ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সমতার মন্ত্রে প্রাণের উচ্ছ্বাসে শুরু উদীচীর সম্মেলন 

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:০২, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সমতার মন্ত্রে প্রাণের উচ্ছ্বাসে শুরু উদীচীর সম্মেলন 

.

শীতল দিনের চিকচিকে রোদ্দুরে বয়ে যায় প্রাণের উচ্ছ্বাস। গড়ে ওঠে এক আত্মার সঙ্গে অপর আত্মার বন্ধন। সেই বন্ধনে উচ্চারিত হয় সমতার কথা। ব্যক্ত হয় সাম্যের বাণী।  সংগঠক থেকে সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রাণের স্পন্দনে  মুখরিত হয়ে উঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।  ভাষাশহীদদের স্মৃতিধন্য আঙিনায় বিরাজমান সেই মুখরতার মাঝে মিশে থাকে অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার প্রত্যয়। নাচের নান্দনিকতা কিংবা গানের  সুরেও প্রকাশিত হয় সমতার স্বদেশ গড়ার লড়াই অব্যাহত রাখার প্রত্যয়। এভাবেই দ্রোহের সঙ্গে শিল্পের সম্মিলনে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো   বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন। তিন দিনব্যাপী এবারের সম্মেলনের স্লোগান ‘আমরা তো লড়ছি সমতার মন্ত্রে, থামব না কখনোই শত ষড়যন্ত্রে’। আয়োজনের শুরুতে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সম্মেলনের উদ্বোধক লীনা চক্রবর্তী। সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। এরপর নেতৃবৃন্দ ও অতিথিরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ঢাক-ঢোল-কাঁসি বাদনের সঙ্গে আনন্দে উদ্বেলিত হন সারাদেশ থেকে আসা উদীচীর হাজারো শিল্পী-কর্মী। এরপর একটি বর্ণিল শোভাযাত্রা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ফিরে আসে। উদ্বোধনী পর্ব সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন লীনা চক্রবর্তী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাফিউর রাব্বি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের শিল্পীদের  পরিবেশিত গীতি-নাট্যালেখ্য ‘প্রতারিত চিরকাল’ দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। গীতি-নাট্যালেখ্যটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন  কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম। পরিবেশনার মূল ভাবনাটি ছিল এমন- মানুষ বারবারই মুক্তির জন্য লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে, সবকিছু খুইয়েছে, কিন্তু তারপরও মুক্তি মেলেনি। বারবারই প্রতারিত হয়েছে তারা। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম বা চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান, সব ক্ষেত্রেই লাভের গুড় খেয়ে গেছে অন্যরা। সাধারণ মানুষের ভাগ্য আর পাল্টায়নি। প্রকৃত মুক্তি পেতে হলে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী জনতার সঙ্গে সকল শ্রেণির মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার।
উদ্বোধনী পরিবেশনার পর সম্মেলনের সম্মেলন সংগীত পরিবেশন করেন শাওন কুমার রায়। গানটি লিখেছেন কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি প্রবীর সরদার। সংগীতায়োজন ও কণ্ঠ দিয়েছেন শাওন কুমার রায়। প্রথম দিনের পরিবেশনায় আরও ছিল বিভিন্ন বিভাগ  থেকে উদীচীর সেরা জেলাগুলোর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এদিন সমবেত গণসংগীত পরিবেশন করে উদীচী মাদারীপুর ও চট্টগ্রাম জেলা সংসদ। গীতিআলেখ্য পরিবেশন করে উদীচী নারায়ণগঞ্জ জেলা সংসদ। উদীচী দিনাজপুর জেলা সংসদের শিল্পীরা পরিবেশন করেন নৃত্যনাট্য ‘নকশীকাঁথার মাঠ’। ছিল সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের দলীয় পরিবেশনা। এ ছাড়া, একক সংগীত পরিবেশন করেন মায়েশা সুলতানা ঊর্বি। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন সুপ্রভা সেবতী। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব সঞ্চালনা করেন শিখা সেন গুপ্তা ও শাওন কুমার রায়। 
আজ শুক্রবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সকাল ৯টায় শিশু একাডেমি মিলনায়তনে শুরু হবে সম্মেলনের সাংগঠনিক বা কাউন্সিল অধিবেশন। দিনব্যাপী নানা সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার পর সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। উদীচী নৃত্য বিভাগের শিল্পীদের দলীয় পরিবেশনা দিয়ে শুরু হওয়া এ পর্বে থাকবে উদীচী যশোর জেলা সংসদের পরিবেশনায় গীতি আলেখ্য। সমবেত বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করবেন উদীচী রাজশাহী জেলার শিল্পীরা। দলীয় গণসংগীত নিয়ে মঞ্চে আসেন উদীচী সিলেট জেলা সংসদের শিল্পীরা। একক সংগীত পরিবেশন করবেন হাবিবুল আলম, শাওন কুমার রায় ও মীর সাখাওয়াত। একক আবৃত্তিতে থাকবেন বেলায়েত হোসেন ও  সৈয়দ ফয়সল  আহমদ। থাকবে উদীচী আবৃত্তি বিভাগের বাচিক শিল্পীদের বৃন্দ পরিবেশনা। শনিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে সম্মেলনের সমাপনী দিনের কার্যক্রম। সারাদিন নানা সাংগঠনিক পর্ব শেষে পরবর্তী দুই বছরের জন্য নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন। 
১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গান-নাচ-কবিতা-নাটক-চলচ্চিত্রের মতো সৃজনশীল মাধ্যমকে হাতিয়ার করে সমাজের নানা অসঙ্গতি, শোষণ-বঞ্চনা-অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছে উদীচী। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষা ও নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রতি দুই বছর পরপর জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করে উদীচী। 

 

×