
দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ হোলি, হিন্দুদের রঙের উৎসব, উচ্ছ্বাস, সঙ্গীত ও আনন্দের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করেছে। বসন্তের আগমন ও শুভ শক্তির জয়কে চিহ্নিত করা এই বার্ষিক উৎসবে মানুষ একে অপরকে রঙ মাখিয়েছে, ঐতিহ্যবাহী সংগীতের তালে নেচেছে এবং উৎসবের সুস্বাদু খাবারে মেতে উঠেছে।
ভারত ও নেপালে উৎপত্তি হওয়া এই উৎসব এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো বিভিন্ন দেশে বড় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে হোলির আনন্দময় উৎসব পালিত হয়েছে। দিল্লি, মুম্বাই এবং কাঠমাণ্ডুর মতো বড় শহরগুলোতে রঙের উৎসবের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে মানুষ রাস্তায় এবং জনসমাগমস্থলে আনন্দে মেতে ওঠে।
হোলির সবচেয়ে প্রতীক্ষিত দিকগুলোর মধ্যে একটি হলো রঙের গুঁড়ো ছোড়ার খেলা, যা "গুলাল" নামে পরিচিত। সব বয়সের মানুষ এই ঐতিহ্যে অংশগ্রহণ করেছে, এবং পার্ক ও কমিউনিটি সেন্টারগুলো উজ্জ্বল রঙে সেজে উঠেছে। অনেক মন্দির এবং স্থানীয় সংগঠন বিশেষ প্রার্থনা ও অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে উৎসব উদ্যাপনের জন্য।
রঙের খেলা ছাড়াও, হোলির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো ঐতিহ্যবাহী খাবার। বাড়িতে গুজিয়া, মালপুয়া, পুরান পোলি-এর মতো মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়েছে, আর কিছু অঞ্চলে ভাং মিশ্রিত ঠাণ্ডাই পানীয় জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
হোলির সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ধর্মীয় সীমানার বাইরেও প্রসারিত, যা সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। অনেকেই এই উৎসবকে সম্পর্ক মেরামত, পুরোনো ক্ষোভ ভুলে যাওয়া এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে বন্ধন দৃঢ় করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রিত হয়ে হোলির আনন্দে মেতে উঠেছে, যা একতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
উৎসবের আনন্দের পাশাপাশি, বিভিন্ন শহরে কর্তৃপক্ষ নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব হোলি উদ্যাপনের জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে। ত্বক ও পরিবেশের ক্ষতি রোধে প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহারের জন্য প্রচারণা চালানো হয়েছে, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনসমাগম এলাকায় নজরদারি চালিয়েছে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
উচ্ছ্বাস এবং ভালোবাসার বার্তা নিয়ে হোলি আবারও প্রমাণ করেছে যে এটি মানুষকে সবচেয়ে আনন্দময় উপায়ে একত্রিত করে। রঙ মুছে গেলেও, থেকে যায় হাসি, ঐক্য এবং উদ্যাপনের স্মৃতি, যা আবারও আগামী বছর ফিরে আসবে।