ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

গানের জন্য পয়সা নিতেন না প্রতুল মুখোপাধ্যায়

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গানের জন্য পয়সা নিতেন না প্রতুল মুখোপাধ্যায়

গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়

দেশভাগের পর বরিশার থেকে ভারতের চুঁচুড়ায় গিয়ে স্কুলে পড়ার সময় প্রথম স্টেজে গান গেয়ে শুনিয়েছিলেন গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়। সেই গণ্ডি ছাড়িয়ে স্কুলের বড় ক্নাস, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতাসহ নানা রাজ্য এবং বাংলাদেশের গানের মঞ্চেও পা পড়েছিল প্রতুলের। তবে একটা জীবনে গান গেয়ে কোনো পারিশ্রমিক নিতেন না ভারতের প্রয়াত এই শিল্পী।

পারিশ্রমিকের বদলে পাঞ্জাবি উপহার পেতেন বলে প্রতুল জানিয়েছিলেন। কলকাতার সংবাদমাধ্যম রোববারডটইনে গায়ক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের নেওয়ার সাক্ষাৎকারে প্রতুল এই গল্প শুনিয়েছিলেন।

এক সময়ের নকশাল আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী এবং সাবেক অধ্যাপক ও ব্যাংক কর্মকর্তা প্রতুল মুখোপাধ্যায় গানকেই সমাজ বদলের হাতিয়ার করেছিলেন। শনিবার ৮৩ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন এই শিল্পী। তার সহশিল্পী, দর্শকরা তাকে জীবনভর দেখেছেন পাঞ্জাবিতেই।

প্রতুলের কথায়, “গানের জন্য যেহেতু পয়সা নিতাম না, আমাকে অনেকে পাঞ্জাবি দিত। মানে, গান করছি, কিছু তো একটা দিতে হয়, সেই হিসাবে। তারপর থেকে আমি পাঞ্জাবি পরে গান গাইতে যেতাম। সকলে বলত, এই দেখো প্রতুলদা পরে গাইতে এসেছে। কী আর করব! অনেক পাঞ্জাবি হয়ে গেছে তখন ঘরে। হয়ত পাঞ্জাবি না দিয়ে জুতো দিলে আমার কাজে লাগত। কিন্তু ওইভাবে তো আর বলা যায় না। সবাই পাঞ্জাবিই দিত। তো তাতে আমার একটু জৌলুস বাড়ল।

আর কোনো পোশাকের কথা কী ভাবা হয়নি প্রশ্নে প্রতুল বলেন, “দেখ, আমি বুশ শার্ট পরেই গাইতে পারতাম। এটাকে আমি ভেরিয়েবলের একটা অঙ্গ বলে মনে করতাম না। এগুলোকে উৎখাত করাই বরং আমার উদ্দেশ্য। তবে, আমার পাঞ্জাবি আছে, তার পরেও আমি ছেঁড়া জামা পরে গাইতে যাচ্ছি, সেটা আবার অন্যরকম একটা ব্যাপার হত। ঠিক নয়। সেটা হত কৃত্রিমতা। আমার কথা ছিল, গো অ্যাজ ইউ আর। আজীবন আমি এটাই মেনে চলেছি। প্রথম মঞ্চে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা শোনাতে স্মৃতি হাতড়ে প্রতুল বলেছেন, তার ছয় বছর বয়সে চুঁচুড়ায় এক মাদ্রাসার অনুষ্ঠানে প্রতুলের প্রথম পরিবেশনা।

দেশভাগের পর চুঁচুড়ায় গিয়ে বাবা যে মাদ্রাসায় চাকরি নিলেন, সেখানে অনুষ্ঠান হবে। গাওয়া হবে রঘুপতি রাঘব রাজা রাম। আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন বাবা। আমি গানটা জানতাম না, বাবা গেয়ে শুনিয়ে দিলেন। আমি রঘুপতি রাঘব গাইছি, আর মুসলমান ছেলেরা আমার সঙ্গে গাইছে। এটা আমার প্রথম পাবলিক পারফরম্যান্স।

ভয় লেগেছিল কী না জানতে চাইলে প্রতুল বলেন, বিভিন্ন লোকের সামনে গান গাওয়ায় আমি নার্ভাস হইনি কখনও। আমি তো সারাক্ষণই গান গাইছি, এখানে গান গাইলেও যা, ওখানে গান গাইলেও তা। স্কুলের মঞ্চেই অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছিলেন তিনি। ‘গায়ক অভিনেতা’ হিসেবে স্কুলের নাটকের মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করেন প্রতুল।


তিনি বলেন, “'যাত্রিক' বলে একটা পত্রিকা করতাম স্কুলে। যেদিন এটা প্রকাশিত হত, সেদিন হেডমাস্টারের কাছে গিয়ে আমরা বলতাম দুটো ক্লাস যদি অফ দেওয়া যায়। সেই সময়টাতে আমরা থিয়েটার করব। ক্লাস ফাইভ-সিক্সের ছেলেরা।

তখন একটা কথা চালু ছিল যে স্ত্রী ভূমিকা বর্জিত নাটক হতে জবে। যে নির্দেশক ছিল, সে আবার স্ক্রিপ্টে গানের অংশগুলো কাটতে শুরু করল। আমি বললাম অ্যাই কাটছিস কেন? ও বলল গান আবার কে গাইবে? আমি বললাম আমি গাইব। স্টেজে গাওয়া শুরু সেই নাটক থেকে আমার। স্টেজকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় কেউ শেখায়নি আমায়, কিন্তু নাটক করতে গিয়ে স্টেজটাও জেনে যাই। আই টুক দ্য চ্যালেঞ্জ।

শহীদ

×