
জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন জুলাইয়ের গণআন্দোলনের সময়ের এক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেছেন, হাসিনা পালিয়ে গেছে এই খবর শোনার পরই তিনি রাস্তায় নিজের বোরকা ও হিজাব খুলে ফেলে দিয়েছিলেন। এরপর জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে রিকশা করে পুরো ঢাকা শহর ঘুরে বেড়িয়েছিলেন।
এক সাক্ষাৎকারে বাঁধন বলেন, "উনি পালাইছে পালাইছে করতে করতে আড়াইটার সময় আমি বনানী পর্যন্ত গেছি। তখন বলছে, ‘পালাইছে, পালাইছে’। আমি তখন বোরখা, হিজাব পরে ছিলাম। রাস্তায় ওটা ফেলে দিছি। আমার কাছে বাংলাদেশের পতাকা ছিল, সেটা গায়ে জড়িয়ে রিকশা নিয়ে ঘুরেছি পুরো ঢাকা শহর।"
তিনি বলেন, সময়ের সাথে আমরা নিপীড়নের সাথে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম, নিরীহ ছাত্রদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, তখন আর ঘরে বসে থাকা সম্ভব হয়নি। "আমি একজন শিল্পী, ডাক্তার, মা-সবকিছুর আগে আমি একজন নাগরিক, একজন মানুষ। তাই সিদ্ধান্ত নিই মাঠে নামবো," বলেন বাঁধন।
তিনি জানান, ২৬-২৭ জুলাইয়ের দিকেই তারা মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছিলেন। ১ আগস্ট রাস্তায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। "তখন তো কেউ জানত না ৫ আগস্টে কী হবে। আমরা রাষ্ট্রের অন্যায় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, এটা ছিল অনেক বড় রিস্ক। অনেক বাধা এসেছে আমাদের পথে।"
আন্দোলনের প্রতিদিনই রাস্তায় ছিলেন বাঁধন। বলেন, "ছাত্রদের কাছ থেকেই আমি শিখেছি কীভাবে ভয়হীন হতে হয়, কীভাবে নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয়।" তিনি আরও বলেন, "ভয় ছিল, কিন্তু এক ধরনের আনন্দও ছিল। যারা আন্দোলনে ছিল না, তারা ওই পজিটিভ ভাইবটা বুঝবে না।"
বাঁধন জানান, সাধারণ মানুষ ও ছাত্রছাত্রীরা সবাই দেশকে ভালোবেসেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। "সবাই চায় স্বৈরাচার মুক্ত একটি বাংলাদেশ। সেই ইচ্ছা থেকেই সবাই রাস্তায় নেমেছেন," বলেন তিনি।
সরকার গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে আশাবাদ প্রকাশ করে বাঁধন বলেন, "শুধু প্রশাসনিক সংস্কার নয়, মানসিক সংস্কারও জরুরি। ব্যক্তি পর্যায়ে সৎ, ন্যায়বান ও দেশপ্রেমিক মানুষ গড়ে উঠলে তার প্রভাব সমাজের প্রতিটি খাতে পড়বে।"
আন্দোলনের পরে সময়টা ছিল অস্থির ও ভয়ঙ্কর বলে উল্লেখ করেন বাঁধন। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, "আমরা অনেক দূর এসেছি। সামনে আরও সুন্দর, আরও মসৃণ পথ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।"
সূত্র:https://tinyurl.com/3cr7fd7r
আফরোজা