
গুলশানে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসে ‘ভঙ্গুর সহাবস্থান’ শীর্ষক প্রদর্শনী
সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল চিত্রকর হারুন অর রশীদ টুটুল। চিত্রকর্ম সৃজনে স্বকীয়তার সন্ধানী এই শিল্পী। আর সেই স্বকীয়তা সৃষ্টির অনুষঙ্গ হিসেবে বেছে নিয়েছে হাজার বছরের বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে। অন্যদিকে ক্যানভাস রাঙাতে এই ভূখ-ের মানুষের জীবন ও প্রকৃতি তাকে অনুপ্রাণিত করে। সেই সুবাদে পরিবেশের বিপন্নতা সহজাতভাবেই রংয়ের প্রলেপ ও রেখার টানে উদ্ভাসিত হয় এই শিল্পীর চিত্রপটে। প্রাণ ও প্রকৃতির হারিয়ে যাওয়া বিষয়গুলো তাকে করে তোলে আবেগপ্রবণ কিংবা নস্টালজিক। সেই আহত আবেগের সুন্দরতম প্রকাশ ঘটে তার চিত্রকর্মে। তাই বিমূর্ত রীতিতে চিত্রিত তার চিত্রকর্মগুলো যেন হয়ে ওঠে চলমান সময়ের ধারাভাষ্য। তার অধিকাংশ ছবিতে ফুল-পাখিসহ প্রাণী ও উদ্ভিদরাজ্যের নানা অবয়বকে অনুসরণ করে মূর্ত হয় বিষয়। ফলশ্রুতিতে বিমূর্ত রীতির
য়ে আঁকা হলেও টুটুলের চিত্রকর্মসমূহ সহজে কাছে টানে শিল্পরসিক থেকে সাধারণ দর্শককে। দর্শনার্থীর মননে ছড়িয়ে দেয় ভালোলাগার অনুভব। তেমন কিছু চিত্রকর্ম নিয়ে গুলশানের নেদারল্যান্ডস দূতাবাসে চলছে এই শিল্পীর দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী। শিরোনাম ফ্রাজাইল এক্সিসটেন্স কিংবা ভঙ্গুর সহাবস্থান।
শিল্পায়োজনটি প্রসঙ্গে হারুন অর রশীদ টুটুল বলেন, শিল্পরসিক থেকে সাধারণ দর্শকের কাছ থেকে খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। দর্শকদের মধ্যে অনেকেই ছবির ভেতরের গল্পটা খোঁজার চেষ্টা করেছেন। সেই বাস্তবতায় কেউ কেউ শিল্পীর অনুভূতির সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন। শিল্পকর্মের বিষয়ের সঙ্গে নিজেদের চিন্তা কিংবা চেতনার সামঞ্জস্য খুঁজে পেয়েছেন। এ কারণে কেউবা ছবিও সংগ্রহ করেছেন।
এই প্রদর্শনীতে হারুন অর রশীদ টুটুল তার চিত্রকর্মের মাধ্যমে বিশ্বায়ন, নগরায়ণ এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের প্রভাবকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছেন। তিনি বাঙালি ঐতিহ্যের উপাদানগুলোর সঙ্গে সমসাময়িক পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোর মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তার শিল্পকর্মে প্রাকৃতিক রূপ, স্থাপত্যের উপাদান এবং যান্ত্রিক কাঠামোর সমন্বয়ে মানবসভ্যতার অতীত ও ভবিষ্যতের টানাপোড়েন ফুটে উঠেছে। এই প্রদর্শনীকে বৈচিত্র্যময় করেছে টুটুলের ছেলে মেঘদূত মিহিরের শিল্পিত উপস্থিতি। টুটুলের ২৬টি চিত্রকর্মের সঙ্গে মিহিরের আঁকা দশটি ছবি ভিন্নমাত্রা সংযোগ করেছে এই প্রদর্শনীতে।
প্রকৃতি, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আধুনিক সভ্যতার সম্মিলন ঘটেছে টুটুলের চিত্রিত চিত্রকর্মগুলোয়। প্রতিটি ছবির ভেতর দিয়ে শিল্পী পৃথক পৃথক গল্প বলার চেষ্টা করেছেন। এ কারণেই তার ছবিগুলো পরিবেশগত সচেতনতা, সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছে দর্শককে। অন্যদিকে টুটুলের ছবিতে রয়েছে রঙের স্ফূরণ। আছে স্ফীত রেখার টানে বিষয়কে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের প্রয়াস। এই দুই সংযোগে টুটুলের ছবি মুগ্ধতা ছড়িয়েছে শিল্পরসিকদের নয়ন থেকে মননে।
শিল্পপ্রেমী, পরিবেশবিদ, গবেষকসহ সাধারণ দর্শকের জন্য উন্মুক্ত এই প্রদর্শনী। দেড় মাসব্যাপী চলমান শিল্পায়োজনটির শেষদিন ২৩ এপ্রিল। বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।