
ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনাকে নিয়ে সমালোচনা করা আলোচিত শিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি আওয়ামী শাসন আমলে নিজের হয়রানির অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, হাসিনা বাহিনীর রোষানলে পরা ব্ল্যাক লিস্টেড আমি টিকে ছিলাম এবং টিকে আছি আমার মনোবল ও ভক্ত শ্রোতাদের ভালোবাসায়। বিগত ৩/৪ বছর ধরে আমি ভাবতাম সন্ত্রাসী লীগ আমায় ভুলতে বসেছে কিন্তু হায় এখন দেখি তারা বট লীগ হয়ে আমার জীবনে ফিরে এসেছে। আমার একনিষ্ঠ অনুরাগী বলে কথা।
আজ ২১ শে মার্চ (শুক্রবার) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজের একটি পোস্টে তিনি এসব কথা জানান।
তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো
‘২০১১ সালে প্রজাপতি সিনেমার ‘দু দিকেই বসবাস’ গানটির জন্য আমি সেরা নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে মনোনীত হই এবং পুরস্কার প্রদান হয় ২০১৩ সালের মার্চ মাসে। আমার বড় কন্যার অসুস্থতার কারণে আমি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারিনি, পরবর্তীতে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমার পুরস্কার টি সংগ্রহ করি। ২০১৩ সালের শেষে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমি ফেসবুকে ছোট্ট একটি লেখা লিখি যার সারমর্ম ছিলো - শুধুমাত্র শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্য যারা আওয়ামীলীগ সমর্থন করেন ; তাদের সময় এখন ফিরে আসার। সেসময় বিগত জালিম সরকারের সমালোচনা অনেকেই করেছিল ( তখনো কিছুটা স্বাধীনতা অবশিষ্ট ছিলো )। কিন্ত রাতারাতি বারুদের মত আমার লেখনী সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পরে।
ফলাফল - ফেসবুক পোস্টের একদিন পরেই মধ্যরাতে আমার নেত্রকোনার বাড়ি ঘেরাও হয়। আমার মা আমৃত্যু নেত্রকোনা জেলা জাসাসের সহ সভাপতি ছিলেন (২০১২ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন)। অথচ পুলিশ ফোর্স জানালো তাদের কাছে গোপন সূত্রে খবর আছে আমার বাসা নাকি জামাত-শিবির জঙ্গির আস্তানা! তারা বাড়ি তল্লাশি করবে। আমি অসম্মতি জানালে এস এস সি পরীক্ষার্থী আমার ছোট ভাইকে তারা তুলে নিয়ে যেতে চাইলো। আমার সাথে অনেক বাক বিতন্ডার পর তারা চলে গেলেন। বাধ্য হয়ে আমি প্রেস কনফারেন্স করলাম। আমি মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচলাম কিন্ত হয়রানি বন্ধ হোলোনা। হয়রানির তালিকা লম্বা, অনেকেই নিশ্চই জানেন। যারা জানেন না তারা আমার কমেন্ট বক্সে গিয়ে বাংলাভিশন এর ইন্টারভিউ দেখে নিবেন।
ওদের ভাব এমন যেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তি আমার অর্জন নয় কিংবা বাংলাদেশ সরকার এই সম্মাননা দেয়নি, স্বয়ং শেখ হাসিনা বুঝি ভিক্ষা দিয়েছেন! ২০১৪ সালে আর্থিক, মানসিক, সামাজিক, কর্মক্ষেত্রে হেয় প্রতিপন্ন ২৬ বছর বয়সী আমি ভয়ংকর রূপে সাইবার বুলিং এর শিকার। বিদ্ধস্ত অবস্থায় ঘর - সংসার সব ফেলে নেত্রকোনা চলে গেলাম। ঘুম নেই, খাওয়া নেই, প্রতিদিন পুলিশ ভ্যান বিকেল থেকে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে আর আমি বাসার ছাদে পায়চারি করি। আর নিতে না পেরে ঘুমের ওষুধ খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলাম। শেখ হাসিনার মব বাহিনীর সে কি কুৎসিত উল্লাস!
টিভি চ্যানেল গুলোতে কদাচিৎ ডাক পেতাম। সেটাও সম্ভব হত যেসব প্রোগ্রাম producer আমার গান ভালোবাসতেন তাদের বদৌলতে। তবে একটি টিভি চ্যানেল পুরোটুকু সময় আমার উপস্থিতি পর্দায় চলমান রেখেছে - চ্যানেল টির নাম বাংলাভিশন। এমনকি আমার আপন দুই ভাই বাংলাভিশনে কর্মরত।
প্লে ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে আমি বিগত ১১ বছরে ১১ টি গান সিনেমার জন্য গেয়েছি বলে মনে পরেনা।ফিল্মে আমার সব জনপ্রিয় গান ২০১৪ সাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। সে কারণেই আমার আর কখনোই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া হয়নি।’
ফারুক