
.
সব নাটক দর্শককে কাছে টানে না। এ কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিলনায়তনের অধিকাংশ আসন ফাঁকা রেখে মঞ্চস্থ হয় নাটক। অন্তর্গত গল্পের সঙ্গে সুনিপুণ নির্দেশনা, মঞ্চশিল্পীদের কুশলী অভিনয়, মঞ্চসজ্জা, প্রপসের ব্যবহার, সংগীতের যথার্থ প্রয়োগসহ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে একটি নাটক হয়ে ওঠে মানসম্পন্ন। আর নাট্যদল প্রাচ্যনাট প্রযোজিত তেমনই এক নাটক ‘অচলায়তন’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন আজাদ আবুল কালাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় নাটকটি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার অচলায়তন নাটকে অযৌক্তিক অভ্যাস ও বিশ্বাসবশত চলে আসা আচারসর্বস্বতাকে আঘাত করেছেন এবং জগতের সমস্ত কিছুকে জ্ঞান-কর্ম-ভক্তির সঙ্গে গ্রহণের কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে নির্দেশক আজাদ আবুল কালাম বলেন, অচলায়তন বিদ্যাপীঠকে আমরা কল্পনা করেছি একটি বালিকা বা নারী শিক্ষাগৃহ হিসেবে। আমাদের মতো পশ্চাৎপদ এবং ধর্মীয়-সামাজিক চিন্তায় অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নারী। নারীকে কুসংস্কার আর নানা বিধি-নিষেধের মধ্যে আটকে রাখার নানান ষড়যন্ত্র বিদ্যমান এবং কখনো কখনো সেই ষড়যন্ত্রে নারী নিজেই যেন প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, বহুদিন ধরে চলে আসা প্রথাকে
কঠোর নিয়মের আবদ্ধে পালন করতে গিয়ে সময়ের আবর্তনে অচলায়তন বিদ্যায়তনের কোনো পরিবর্তন হয় না। এখানকার বিদ্যার্থীরাও কোনো প্রশ্ন ছাড়াই তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবতীয় নিয়ম ও অনুশাসন মেনে চলে। অচলায়তনের বাইরের জগতের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই,এমনকি যোগাযোগ করার বিন্দুমাত্র অগ্রাহ প্রকাশ পাওয়াটাও তাদের জন্য ‘মহাপাপ’-এর নামান্তর। সেই বিদ্যায়তনের দুই শিক্ষার্থী পঞ্চক ও মহাপঞ্চক। তাদের জীবন দর্শন বিপরীত। এই দুই ব্যক্তির মধ্যকার যে ইচ্ছার দ্বন্দ্ব তা আরও দৃঢ়ভাবে প্রকাশিত হয় যখন অচলায়তনে একটি ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র নিয়মতান্ত্রিকতাকে অটুট রাখার স্বার্থে অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে থাকে। এরই মধ্যে উপস্থিত হন গুরু বা দাদাঠাকুর যিনি প্রথমবারের মতো অচলায়তনের বন্ধ দ্বার ভেঙে-গুড়িয়ে দেন। বাইরের বাস্তব জগৎ ও সেই জগতের মানুষদের সঙ্গে অচলায়তনের বিদ্যার্থীদের পরিচয় ঘটে।
অচলায়তন নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন সানজিদা প্রীতি,শাহানা রহমান সুমি, শাহেদ আলী, ফরহাদ হামিদ, জাহাঙ্গীর আলম, প্রদ্যুত কুমার ঘোষ, চেতনা রহমান ভাষা প্রমুখ। মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন সাইফুল ইসলাম। সংগীত ভাবনায় ছিলেন নীল কামরুল। স্নাতা শাহরিনের কোরিওগ্রাফিতে পোশাক পরিকল্পনা করেছেন আফসান আনোয়ার।
প্যানেল