ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৯ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

পথনাটকে সামাজিক সচেতনতা

পিছিয়ে পড়া মানুষদের এগিয়ে নেওয়ার গল্প ‘পদ্মা পাড়ের মানুষ’

শফিকুল ইসলাম শামীম

প্রকাশিত: ০০:০৮, ৯ মার্চ ২০২৫

পিছিয়ে পড়া মানুষদের এগিয়ে নেওয়ার গল্প ‘পদ্মা পাড়ের মানুষ’

সচেতনতামূলক পথনাটক ‘পদ্মা পাড়ের মানুষের’ একটি দৃশ্য

বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, ধর্ষণ, মাদক অথবা ডেঙ্গু-সামাজিক এসব সমস্যার সঙ্গে মানুষের দেহ ও মন কোনো না কোনোভাবে পরিচিত। সময়ের প্রয়োজনেই এক সময় প্রশ্ন ওঠে, প্রতিরোধযোগ্য এসব রোগ সম্পর্কে মানুষ কতটা সচেতন ? 
সকালে পত্রিকার পাতায় কিংবা সন্ধ্যায় টিভি পর্দায় ভেসে ওঠে ইভটিজিং ও ধর্ষণের মতো ভয়ানক সংবাদ। কঠোর আইন থাকার পরও বাল্যবিয়ে যেন পিছু ছাড়ছে না। হাসপাতালে গেলে বোঝা যায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। মাদকসেবীদের অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর নিশ্চিত মরণব্যাধি জেনেও নিরবে এইচআইভি বহন করে নিরবে বহন করে চলেছে এই সমাজ। কিন্তু সরকারি-বেসরকারিভাবে কতটুকু সচেতনতামূলক প্রচার চলছে? 
এক সময় শহর ছাপিয়ে গ্রামেও নিয়মিত সচেতনতামূলক পথনাটক প্রদর্শিত হতো। স্কুল-কলেজে শিক্ষামূলক নাটক হতো। সেখানে বাল্য বিয়ের কুফল, মাদকের কারণে পরিবার ও সমাজের অবক্ষয় তুলে ধরা হতো। মরণব্যাধি এইডস প্রতিরোধ শেখানো হতো। ইভটিজিং ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার উৎসাহ দেওয়া হতো। পথ নাটকে উঠে আসত এসব। সময়ের পরিক্রমায় কমে এসেছে পথনাটক, গ্রামীণ নাটক।

তবে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পথনাটকের মাধ্যমে শিক্ষা ও সচেতনতামূলক বিষয়টি ধরে রেখেছে ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’। রাজবাড়ী জেলার রেলস্টেশন, বাস-ট্রাক টার্মিনাল, গ্রামীণ হাট-বাজার, স্কুল-কলেজের মাঠে শিক্ষা ও সচেতনতামূলক পথনাটক প্রদর্শন করছে তারা। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুরা উপভোগ করছে এই নাটক। 
গ্রামীণ সাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষা ও বিনোদন এখন গণস্বাস্থ্যের এই পথনাটক। সেই ধারাবাহিকতায় জেলার দৌলতদিয়া বাস-ট্রাক টার্মিনালে গোয়ালন্দ সম্মিলিত নাট্যদলের পরিবেশনায় মঞ্চস্থ হচ্ছে সতেনতামূলক পথনাটক। এইডস, বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, মাদক ও ডেঙ্গু প্রসঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে ‘পদ্মা পাড়ের মানুষ’ নামের এই পথনাটক। 
দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আয়োজনে নাটকটি দেখতে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ এবং শিশুরা। স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো নাটকের উপজীব্য। দলের সদস্যরা অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বিনোদনের সঙ্গে দর্শকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির বিষয়টিও তুলে আনছেন। 
শুধু পথনাটকই নয়। প্রতিদিন দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একদল স্বেচ্ছাসেবী ডোর টু ডোর স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। প্রতিমাসে একবার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন ও চিকিৎসা করাচ্ছেন। 
বিনামূল্যে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা করাচ্ছেন। প্রয়োজনে সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানো হচ্ছে। দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এখন রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলাবাসীর কাছে চিকিৎসার ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে। 
সামাজিক সংগঠন কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা (কেকেএস) সেফহোমের ম্যানেজার মো. শাহাদত হোসেন বলেন, জেলার দ্বীপ এলাকা কুশাহাটা। সেখানে ১৪০টি পরিবার বসবাস করে। সরকারিভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছায়নি। মাঝেমধ্যে সরকারি স্বাস্থ্য কর্মীরা গেলেও চাহিদামতো চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত চরের বাসিন্দারা। কিন্তু সেই দ্বীপ এলাকায় ‘দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের’ স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। এটি বিরল ঘটনা। 
দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর যৌন কর্মীদের সামাজিক সংগঠন ‘অবহেলিত মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা’র সভাপতি ফরিদা পারভীন বলেন, ২০০২ সাল থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যৌনপল্লী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে। একটা সময় এইডস ও বাল্যবিয়ে সম্পর্কে আমাদের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। গণস্বাস্থ্য কর্মীরা আমাদের স্বাস্থ্য সচেতন হিসেবে গড়ে তুলেছে। আমরা প্রতিনিয়ত তাদের কাছ থেকে শিখছি। 
দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ম্যানেজার মো. জুলফিকার আলী বলেন, রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়ার গোয়ালন্দে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সুচিকিৎসা দেওয়ার জন্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্যার দৌলতদিয়ায় একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে ২০০২ সাল থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়। 
তিনি বলেন, এইডস, বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, ধর্ষণ, মাদক ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে পথ নাটকের মাধ্যমে এলাকার অসহায় মানুষকে সচেতন করার জন্য এই প্রচেষ্টা।

×