
ছবি: সংগৃহীত।
ঢাকায় আয়োজিত প্রতীক্ষিত কনসার্ট ‘মেলোডি আনলিশড’ হঠাৎ করেই বাতিল হওয়ায় চরম হতাশায় পড়েছেন ভক্ত, দেশি-বিদেশি শিল্পী এবং সংশ্লিষ্টরা। কনসার্টে মূল আকর্ষণ হিসেবে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা ‘আওয়ারাপান’-এর বিখ্যাত গান ‘তো ফির আউ’ ও ‘তেরা মেরা রিশতা’ খ্যাত পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী মুস্তাফা জাহিদ। কিন্তু কনসার্ট শুরুর মাত্র ঘণ্টা খানেক আগে তিনি জানতে পারেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে আয়োজনটি বাতিল করেছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘মেলোডি অ্যান্ড মাইন্ড কমিউনিকেশন’।
শুক্রবার বিকেলে আয়োজকরা তাদের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে কনসার্ট স্থগিতের ঘোষণা দেয়। কিন্তু তখন পর্যন্ত বহু দর্শক কনসার্ট ভেন্যুতে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। ভেন্যু, টিকেট বিক্রি ও সমন্বয়ের অভাবে তৈরি হওয়া এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে দেশের কনসার্ট আয়োজনের জন্য এক দুঃখজনক দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন সংগীত সংশ্লিষ্টরা।
মুস্তাফা জাহিদের পাশাপাশি ঢাকার ব্যান্ড লেভেল ফাইভ, এনকোর ও শিল্পী এ কে রাহুলসহ আরও অনেকেই এই কনসার্টে পারফর্ম করার কথা ছিল। কনসার্ট বাতিল এবং আয়োজকদের অপেশাদার আচরণ নিয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ব্যান্ড লেভেল ফাইভ। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, “চরম অব্যবস্থাপনা এবং আয়োজকদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে ‘মেলোডি আনলিশড’ শোটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আয়োজকরা সময়মতো অর্থ পরিশোধ করেনি, সঠিকভাবে যোগাযোগ রাখেনি, এবং শেষ পর্যন্ত দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।”
তারা আরও যোগ করে, “আমাদের ভক্তদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা সবসময় শ্রোতাদের মানসম্পন্ন অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আপনাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।”
আয়োজকদের অদূরদর্শিতা আরও স্পষ্ট হয় ভেন্যু নির্বাচনে। শুরুতে আর্মি স্টেডিয়ামকে ভেন্যু হিসেবে উল্লেখ করে টিকিট বিক্রি শুরু করা হয়। কিন্তু পরে কোনো ঘোষণা ছাড়াই আয়োজকদের ফেসবুক ইভেন্টে ভেন্যু পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র’ দেখানো হয়। অথচ এই কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে জানায়, ১১ এপ্রিল তাদের কাছে ‘মেলোডি অ্যান্ড মাইন্ড কমিউনিকেশন’ নামে কোনো বুকিং ছিল না।
শত শত দর্শক টিকিট কেটে কনসার্টে অংশ নিতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু কনসার্ট স্থগিত হওয়ার পর অনেকেই অভিযোগ করছেন, আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না এবং টিকিটের টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্যও জানানো হয়নি।
এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন অনেকে। তারা বলছেন, বিদেশি শিল্পী এনে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করায় আয়োজকরা দেশের কনসার্ট সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
পাকিস্তানি শিল্পী মুস্তাফা জাহিদও তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে হতাশা প্রকাশ করে লেখেন, “আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে এই দুঃসংবাদটি জানাতে—আয়োজকদের পক্ষ থেকে সদ্য জানানো হয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে আজ রাতের কনসার্ট বাতিল করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “আমরা গতরাতে ঢাকায় পৌঁছেছি, স্থানীয় কিছু অসাধারণ সংগীতশিল্পীর সঙ্গে রাতভর রিহার্সাল করেছি। আপনাদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় রাত উপহার দিতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আয়োজকদের বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পরও আমরা শুধু আপনাদের হতাশ না করতে ঢাকায় এসেছিলাম। তবে আজকের সিদ্ধান্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল, এবং আমরাও আপনাদের মতোই হতাশ।”
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, পেশাদারিত্ব ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে কনসার্ট আয়োজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
সায়মা ইসলাম