ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

বলিউডে পা রাখলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রূপন্তী অকিদ, জানালেন অভিজ্ঞতা

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ৬ মার্চ ২০২৫

বলিউডে পা রাখলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রূপন্তী অকিদ, জানালেন অভিজ্ঞতা

ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন বাংলাদেশিরা। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম সেসব দেশের নাগরিক। তবে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ভিন্ন সংস্কৃতিতে হলেও বুকের বা পাশে সযতনে সংরক্ষিত লাল-সবুজ। তাদের একজন অভিনেত্রী রূপন্তী আকিদ।

সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ভারত-অস্ট্রেলিয়ার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমা 'হিন্দি ভিন্দি'। ভারতীয় নির্মাতা আলী সায়েদ পরিচালিত ছবিটিতে কাজের অভিজ্ঞতাসহ নানা দিক নিয়ে মনের আগল খুলেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ সুন্দরী। সিডনি থেকে যুক্ত হয়েছিলেন ঢাকা মেইলের সঙ্গে। 

‘হিন্দি ভিন্দি’ মুক্তির পর প্রশংসিত হচ্ছেন। কেমন লাগছে?

খুব ভালো লাগছে। অনেকদিনের জার্নি ছিল। এতদিন গল্প ও চরিত্র গোপন রাখতে হয়েছে। এখন সবার সাথে ভাগ করতে পারছি। বেশ সাড়া পাচ্ছি। মনে হচ্ছে এটি আমার কঠোর পরিশ্রমের ফল।

ছবিটিতে যুক্ত হলেন কীভাবে?

ছবিটি সম্পর্কে অনলাইন থেকে জেনেছিলাম। অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা একজন তরুণীকে খুঁজছিল। ভাঙা হিন্দি জানতে হবে। খুব আবেগী ও কান্নাকাটির দৃশ্য আছে। এগুলো ফুটিয়ে তুলতে পারবে এরকম কাউকে চাইছিলেন তারা। অনলাইনে কয়েক দফা অডিশন হয়। সংক্ষিপ্ত তালিকার পর স্ক্রিন টেস্টের জন্য ওনাদের অফিসে যাই এবং নির্বাচিত হই।

রিয়ানার মতো আপনিও বহুসংস্কৃতির পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন…

হ্যাঁ, যাদের মা-বাবা বাংলাদশ, ভারত, পাকিস্তান অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ থেকে এসেছে রিয়ানার মতো আমিও তাদের একজন। আমাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানে। সেক্ষেত্রে একটা কালচারাল আইডেন্টিটির স্ট্রাগল থাকে। কেননা স্কুলের সংস্কৃতি অস্ট্রেলিয়ার এবং বাসার কালচার সম্পূর্ণ আলাদা। অনেকের মা-বাবা নিজ দেশের মানসিকতা বহন করেন। রিয়ানা চরিত্রটি এরকম অনেক প্রতিবন্ধকতা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যায়। তার বাবা মুসলিম। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। অন্যদিকে রিয়ানা মুদ্রার উল্টো পিঠ। গিটার বাজায়, রকস্টার টাইপের। আরও অনেক বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে তাকে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। বিষয়গুলো ছবিতে খুব সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন পরিচালক। সব বয়সের দর্শক সিনেমাটি উপভোগ করবেন। খুব মারাত্মক ও গভীর বিষয়গুলো হাস্যরসাত্মকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

চরিত্রটির জন্য আপনার প্রস্তুতি কেমন ছিল?

চার সপ্তাহ রিহার্সাল করেছি। খুব আবেগপ্রবণ ও কান্নাকাটির দৃশ্য ছিল। আমার কাছের বন্ধুদের অনেকে রিয়ানার মতো স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে। ছোটবেলা থেকে দেখেছি। ওই অভিজ্ঞতা আমাকে চরিত্রের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে সাহায্য করেছে।

নিজের সঙ্গে রিয়ানার কতটা মিল বা তফাৎ খুঁজে পেয়েছেন?

আমার ও রিয়ানার মধ্যে অনেক পার্থক্য। আমি আমার মা-বাবার থেকে কোনোকিছুতে বাধা পাইনি। যা-ই করতে চেয়েছি তারা অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু রিয়ানার ক্ষেত্রে সেরকম না। আমি চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম। যারা দেখেছেন তারা বেশ উপভোগ করেছেন। আমি যে চরিত্রটাকে এত ভালোভাবে পর্দায় তুলে ধরতে পেরেছি তা দেখে তারা বেশ আশ্চর্য হয়েছেন। যারা এখনও দেখেননি আশা করছি তাদেরও ভালো লাগবে।

বলিউডে নতুন কোনো কাজের কথা চলছে?

