
ছবিঃ সংগৃহীত
হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে কিছু অভিনেত্রী আছেন, যাদের সৌন্দর্য ও অভিনয় এতটাই মুগ্ধকর ছিল যে, তারা চলে যাওয়ার পরও মানুষের মনে অমলিন থেকে গেছেন। তেমনই একজন ছিলেন লীলা নাইদু।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া খেতাব জেতেন, যা তাকে রাতারাতি আলোচনায় নিয়ে আসে। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতার পর, লীলা এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, বিশ্বখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের দশজন সবচেয়ে সুন্দরী নারীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন অনেক কিংবদন্তি অভিনেতা, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজ কাপুর। তিনি লীলাকে তার সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেন, কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, লীলা চারবার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। হয়তো তিনি নিজের পথ নিজেই তৈরি করতে চেয়েছিলেন, হয়তো তার জীবন নিয়ে অন্য রকম স্বপ্ন ছিল।
সিনেমার জগতে প্রতিষ্ঠিত হতে না হতেই লীলা ভালোবেসে বিয়ে করেন তিলক রাজ ওবেরয়কে। তখন লীলার বয়স মাত্র ১৭, আর তিলক ছিলেন তার থেকে ১৬ বছর বড়। তাদের সংসারে যমজ সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এই বিয়ে টেকেনি। সম্পর্ক ভেঙে গেলে সন্তানের অভিভাবকত্ব তিলকের কাছে চলে যায়, যা লীলার জীবনে এক গভীর শূন্যতা এনে দেয়।
এরপর তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন, এবার ডম মোরায়েস নামক এক লেখকের সঙ্গে। তাদের সম্পর্ক রোমাঞ্চকর হলেও, বেশি দিন টেকেনি। বিচ্ছেদের পর, ধীরে ধীরে লীলা জনসমাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।
তিনি মুম্বাইয়ে তার বাবার ফ্ল্যাটে থাকতেন, কিন্তু আর্থিক দুরবস্থার কারণে একসময় বাধ্য হয়ে নিজের বাড়ি ভাড়া দিতে হয়।
লীলা নাইদুর জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক অধ্যায় শুরু হয় যখন ডম মোরায়েসের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। মনের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েন, আর এই সময়ে তার আর্থিক সংকট আরও তীব্র হয়।
২০০৯ সালে, মাত্র ৬৯ বছর বয়সে, ফুসফুসের অসুখ নিয়ে দীর্ঘদিন লড়াই করার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এক সময়ের সারা দুনিয়ায় প্রশংসিত অভিনেত্রী লীলা নাইদুর শেষ জীবন কাটে নিঃসঙ্গতা আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে।
তবে তার সৌন্দর্য, অভিনয়, এবং ব্যতিক্রমী জীবনযাপন আজও তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে। হয়তো তিনি হারিয়ে গেছেন, কিন্তু তার গল্প আজও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছে।
মারিয়া