
সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশনের একটি সাক্ষাৎকারে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার এবং পেশাগত যাত্রা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করেছেন। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে একাডেমিক এবং পেশাগত জীবনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, পারিবারিক প্রভাব, এবং জীবনের মূল শিক্ষাগুলো, যা তাকে আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
সিয়াম আহমেদ তার জীবন ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলেন, "আমার জন্ম হয়েছে ঢাকায়, শাহজাহানপুর এলাকায়। আমার আম্মা এবং আব্বা উভয়েই সরকারি চাকরি করেছেন।" তার পরিবার থেকে তিনি যেভাবে শিক্ষাগত এবং পারিবারিক মূল্যবোধ অর্জন করেছেন, তা তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তার বাবা-মা তাঁকে সবসময় সঠিক পথে চলার এবং সততার সাথে জীবনযাপন করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।
তার ভাষায়, "আমরা তোমার জন্য কিছু রেখে যেতে পারব না, তবে তোমাকে অনেক কিছু দেয়ার জন্য আমি আমার সততা বিক্রি করব না।" এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, সিয়ামের পরিবার তার প্রতি একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে, যেখানে ব্যক্তিগত মূল্যবোধ এবং সততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সিয়ামের জীবনের আরও একটি দিক হলো তাঁর একাডেমিক যাত্রা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমে ভর্তি হন, তবে পড়াশোনা শুরু করার পর তার মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
সিয়াম তার সাক্ষাৎকারে বলেন, "তবে পড়াশোনা শুরু করার পরে, আমি রিয়ালাইজ করি যে, সামহা আমি ইনজয় করছি না।" তাঁর এই উপলব্ধি তাকে আরও গভীরভাবে ভাবায়। একাডেমিক সাফল্য অর্জন করলেও তিনি বুঝতে পারেন যে, যখন আপনি একটি বিষয়ে আগ্রহী না হন, তখন আপনি সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করতে পারবেন না। সিয়াম এখান থেকে একটি বড় শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং নিজের আসল আকাঙ্ক্ষা অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
সিয়াম তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের কথা উল্লেখ করেন, যখন তার বাবা হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতালে ভর্তি হন। এই ঘটনা তাকে জীবনের গভীরতম দিকটি উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। তিনি বলেন, "আমি অনুভব করলাম যেন আমার ১০ বছর বয়স বেড়ে গেছে।" এই ঘটনাটি তার চিন্তা-ভাবনা ও জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে।
সিয়াম তার বাবার সাথে শেয়ার করতে চেয়েছিলেন, "আমার পড়াশোনা এখন আর ভালো লাগছে না, আমি কিছু করতে চাই যা আমাকে আকর্ষণ করে।"
এই মুহূর্তে তার বাবার দিক থেকে পাওয়া প্রতিক্রিয়া ছিল বিশেষভাবে প্রভাবশালী- "তোমার মনে হলে তুমি পড়ো। জীবন তোমার। আমরা তো সারাজীবন থাকবো না। তুমি তোমার লাইফ নিয়ে থাকবা। তোমার ফ্যামিলিকে নিয়ে থাকবা। তো তুমি কিসে হ্যাপি থাকবা, তুমি জানো ।" এটা তার আত্মবিশ্বাস এবং জীবনের প্রতি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছিল।
সিয়ামের জীবনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল তার আত্মবিশ্বাস এবং স্বকীয়তা। তিনি একেবারে নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে হেঁটেছেন, যা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। তাঁর বাবা তার প্রতি যে মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়েছেন, তা আজও তাকে চালিত করে।
তিনি বলেন, "আমার আব্বা আমাকে ছোটবেলা থেকে এমন একটা কনফিডেন্স গ্রো করে দিয়েছে যে, নাথিং ইজ ইমপসিবল ফর ইউ!" এখানে সিয়াম তার বাবার মূল্যবোধ এবং জীবনদৃষ্টিকোণের কথা উল্লেখ করেন, যা তাকে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে। তাঁর বাবা তাঁকে জানিয়ে দেন, "তুমি যদি বিশ্বাস করো, তুমি যে কোনো কিছু করতে পারবে।"
সিয়াম আহমেদের জীবন, পরিবার, এবং পেশাগত সিদ্ধান্তগুলি গভীর চিন্তা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে গড়ে উঠেছে। তিনি তাঁর সাক্ষাৎকারে যে বার্তাটি দিয়েছেন তা মূলত এই যে, সততা, পরিবারের প্রভাব, এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার জীবনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। সিয়াম তার দর্শকদের কাছে সততা এবং পরিশ্রমের মূল্য বোঝাতে চেয়েছেন, যা তাকে সফল হতে সহায়তা করেছে।
সূত্র:https://tinyurl.com/ywjdnp6p
আফরোজা