![ভালোবাসা কোটি টাকা দিয়েও পাওয়া যায় না ভালোবাসা কোটি টাকা দিয়েও পাওয়া যায় না](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/1-2502121329.jpg)
সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা
জনপ্রিয় নজরুল সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা। সংগীতে বিশেষ অবদানস্বরূপ একুশে পদক ২০২৪ পাচ্ছেন তিনি। তবে এর আগে স্বৈরাচার সরকারের সময় তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন মাধ্যমে কালো তালিকায় ছিলেন। নতুন বাংলাদেশে এখন আবার সব কিছু নতুন উদ্যমেই শুরু করেছেন বলে জানান। আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারের নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি...
একুশে পদক পাচ্ছেন। আপনার অনুভূতি কেমন?
কিছু দিন ধরে শুনছিলাম। অনেকেই বলত আমি পাব। পরে আবার বলত, ‘আপা হবে না, লোক বদলে গেছে।’ আবার কেউ বলত, ‘আপনার তো পাওয়া উচিত ছিল।’ এরকম কয়েক বছর ধরেই হচ্ছে। দেখতে দেখতে বিশ্বাস এতই কমে গিয়েছিল যে ভাবতাম, শুনব-ই শুধু ভাগ্যে আর জুটবে না। অবশেষে আমি রাষ্ট্রীয় এ সম্মাননা পাচ্ছি। এরকম খবর পেলে সবারই ভালো লাগে। আমিও তাদের থেকে ব্যতিক্রম নই। এমন অবস্থায় সবাই বলেন দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। অবশ্যই বেড়ে যায়। করণীয়ও অনেক কিছু থাকে। যেগুলো নিয়ে এতকাল শুধু ভেবেছি। করতে পারব কিনা জানতাম না। এখন আত্মবিশ্বাস, সাহস বেড়ে গেছে।
সুসংবাটি শুনে প্রথম কার কথা মনে পড়েছিল?
ছেলে-মেয়ে, স্বামী, পরিবারের কথা। গানের ক্ষেত্রে প্রতিমুহূর্তে সহায়তা করেছেন আমার বাবা। যত্ন পেয়েছি মায়ের থেকে। প্রথমে বাবার চেহারাটা ভেসে উঠেছে, মায়ের যত্নের কথা মনে পড়েছে। আমার স্বামী সঙ্গেই ছিলেন।
মায়ের এই প্রাপ্তিলাভের সংবাদে সন্তানদের অনুভূতি কী?
আমার ছেলেকে ওর বন্ধুবান্ধব বলত, ‘তোমার মা এত জনপ্রিয় কিন্তু অ্যাওয়ার্ড পাননি। ওনার তো পাওয়ার কথা ছিল।’ ওর চোখ ছলছল করে উঠত। ও আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলত, ‘মা তুমি অনেক ইয়ং। তোমার এখনো সময় আছে। মেয়ে বলত, ‘তুমি পাবেই পাবে।’ অনেক সময় চোখ ছলছল করে ওর দিকে তাকিয়ে বলতাম, মাগো, তোমাদের আশা যেন এভাবেই থাকে। না পেলেও ভেঙো না।’
রাষ্ট্রীয় সম্মাননাকে অনেকে পূর্ণতা লাভের সঙ্গে তুলনা করেন। আপনি কীভাবে দেখেন?
যখন থেকে গান শুরু করেছি তখন থেকে আজ পর্যন্ত সকল শ্রেণির মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। যখন দেখি কেউ বলেন আমার মা, কেউ বলেন স্ত্রী, কেউ বলেন দাদি আপনার গান পছন্দ করেন, নতুন প্রজন্মের অনেকে প্রণাম করে বলে, আমি আপনার ফ্যান তখন মনে হয় এটাই বোধহয় বড় প্রাপ্তি। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে একটু হলেও ধরতে পেরেছি। ওরা যেভাবে আমাকে সম্মান করে সেটা অনেক বড় পাওয়া।
এমন কোনো ঘটনা আছে যেটি আপনাকে আনন্দ দেয়?
একটি ঘটনা বলি। ত্রিশালের দরিরামপুরের ঘটনা। এখনো মনে আছে ওখানকার ডিসি একবার পাগলের মতো আমার বাসায় ছুটে এসেছিলেন। বলছিলেন, ‘আমি এত রাতে আপনার বাসায় এসেছি। আমাকে বাঁচান।’ আমি বললাম, ‘মানে কী!’ তিনি বললেন, ‘লোকজন আমাকে এসে বলছে, তিন দিনের প্রোগ্রামে একদিন শুধু ফেরদৌস আরার গান রাখতে হবে। নইলে আপনার প্যান্ডেল ভেঙে দেব।’ আমি উনাকে বললাম, ‘অবশ্যই যাব।’ গিয়ে দেখলাম নিরাপত্তার জন্য তিন সারি করে র্যাব দাঁড়ানো।
গ্রামের বৃদ্ধ নারীরা কান্নাকাটি করছেন। এত রাতে কিন্তু গ্রামের নারীরা গান-বাজনা শুনতে বের হন না। অনেকে আমার দিকে ছুটে আসছিলেন। র্যাবের সদস্যরা বাধা দিচ্ছিলেন আর আমাকে বলছিলেন, ‘আপা তাড়াতাড়ি দোতালায় উঠুন। মানুষের ঢল ছুটলে চ্যাপ্টা হয়ে যাবেন।’ দেখলাম, সবাই আমার দিকে ছুটে আসছেন। দৌড়ে কোনোরকম ওপরের তলায় উঠলাম। তারপর থেকে মনে হতো, মানুষের ভালোবাসা আছে কিন্তু আমার ঝোলাটা খালি। আর পুরস্কার লাভের পর মনে হয় সাধারণ মানুষের ওই ভালোবাসা কোটি টাকা দিয়েও পাওয়া যায় না।
নতুন প্রজন্মের মধ্যে নজরুল প্রীতি কেমন দেখেন?
নতুন প্রজন্ম নজরুলের বাণীকে অন্তরে ধারণ করে। নতুনদের অনেকেই এখন নিয়মিত নজরুল সংগীত করছে। অনেক আধুনিক গানের শিল্পীও নজরুল গান করছেন। তবে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নজরুলের গান নিয়ে আরও অনেক কিছু করা সম্ভব।