
ছবি: সংগৃহীত
আগামী ২৩ থেকে ২৬ এপ্রিল চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগের কিনো পাইলটু থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হবে প্রাগ চলচ্চিত্র উৎসব। আর এ উৎসবে নির্বাচিত হয়েছে তিনটি অস্কার এবং দুটি কানাডিয়ান স্ক্রিন এওয়ার্ডস কোয়ালিফাইং উৎসব ঘুরে আসা বাংলাদেশী সিনেমা ‘নট আ ফিকশন’।
এই উৎসবের মধ্য দিয়ে এক শটের সিনেমাটির ইউরোপিয়ান প্রিমিয়ার হবে। একইসঙ্গে এই ছবির পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রগ্রাহক তরুণ নির্মাতা শাহনেওয়াজ খান সিজু।
ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসবের বিশেষ একটি বিভাগ হচ্ছে ‘ভয়েসেস অব ডিসট্যান্ট ল্যান্ডস’। এই বিভাগটি এমন সিনেমাগুলিকে সম্মান জানায়, যা প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে এসে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও মানবিক ইস্যুগুলো নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে। এ বছর সারাবিশ্ব থেকে মোট ৫টি দেশের চলচ্চিত্র এই বিভাগে মনোনীত হয়েছে। এর মধ্যে ‘নট আ ফিকশন’ এশিয়া মহাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে জ্বলজ্বল করছে বাংলাদেশের নাম।
সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ‘নট আ ফিকশন’ মূলত একটি ঐতিহাসিক দলিল যা গত দুই যুগে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘটে যাওয়া অসংখ্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে কথা বলে।
ইতোমধ্যেই আমেরিকা, কানাডা এবং লেবাননের বড় বড় উৎসবে প্রশংসা কুড়িয়ে আসা ‘নট আ ফিকশন’ প্রাগের সেরা আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের অন্যতম দাাবিদার হয়ে উঠেছে। চেক প্রজাতন্ত্রসহ ইউরোপের নানান গণমাধ্যমে এই উৎসববকেন্দ্রিক খবরগুলোতেও গুরুত্বের সাথে প্রচার করা হচ্ছে ছবিটির কথা। কিন্তু এই পুরষ্কারের জন্য ‘নট আ ফিকশন’কে লড়তে হবে ২০২৫ সালের অস্কারজয়ী সেরা লাইভ অ্যাকশন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আই অ্যাম নট অ্যা রোবট’-এবং অন্যান্য দেশের ছবিগুলোর বিপরীতে।
ভিক্টোরিয়া ওয়ারমারডাম পরিচালিত এই ডাচ সিনেমাটি আধুনিক ডিজিটাল জীবনের বাস্তবতাকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে চিত্রিত করেছে। এক ব্যর্থ ক্যাপচা পরীক্ষার মাধ্যমে তৈরি হওয়া ভার্চুয়াল আইডেন্টিটি সংকটকে তীক্ষ বিদ্রুপে রূপ দিয়েছে এই চলচ্চিত্র, যেখানে প্রযুক্তির দাপটে মানুষের অস্তিত্ব সংকটের প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে।
দুই সিনেমার বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। একটিতে উঠে এসেছে স্বৈরাচারী রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্মম বাস্তবতা, আরেকটি প্রযুক্তি দুনিয়ার তীক্ষ ব্যঙ্গাত্মক বিশ্লেষণ।
‘নট আ ফিকশন’ যেখানে বাস্তব জীবনের তীব্র সত্য তুলে ধরে, ‘আই অ্যাম নট অ্যা রোবট’ সেখানে প্রযুক্তিনির্ভর সমাজের হতাশা আর বিভ্রান্তিকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে দেখায়। দুটি সিনেমা ভিন্ন ঘরানার হলেও নির্মাণশৈলী এবং গল্পের জোরে হয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিশ্বমঞ্চে। ‘নট আ ফিকশন’ বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
দেশের স্বতন্ত্র ও নির্ভীক চলচ্চিত্র নির্মাণের চেতনাকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার এক বিরল সুযোগ। অস্কারজয়ী চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে ‘নট আ ফিকশন’ বিজয়ী হতে পারে কি না, তা সময়ই বলবে। তবে নিশ্চিতভাবেই এটি বাংলাদেশি সিনেমার আন্তর্জাতিক উত্থানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
প্রাগ চলচ্চিত্র উৎসব শুধু প্রতিযোগিতার মঞ্চ নয়, এটি এক বিশাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মও। উৎসবের এবারের আসরে সারাবিশ্ব থেকে নানান বিভাগে মোট ৭২টি চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে। যার মধ্যে বার্লিনাল-২০২৪-এ প্রদর্শিত চেক সিনেমাগুলোর পাশাপাশি আমেরিকা, ইউরোপ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, কাতার, মধ্যপ্রাচ্যসহ নানান দেশের চলচ্চিত্র থাকবে।
কানাডিয়ান সমসাময়িক চলচ্চিত্রের একটি কিউরেটেড শো-কেস প্রদর্শিত হবে এবার। উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হলো পুরস্কারের আর্থিক মূল্য। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রগুলোর জন্য ৭৫ হাজার চেক ক্রোনা (প্রায় ৩ ইউরো) এবং শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের জন্য এক লাখ চেক ক্রোনা (প্রায় ৪ হাজার ইউরো) পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
নির্মাতা সিজুর সঙ্গে নট আ ফিকশনের সহ-প্রযোজক হিসেবে কাজ করছেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রীতি এবং লাইলি বেগম। এছাড়া এই সিনেমায় অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন উদয়ন রাজীব, নাঈমুল আলম মিশু, ঐশিক সামি আহমেদ, রুদ্রনীল আহমেদ, জাওয়াদ সৌধ এবং মিথুন। ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন আহসান স্বরণ এবং সৈয়দ তামুর হাসান।
ছবিটির নির্বাহী প্রযোজনায় ছিলেন মোঃ আসিফ, সাউন্ড ডিজাইন করেছেন রিপন নাথ ও রনি সাজ্জাদ, কালার করেছেন রাশাদুজ্জামান সোহাগ, সম্পাদনায় ছিলেন লিওন রোজারিও এবং তানভীর আহমেদ রনি। এছাড়া সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছে মোঃ আমান খান এবং আল আমিন সুমন।
শিলা ইসলাম