এখনও সেরকম কিছু ঘটেনি। মাত্র তো সিনেমাটি মুক্তি পেল। তাছাড়া ছবিটা শুধু অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পেয়েছে। এখনও অন্য কোনো দেশে যায়নি। ভারতে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আরও বিভিন্ন দেশে মুক্তি পাবে। চেষ্টা চলছে নেটফিক্সে মুক্তি দেওয়ার। দেখা যাক কী হয়।

বিশ্ব বিনোদন অঙ্গনে নিজেকে অস্ট্রেলিয়ান নাকি বাংলাদেশের প্রতিনিধি মনে করেন?

দুটোই। সবসময় সব জায়গায় খুব গর্বের সঙ্গে বলি আমার ব্যাকগ্রাউন্ড বাংলাদেশি। অনেকে শুটিংয়ের সময় মনে করেছিল আমি ভারত থেকে এসেছি। কিন্তু আমি সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করে দিয়েছি। বলেছি আমার সঙ্গে ভারতের কোনো সম্পর্ক নেই। আবার কেউ মনে করেন আমি হয়তো কলকাতার বাঙালি। আমি বলি যে আমি বাংলাদেশি বাঙালি। তবে কাগজপত্রের দিক থেকে আমি সম্পূর্ণ অস্ট্রেলিয়ান। সেদিক থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। কিন্তু সেটা কোনো ব্যাপার না। আমি খুব গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশি পরিচয়টা ধরে রাখি।

বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজ করছেন। অস্ট্রেলিয়ার ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে কতটুকু তফাৎ মনে হয় আপনার?

বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার ইন্ডাস্ট্রি একেবারেই আলাদা। তবে আমি খুবই ফ্লেক্সিবল। যেখানে যাই সেখানকার লোকজন যেরকম সেভাবে চলি। পরিচালক যেভাবে নির্দেশনা দেন সেভাবেই কথা শুনি। তবে হ্যাঁ,পশ্চিমা ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। মিডিয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি। কিন্তু আমার কাছে সেটা কোনো ব্যাপার না। প্রফেশনালি দেখি সবকিছু।

বাংলাদেশের কী বেশি ভালো লাগে?

বাংলাদেশে খুব কম যাওয়া হয়েছে। চার-পাঁচবার। ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি ভালো লেগেছে। সাধারণত তাদের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে কথা হয়। সামনাসামনি দেখা ও কথা হওয়াটা আমার জন্য বেশি অর্থবহ ছিল।

অভিনয়ের বাইরে কীসের সঙ্গে যুক্ত আছেন?

আমার ফটোগ্রাফির বিজনেস আছে। আমি একজন ফটোগ্রাফার। ক্যামেরার পেছনে কাজ করতেও ভালোবাসি। আমি একজন চলচ্চিত্র সমালোচকও। নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে ফিল্মের রিভিউ করি। বিভিন্ন সিনেমার প্রিমিয়ারে আমাকে দাওয়াত করা হয়। ওয়ার্নার ব্রসসহ অনেক বড় প্রযোজনা সংস্থা থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ক্যামেরার পেছনের মতো সামনের কাজ করতেও ভালো লাগে। ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতেই আমি ভালোবাসি।

বাংলাদেশের কার অভিনয় ভালো লাগে?

আমি সম্প্রতি ‘বনলতা সেন’ নামে যে কাজটি করেছি সেখানে দুজন তরুণ অভিনেতা আছেন। সোহেল মন্ডল ও খায়রুল বাশার। তাদের সঙ্গে কাজ করে আমার খুব ভালো লেগেছে। তারা দুজনই তরুণ প্রজন্মের। তাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ ছিল। আমি তো অনেক বছর বাংলাদেশে কাজ করেছি। এবার মনে হয়েছে বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি ঠিকভাবে আগাচ্ছে। এটা ভালো লেগেছে।

আপনার মা একজন থিয়েটার কর্মী। অভিনয়ের শিক্ষা কি তার থেকে পাওয়া?

অভিনয়ের দিক থেকে মায়ের থেকে সেরকম কিছু শেখা হয়নি। তিনি মঞ্চে নাটক করতেন। মঞ্চ ও পর্দায় অনেক পার্থক্য আছে। তবে মা সার্বিকভাবে আমাকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন। আমি বাংলা পড়তে পারি না। মায়ের মাধ্যমে অনেক কাজের রিহার্সেল করা হয়। মা স্ক্রিপ্টের বাংলা পড়ে শোনান। তার সঙ্গে আমি ডায়লগের রিহার্সাল করি। এভাবে মা আমাকে অনেক সাপোর্ট দেয়।

সুত্র: ঢাকা মেইল

রাকিবুল

×