
ছবি: সংগৃহীত।
মধুবালা—এক নামেই হৃদয় কাঁপে কোটি সিনেপ্রেমীর। রূপে, অভিনয়ে, ব্যক্তিত্বে তিনি ছিলেন যেন রূপালী পর্দার এক স্বপ্নময় জাদুকরী। আজও তাঁর হাসি, চোখের ভাষা কিংবা পর্দায় উপস্থিতি নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রীদের কাছে অনুকরণীয়। কিন্তু যে হাসিতে ভরিয়ে দিতেন দর্শকদের মন, তার অন্তরালে লুকিয়ে ছিল এক নির্মম ও বেদনাদায়ক জীবনকাহিনি।
সম্প্রতি ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মধুবালার ছোট বোন মধুর ভূষণ তুলে ধরেছেন তাঁর জীবনের অজানা অধ্যায়—যেখানে সাফল্যের শিখরে থেকেও ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী, এক মরণব্যাধির কবলে পড়ে।
১৯৫৪ সাল। পরিচালক এসএস ভাসানের ‘বহুত দিন হুয়ে’ সিনেমার শুটিং চলছে। সহ-অভিনেতা দিলীপ কুমারের সঙ্গে তখন মধুবালার সম্পর্ক ঘিরে গুঞ্জন তুঙ্গে। সেই সময় একদিন ব্রাশ করতে গিয়ে হঠাৎ মুখ থেকে রক্ত বের হতে দেখে চমকে যান মধুবালা। সঙ্গে সঙ্গে দিলীপ কুমারকে নিয়ে যান চিকিৎসক রুস্তম ভাকিলের কাছে। পরীক্ষার পর জানা যায়, মধুবালার হৃদযন্ত্রে ছিদ্র রয়েছে—এক বিরল ও প্রাণঘাতী রোগ।
ডাক্তার পরামর্শ দিলেও, অসুস্থতাকে গুরুত্ব না দিয়ে একের পর এক সিনেমায় কাজ করে যেতে থাকেন মধুবালা। 'মুঘল-এ-আজম'-এর মতো ঐতিহাসিক ছবিতে দিলীপ কুমারের বিপরীতে অনবদ্য অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু শুটিংয়ের মধ্যেই তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে ফাটল ধরে। এক ঝগড়ার সময় মধুবালাকে প্রকাশ্যে চড় মারেন দিলীপ কুমার, যা নিয়ে সারা বলিউডে তোলপাড় হয়। এই ঘটনার পরই ভেঙে যায় তাঁদের সম্পর্ক।
ভাঙা হৃদয় আর দেহে বাসা বাঁধা রোগ—দুয়ে মিলে ভেঙে পড়ছিলেন মধুবালা। কিন্তু মুখে হাসি লেগেই থাকত। তখনই সাইন করেন ‘চলতি কা নাম গাড়ি’। সেখানে কিশোর কুমারের সঙ্গে গড়ে ওঠে এক অন্যরকম সম্পর্ক। ‘এক লাড়কি ভিগি ভাগি সি’ গানটির মতোই ধীরে ধীরে প্রেমে পড়েন তাঁরা।
তবে সুখ বেশিদিন সঙ্গী হয়নি মধুবালার। শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। প্রতিদিন রক্তবমি হতে লাগল। চিকিৎসার জন্য বাবার সঙ্গে লন্ডনে পাড়ি জমান। কিছুদিন পর কিশোর কুমারও সেখানে যোগ দেন। ডাক্তার জানিয়ে দেন—আর সময় বেশি নেই। কিশোরকে গোপনে বলা হয়, যতদিন বাঁচেন, তাঁকে খুশি রাখুন।
সব জানার পরও কিশোর কুমার ভালোবাসার মর্যাদা দিয়ে ১৯৬০ সালে মধুবালাকে বিয়ে করেন। শেষ জীবনটা যদিও ছিল দুঃসহ—শয্যাশায়ী, নিঃসঙ্গ, আর নিজের ঘরে বন্দি। কিন্তু শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত পাশে ছিলেন কিশোর কুমার।
রূপ, খ্যাতি আর ভালোবাসার উজ্জ্বল আলোয় মোড়া মধুবালার জীবন শেষে থেমেছিল নিঃসঙ্গ এক অন্ধকারে। আর তাতেই যেন প্রমাণ হয়, পর্দার পেছনের জীবন কখনও কখনও সিনেমার চেয়েও বেশি নাটকীয় ও হৃদয়বিদারক।
নুসরাত