ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

শাকিব খানের সিনেমা হলেই কিহিট?

গৌতম পাণ্ডে

প্রকাশিত: ২০:০৭, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

শাকিব খানের সিনেমা হলেই কিহিট?

সারাবছর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চললেও ঈদের সময় সরব হয় সিনে পাড়া। ঈদকে উপলক্ষ্য করে প্রযোজকরাও সিনেমার পেছনে অর্থ লগ্নি করে। সিনেমা হল মালিকরাও বন্ধ হল অথবা অব্যাবস্থায় পড়ে থাকা হলগুলোকে ঘসে মেজে দর্শককে আকৃষ্ট করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে কি দেশের সিনেমার সুদিন ফেরানো সম্ভব ? বেশ কয়েকবছর দেশের সিনেমা ঈদকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এটা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি কম হয়নি। কিন্তু এর থেকে উত্তরণের কোনো পথ সিনেমা সংশ্লিষ্টরা এখনো পর্যন্ত বের করতে পারেনি। সিনেমা ভালো হলে দর্শক হলে আসবে, খারাপ হলে মুখ ফিরিয়ে নেবে এটাই স্বাভাবিক। মানসম্মত সিনেমা হচ্ছে না বলেই হল মালিকরা হতাশাগ্রস্ত। কোনো এক সময় দেশে বারশের অধিক সিনেমা হল ছিল, কমতে কমতে দেড়শ’র নিচে নেমে এসেছে। বাকি হল মালিকদের মুখেও বিদায়ের সুর। তাদের কথা, সারাবছরের বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীদের বেতনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করতে করতে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার উপক্রম। বাধ্য হয়ে হল ভেঙে সেখানে মার্কেট বা অন্য কিছু করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শুধুমাত্র মাল্টিপ্লেক্স দিয়ে দেশের সিনেমা বাঁচানো সম্ভব নয় বলে অনেকের ধারণা।

