![আমার থেকে শেখার কিছু না থাকলেও, আমার ভাইয়ের থেকে এ দেশের ছেলেরা শিখতে পারেন: রুনা খান আমার থেকে শেখার কিছু না থাকলেও, আমার ভাইয়ের থেকে এ দেশের ছেলেরা শিখতে পারেন: রুনা খান](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/WhatsApp-Image-2025-02-12-at-91205-PM-2502121513.jpg)
ছবিঃ সংগৃহীত
মডেল ও অভিনেত্রী রুনা খান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে এক স্ট্যাটাসে তার ভাইয়ের প্রশংসা করে বলছেন, আমার থেকে শেখার তেমন কিছু না থাকলেও, আমার ভাইয়ের থেকে এ দেশের ছেলেরা শিখতে পারেন। মনে মনে হাসি আর ভাবি,অর্থ-বিত্ত-বিখ্যাত না হলেও ভাই আমার মানুষ হয়েছে। সত্যিকারের মানুষ।
তিনি আরো লিখেছেন, বয়সে আমার দেড় বছরের ছোট,কিন্তু পড়াশুনায় ৫ বছর পেছনে। আম্মা-আব্বু আমাকে ৫ বছর বয়সে প্রাইমারি স্কুলে সরাসরি ক্লাস টু তে ভর্তি করেন। আর তাকে ৫ বছরে প্লে-গ্রুপে, কিন্ডার-গার্ডেনে, ক্লাস টু উঠতে উঠতে তার বয়স।
আব্বু ১৯৯৮ সালে বিএডিসি থেকে গোল্ডেন-হ্যান্ডশেকে রিটায়ার করেন, আমি এস.এস.সি পাশ করেছি মাত্র, তুহিন ক্লাস সেভেনে পড়ে।
সরকারি সৎ চাকরিজীবীর ছোট্ট মহাসুখী পরিবার, অঢেল প্রাচুর্য নেই তবে আর্থিক সংকট কি জিনিষ তাও জীবনে কখনো দেখিনি। আব্বুর বেতনের টাকায় মহাসুখে খেয়ে-দেয়ে দুই ঈদে নতুন জামা-জুতো পরে কেটেছে আমাদের দুই ভাইবোনের জীবন।
আমি এইচ.এস.সি পাশ করার পর জানতে পারলাম আব্বুর রিটায়ারমেন্টের সব টাকা শেষ,আব্বুর চোখে রেটিনা সমস্যা তিনি দেখতে পান না ঠিক মতন। কোন কাজ বা রোজগার তিনি আর করতে পারবেন না।
সম্পদ বলতে সখিপুরে বাবার চাকরির টাকায় কেনা ২৫ কাঠা জায়গার উপর বিশাল এক বাড়ি। শাক-সবজী, ফলমুল, মুরগী-ডিম-গরুরদুধ-বাড়ী ভাড়া কিছুই লাগে না। সব নিজেদের, কিন্তু মাসিক কোন রোজগার নেই।
ততদিনে আমি ইডেনে অনার্স ভর্তি হয়ে গেছি,তুহিন ক্লাস নাইনে। পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। টিউশনি-কোচিং এ পড়ানো, কুরিয়ার-সার্ভিস অফিসে চাকরি। এসব করে ঢাকায় নিজে চলি, বাড়ীতে টাকা পাঠাই। সেই টাকায় ভাইয়ের লেখাপড়া, ইলেকট্রিসিটি বিল, অন্যান্য খরচ চলে।
তারপর শুরু হলো টিউশনির পাশাপাশি,অভিনয় করে উপার্জন। এভাবেই চলছিলো সংসার। ভাইয়ের পড়াশুনা শেষ হলো। তারপর, ২০০৯ এ আমার বিয়ে। ভাইয়ের চাকরী, বিয়ে। ২০০১-২০০৯ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি থেকে ২০০৯-২০২৫ এমন জীবন-যাপন করছে রুনা। যেখানে তার ১ টাকা সংসারের পেছনে খরচ করতে হয় না, না নিজের সংসার, না মা-ভাইয়ের সংসার।
দায়িত্ব ফুরালো রুনাবিবির। রয়ে গিয়েছিলো সখিপুরের ২৫ কাঠার বাড়িটা। ভাই বিক্রি করলো ধরুন ১০ টাকা। ভাগ করলো, তার ৫ টাকা রেখে আমার ৫ টাকা ব্যাংকে দিয়ে গেলো। সবাই তাকে বুঝায় তুমি সাড়ে সাত টাকা পেলে তোমার বোন পাবে আড়াই টাকা, এটাই দেশের নিয়ম।
তুমি তাকে ৫ টাকা কেনো দিচ্ছো। সে বলে "আমি দেশের নিয়ম মানি না"।
আর তোমার রোজগার ১ টাকা হলে, তোমার বোনের রোজগার ১০ টাকা, তোমার ১ টাকার সম্পত্তি থাকলে, তোমার বোনের আছে ১০ টাকার সম্পত্তি। কেনো তাকে বাবার জমির ভাগ অর্ধেক দিবা। আমার ভাই বলে, "রুনার আমার থেকে ১০ গুন বেশী আছে তাই অর্ধেক দিলাম, নইলে ওকে পুরাটা দিতাম"। বাপের ২৫ কাঠা জমি যে ২৫ বছর আগেই বেচে খেতে হয়নি, তার কারণ রুনা।
আব্বুর রিটায়ার করার পর কোন একটা আত্মীয়-স্বজন ১ টাকা দিয়ে সাহায্য করেনি, রুনা জীবনে ১ টা টাকা কারোর কাছে সাহায্য চায়নি, ধার করেনি। ১৮ বছর বয়স থেকে টিউশনি করে নিজে চলেছে-সংসার চালিয়েছে-আমাকে মানুষ করে। এইজন্যই তো এই জমি আছে, নইলে তো জমি কবেই বেচে খেতে হতো। আব্বুর জমির পুরাটা ওর ভাগ। ওর অনেক আছে তাই ওর ভাগ থেকে অর্ধেক আমি নিলাম।
আমি যা করেছি তা এই দেশের বহু মেয়ে হয়তো পরিবারের-ভাইয়ের জন্য করে। তবে আমার ভাই যা করলো গত সপ্তাহে, তা এই দেশের কয়জন ভাই বাপের সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে বোনদের সাথে করে, তা ঠিক জানিনা। আমার থেকে শেখার তেমন কিছু না থাকলেও, আমার ভাইয়ের থেকে এ দেশের ছেলেরা শিখতে পারেন। মনে মনে হাসি আর ভাবি,অর্থ-বিত্ত-বিখ্যাত না হলেও ভাই আমার মানুষ হয়েছে.. সত্যিকারের মানুষ।
রিফাত