![ছায়ানটের নৃত্য উৎসব শুরু ছায়ানটের নৃত্য উৎসব শুরু](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/4-2502071651.jpg)
.
যারা নাচ দেখতে পছন্দ করেন তাদের জন্য আয়োজনটি ছিল চমৎকার। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে উপস্থাপিত হলো অনিন্দ্য সুন্দর নৃত্যশৈলী। হাত ও পায়ের কারুকাজের সঙ্গে চোখ কিংবা মুখের অভিব্যক্তিময় নাচের উপস্থাপনে দর্শকের হৃদয় রাঙালেন একঝাঁক নৃত্যশিল্পী। রাগাশ্রিত সুরের তাল ও লয়ের খেলায় ছন্দোময় সেসব অঙ্গ সঞ্চালন প্রশান্তির পরশ ছড়িয়ে দিল নৃত্যানুরাগীদের নয়নে। সেই সুবাদে সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় সুন্দরতম সময় কেটেছে এই শহরের শিল্পরসিকদের। আর শাস্ত্রীয় ধারার নাচের বৈচিত্র্যময় এই আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হলো ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে। এভাবেই সুন্দরের ছবি এঁকে শুক্রবার থেকে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী ছায়ানটের নৃত্য উৎসব। মণিপুরি, ভরতনাট্যম, ওড়িশি ও কত্থকের সম্মিলনে একক ও দলীয় পরিবেশনায় সজ্জিত হয়েছে এই শিল্পায়োজন। হালকা শীতল সন্ধ্যায় মণিপুরি ধারার নাচের আশ্রয়ে উৎসবের সূচনা হয়। রাধানর্তন শিরোনামের দলীয় পরিবেশনাটি উপস্থাপন করে ছায়ানটের শিল্পীরা। লাস্য আঙ্গিকের এই নাচের মাধ্যমে একইসঙ্গে শ্রী রাধার রূপ-লাবণ্যের সঙ্গে অনবদ্য অঙ্গভঙ্গিমার প্রকাশ ঘটে। রাজধানীর নানা প্রান্তের নৃত্যপ্রেমীদের উপস্থিতিতে প্রথম দিনের উৎসবে মিলনায়তন ছিল পরিপূর্ণ।
প্রথম পরিবেশনা শেষে এ উৎসব নিয়ে সংক্ষিপ্ত কথনে অংশ নেন ডা. সারওয়ার আলী। স্বাগত কথনে ছায়ানটের এই নির্বাহী সভাপতি বলেন, এদেশে শাস্ত্রীয় ধারার নৃত্যশিল্পের বিকাশে ২০১৩ সাল থেকে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে বিশ্বায়নের যুগে প্রতিকারহীন সংস্কৃতিবিনাশী প্রচারণার ফলে বর্তমানে সংস্কৃতি ও সংগীতের রুচি অনেক বদলে গেছে। তা সত্ত্বেও এই অস্থির সময়ে শাস্ত্রীয় নৃত্য উপভোগের জন্য আজ অনেকেই উপস্থিত হয়েছেন। সেইসব শিল্পানুরাগীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ নৃত্যকে দেহের সংগীত বলে মনে করতেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, শিল্প-সংস্কৃতির নানামুখী প্রকাশের মধ্যে নৃত্য হচ্ছে সবচেয়ে দুরূহতম মাধ্যম। এই উপমহাদেশে একসময় সুরের ভিত্তিতে কেবল অঙ্গ সঞ্চালনার মাধ্যমে শুধু ভাব নয় কাহিনীকে প্রকাশের বিশিষ্ট রূপটি নৃত্যের মাঝে উন্মোচিত হয়েছে। অবশ্য এ কথাও স্বীকার করতে হবে যে বাঙালির আপন দলীয় নৃত্য বলতে যা বোঝায় সেটি খুব একটা লক্ষণীয় নয়। কিন্তু উপমহাদেশের অন্তত আটটি ধারার শাস্ত্রীয় সংগীত আমরা রপ্ত করেছি। পূর্ব ভারত থেকে মধ্য প্রদেশ হয়ে এসব ধারার প্রচলন ঘটেছে। শাস্ত্রীয় সুরাশ্রিত সেসব নৃত্যের কয়েকটি রূপ নিয়ে সাজানো হয়েছে দুইদিনের উৎসব। ছায়ানট ছাড়া আটটি দল এতে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে একটি রয়েছে ঢাকার বাইরের। থাকছে ১২টি একক নৃত্য। সব মিলিয়ে বলা যায়, গত তিন দশকে এদেশে নৃত্যশিল্পের যে বিকাশ ঘটেছে তার প্রকাশ লক্ষ্য করা যাবে এ উৎসবে। এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা বাংলা সংস্কৃতিকে অবগাহন করতে চাই।
মণিপুরি ধারার পরিবেশনায় রাধারূপ বর্ণন শীর্ষক নৃত্য পরিবেশন করেন তামান্না রহমান। সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা পরিবেশিত নাচের শিরোনাম ছিল ননী চুরি। ফারহানা আহমেদ পরিবেশন করেন লাস্য তা-ব শীর্ষক নৃত্য।
জুয়েইরিয়া মৌলির পরিবেশনার মাধ্যমে ভরতনাট্যম ধারার নাচের উপস্থাপনা শুরু হয়। এই শিল্পীর পরিবেশিত নাচের শিরোনাম ছিল দেবীস্তুতি। রুদ্র তা-ব শীর্ষক নৃত্য পরিবেশন করেন প্রান্তিক দেব। নওগাঁর লাবীবা আলমের পরিবেশনাটির শিরোনাম ছিল কীর্তানাম। এরপর তিল্লানা শীর্ষক নাচ করে ছায়ানটের শিল্পীরা।
ওড়িশি ধারার নাচে আফিয়া ইবনাত পরিবেশন করেন অভিনয় শীর্ষক নৃত্য। হংসধ্বনিপল্লবী শীর্ষক দলীয় নাচ করে নৃত্যছন্দ। কত্থক আঙ্গিকের মুনমুন আহমেদের নাচের মুদ্রায় উঠে আসে শিব বন্দনা। এ ছাড়া এই ধারায় নাচ করেন এস এম হাসান ইশতিয়াক। দুইটি দলীয় পরিবেশনা উপস্থাপন করে কাথ্যাকিয়া-দ্য সেন্টার অব আর্টস ও নৃত্যাঞ্চলের শিল্পীবৃন্দ।