই প্রতিবাদী অবস্থানের সন্ধান মেলে। সেই বাস্তবতায় এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা বিশ্বমানব হওয়ার স্বপ্ন দেখি। সম্প্রীতি ও সাম্যের আলোকে প্রগতিশীল সমাজ গড়তে চাই। পাশাপাশি আমাদেরকে নতুন ভাবনা ও চিন্তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় এই সম্মিলন। 
সভাপতির বক্তব্যে ডা. সারওয়ার আলী বলেন, এবারের সম্মিলনের একটা ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। সেটা হচ্ছে পাকিস্তান আমলে যখন এই ভূখ-ে রবীন্দ্রসংগীতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় তখন রবীন্দ্রনাথের গানকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছেন  ফাহমিদা খাতুন ও জাহিদুর রহিম।

আর এবার রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের উদ্বোধন করলেন ফাহমিদা খাতুন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের সুযোগে অনেকেই রবীন্দ্রনাথকে অবজ্ঞা করার চেষ্টা করছেন। অনেক মনীষীর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হচ্ছে। পাকিস্তানি ভাবধারার সংস্কৃতিকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু অভ্যুত্থানের সফলতা অর্জনে বহুত্ববাদী সমাজ ও সম্প্রীতির বিকাশে রবীন্দ্র, নজরুল থেকে শাহ আব্দুল করিমকে মনে রাখতে হবে।

তাই এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির  আলোকে মানুষের মধ্যে শুভবোধ জাগিয়ে তুলতে চাই। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে চব্বিশের অভ্যুত্থানের মূল চেতনাকে ধারণ করতে চাই। 
উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সম্পাদক তানিয়া মান্নান।      
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবেশিত হয় গান, নাচ ও পাঠের সহযোগে সাজানো ফিরে চল মাটির টানে শীর্ষক গীতিআলেখ্য। সন্তোষ ঢালীর গ্রন্থনায় গীতিআলেখ্যটির সংগীত পরিচালনায় ছিলেন বুলবুল ইসলাম। পাঠে অংশ নেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও ত্রপা মজুমদার। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যনন্দন, নৃত্যম্ নৃত্যশীলন ও ধৃতি নর্তনালয়। এই পরিবেশনায় ‘আমি মারের সাগর পাড়ি দিবো’, দজয় জয় সত্যের জয়’, ‘সংকোচোর বিহ্বলতা নিজের অপমান’,  ‘আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’সহ বেশ কিছু গান গাওয়া হয়।

সংগীত পরিবেশন করেন ফারজানা আক্তার পপি, সেমন্তী মঞ্জরী, রোকাইয়া হাসিনা, অশোক সাহা, নুরুল মতিন সৈকত, আকলিমা খাতুন, শুক্লা পাল সেতু, ফেরদৌস আরা লিপি, মিলন ভট্টাচার্য, সুস্মিতা আহমেদ, প্রতীক এন্দ, পার্থপ্রতিম রায়, কল্লোল সেনগুপ্ত, নাইমা ইসলাম নাজ, মাইনুল ইসলাম, অনুপম বসাক তিলক, জীবিনা সঞ্চিতা হক, সমাপ্তি রায়, অদিতি মহসীন, আইরিন পারভীন অন্না, অসীম দত্ত ও শ্রাবণী মজুমদার। সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের  চাঁদপুর শাখার শিল্পীরা। নৃত্য পরিবেশন করেন মুনমুন আহমেদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন  ডালিয়া আহমেদ। 
আজ শুক্রবার অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন। এদিন   সকাল সাড়ে নয়টায় অনুষ্ঠিত হবে সংগীত, নৃত্য  ও আবৃত্তি পরিবেশনা। বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে প্রতিনিধি সম্মেলন। বিকেল চারটায় ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় প্রদীপ প্রজ্বালনের পর  রবিরশ্মি, সঙ্গীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান ও আবৃত্তি পরিবেশিত হবে।
শনিবার সমাপনী দিনে রবীন্দ্রপদক দিয়ে গুণী সম্মাননা জানানো হবে রবীন্দ্রসংগীতের প্রয়াত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ারকে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী।

×