
ছবিঃ সংগৃহীত
অভিজ্ঞ চিকিৎসক, লেখক এবং সমাজকর্মী হিসেবে পরিচিত ডাক্তার সাবরিনা মিষ্টি তার ফেসবুক পেজে একটি অনুপ্রেরণামূলক স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন। যেখানে তিনি তার জীবনের কিছু গভীর অনুভূতি এবং কঠিন সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।
স্ট্যাটাসটি শুরু হয় ছাত্রী জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে। সাবরিনা মিষ্টি লিখেছেন, “ছাত্রী হিসেবে আমি ছিলাম হিংসুটে টাইপের! পরীক্ষা হলে কেউ যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইতো, আমি না শোনার ভান করতাম। কেউ যেন গলা বাড়িয়ে আমার পরীক্ষার খাতা দেখে না ফেলে এজন্য রুমাল দিয়ে ঢেকে ঢেকে লিখতাম!”
তারপর বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসে, কিন্তু বিশেষভাবে পরীক্ষা সম্পর্কিত আগ্রহ তাকে কখনও ছাড়েনি। এমনকি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পরও, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষার সময়ও তিনি অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে চান, এমনকি তাদের ছাপিয়ে টপ রেজাল্ট করার খায়েস তাঁর কমেনি।
তিনি তার হাতের লেখা ছোট এবং দ্রুত লিখতে পারার দক্ষতার কথাও উল্লেখ করেছেন, কিন্তু অতিরিক্ত লেখার ফলে ডান হাতের মধ্যমায় কড়া পড়ে গেছে, যা ছিল তার নিরন্তর পরিশ্রমের চিহ্ন।
তবে সবচেয়ে আবেগপ্রবণ অংশ ছিল তার কারাগারের অভিজ্ঞতা, যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, “যেদিন এক বস্ত্রে কারাগারে ঢুকি, সেদিন সঙ্গে আর কিছু ছিলো না—শুধু হাতে একটি সোনার হাতঘড়ি ছিলো আর ছিলো একটি কলম। সেই ঘড়ি আর কলমটাও যখন তল্লাশি করে বাজেয়াপ্ত করা হলো, তখন সত্যি বলছি, ঘড়ির জন্য একটুও মন কাঁদেনি! হু হু করে কেঁদেছিলাম কলমটার জন্য!”
এখানে তিনি কারাগারের একজন কয়েদী রাশিদা খালা-এর কথা উল্লেখ করেছেন, যিনি তাকে তার কান্নার কারণ জানতে চান। “কেমন পাগল মাইয়া! সব কিছু চইল্যা গেল, দুই পয়সার কলমের লেইগ্যা এমুন কান্দন লাগে ক্যারে?”—এমন প্রশ্ন করেছিলেন রাশিদা খালা।
তার কথা থেকে স্পষ্ট যে, কলম তার জন্য শুধু একটি লিখনযন্ত্র নয়, এটি ছিল তার অস্তিত্বের প্রতীক। “সেদিন আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আল্লাহ যদি চান, এই কলম দিয়েই আমি একদিন সকলের হৃদয় জয় করবো!”—এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে তিনি তার জীবন যাত্রা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ডাক্তার সাবরিনা মিষ্টি তার এই স্মরণীয় অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানিয়েছেন যে, কলম তার জীবনে অমূল্য ও শক্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং তিনি বিশ্বাস করেন, একদিন এই কলম দিয়ে তিনি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারবেন।
জাফরান