ঈদের সিনেমার আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সব শ্রেণির দর্শকের জন্য সিনেমা তৈরি হচ্ছে না। শিশু কিশোরদের জন্য কোনো সিনেমা নেই। এমনকি মধ্যবয়সী ও তার ঊর্ধ্বে বয়সীদের দেখার মতো তেমন কোনো সিনেমা তৈরি হচ্ছে না। যার ফলে তারা সিনেমা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঈদে সিনেমা হলে তরুণ বয়সী দর্শকের ভিড় বেশি। এর কারণও রয়েছে। ধরা যাক এবার ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া ‘বরবাদ’ সিনেমার কথা। সিনেমাটি এখন পর্যন্ত দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে। যার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান। রোমান্টিকতা বিবর্জিত হত্যা ও সন্ত্রাসে পরিপূর্ণ এক ছবি। কথায় কথায় নায়কের কোকেন সেবন, সিগারেট বা মদ খাওয়া, জবাই অথবা পিস্তল দিয়ে মানুষ হত্যা করা, অন্যের মুখে প্রশ্রাব করা, গালি দিয়ে কথা বলাসহ বেশকিছু দৃষ্টিকটু ও আপত্তিকর বিষয় রয়েছে। যে কারণে পরিবার অথবা শিশুদের নিয়ে ছবিটি দেখা সম্ভব নয়। অল্প বয়সীরা এগুলো থেকে ভালো কিছু শিখবে বলে মনে হয় না। অথচ শোনা যাচ্ছে এমনকি দেখাও যাচ্ছে ছবির প্রতিটি শো হাউসফুল। দর্শক অধিকাংশ তরুণ এবং অল্প বয়সী। বিকল্প হিসেবে পরিবার অথবা শিশুদের নিয়ে ছবি মুক্তির প্রয়োজন ছিল। যেটা পৃথিবীর অনেক দেশে হয়ে থাকে। মূল কথা ভালো গল্প নির্ভর, ভালো নির্মাণশৈলী ছবির আকাল দেখা দিয়েছে দেশে। যার ফলে দেশের সিনেমা অঙ্গন একপ্রকার ধ্বংসের মুখে।
আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ না করলে নয়, সেটা হচ্ছে অনেকের মুখে বলতে শোনা যায়, শাকিব খান ছাড়া ঈদের ছবি জমে না। এবার ঈদে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত দুটি সিনেমা। একটি হচ্ছে ‘বরবাদ’ অন্যটি ‘অন্তরাত্মা’। এরমধ্যে ‘বরবাদ’ ‘সিনেমাটি দর্শকপ্রিয়তা পেলেও মুক্তির দুই দিনের মাথায় দর্শক খরায় হল থেকে নামিয়ে ফেলা হলো ‘অন্তরাত্মা’। এটা একজন কেন্দ্রীয় চরিত্র অভিনেতার জন্য যেমন অপমানের তেমনি অসম্মানেরও। বোঝা যাচ্ছে শাকিবের নামেই সিনেমা চলে প্রচলিত এ কথাটির যথার্থতা নেই। এটা আরেকবার প্রমাণ হলো এবারের ঈদে। ২০২৪ সালের ১৫ নভেম্বর মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত সিনেমা ‘দরদ’। দর্শক খরায় হল থেকে নামিয়ে ফেলতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। অথচ ওই বছর ঈদে তার অভিনীত দুটি সিনেমা ব্যবসা সফল হয়। এতে প্রতীয়মান শাকিবের নাম থাকলেই সিনেমা ব্যবসাসফল হবে এমন নয়। সিনেমা চলা আর না চলা নির্ভর করে ভালো গল্প, ভালো নির্মাণশৈলী, ভালো অভিনয়, সবকিছুর ওপর।
এবার ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে ছয়টি সিনেমা। এগুলো হচ্ছে ‘বরবাদ’, ‘দাগি’, ‘জংলি’, ‘জ্বীন ৩’, ‘চক্কর ৩০২’ ও ‘অন্তরাত্মা’। এরমধ্যে  সর্বোচ্চ ১২০টি সিনেমা হলে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত মেহেদি হাসান হৃদয় পরিচালিত সিনেমা ‘বরবাদ’। সিনেমাটি সিঙ্গেল স্ক্রিন, মাল্টিপ্লেক্স দুই জায়গাতেই দাপটের সঙ্গে চলছে। এতে শাকিব খানের বিপরীতে আছেন কলকাতার অভিনেত্রী ইধিকা পাল। ছবির আইটেম গান ‘চাঁদ মামা’তে ক্যামিও পারফর্ম করেছেন কলকাতার অভিনেত্রী নুসরাত জাহান।
তথ্যমতে, ‘বরবাদ’ সিনেমার টিকিট বিক্রি থেকে আয়ের পরিমাণ এখন পর্যন্ত ২৮ কোটির ওপরে। এ সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম, যীশু সেনগুপ্ত, শ্যাম ভট্টাচার্য  প্রমুখ।
এবার ঈদের সিনেমা নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ঈদের সিনেমা নিয়ে হল মালিকরা সন্তুষ্ট। প্রায় সব প্রেক্ষাগৃহে হাউসফুল যাচ্ছে। প্রতিটি সিনেমাই দর্শক দেখার চেষ্টা করছে। আমরা আনন্দিত। শিল্পী কলাকুশলীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। সব মিলিয়ে একটা উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা হল মালিকেরা প্রযোজকদের অনুরোধ করব, নতুন নতুন সিনেমা তৈরি করুন। এই আমেজটা ধরে রাখুন। নতুন ভাবনা তৈরি করুন। ভালো গল্প উপহার দিন, দর্শক অবশ্যই হলে যাবে। সিনেমার ব্যবসা নিয়ে নিরাশ হয়ে পড়েছিলাম। অনেকে এই ব্যবসা থেকে সরে গেছেন। অনেকে সরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কিন্তু এই ঈদে যে সাড়া পেয়েছি তাতে হল মালিকেরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছেন। যে হলগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তারা হলগুলো সংস্কার করে পুনরায় চালুর ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আবারও আমাদের হলের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
আওলাদ হোসেন উজ্জ্বলের কণ্ঠের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে পারি সিনেমাকে বাঁচাতে হলে প্রয়োজন স্বদিচ্ছা। সব শ্রেণির দর্শকের জন্য ভালো মানের সিনেমা তৈরি হউক এবং উৎসব কেন্দ্রিক না হয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সিনেমা তৈরি হউক। অবশ্যই সিনেমার সোনালি দিন ফিরে আসবে।

×