ছবিঃ সংগৃহীত।
খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের এক অনন্য নাম। তার কণ্ঠের মাধুর্য এবং সুরেলা গায়কীর জন্য তিনি বাংলা সঙ্গীতের এক আইকন হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাবিনা ইয়াসমিন অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন, বিশেষত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, এবং সংগীতাঙ্গনে তার অবদান অনস্বীকার্য।
তার অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে “জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো”, “আমি আর একটিবার”, “আজ বসন্তে”, “ভালোবেসে কি মনে” এবং “পাখি দেখলে” এর মতো কালজয়ী গান রয়েছে। তার কণ্ঠে যে সুর, আবেগ এবং অনুভূতি থাকে, তা শ্রোতাদের হৃদয়ে দীর্ঘকাল ধরে গেঁথে থাকে।
সাবিনা ইয়াসমিন তার গায়কী দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গীতকেও সমৃদ্ধ করেছেন, বিশেষ করে ১৯৭০-২০০০ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু সফল সিনেমায় তার গান ছিল। তার কণ্ঠের মাধুর্য এবং সুরের গভীরতা তাকে সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরকাল স্মরণীয় করে রেখেছে।
তবে তার সঙ্গীত ক্যারিয়ার শুধু গান গাওয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়; তিনি বাংলাদেশের সঙ্গীত সংস্কৃতি এবং শিল্পী সমাজের প্রতি তার অবদান এবং প্রভাব দিয়ে অগণিত ভক্তের কাছে শ্রদ্ধেয়।
তিনি ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার সংগীত ক্যারিয়ার শুরু হয় অত্যন্ত তরুণ বয়সেই। সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া দেশাত্মবোধক গান, রোমান্টিক গান, আধুনিক গান এবং ভজনসহ নানা ধরনের সঙ্গীতে তার অবদান অনেক। তার গানে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল "জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো", যা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করার মতো একটি গান ছিল।
সাবিনা ইয়াসমিনের গানের ধারায় শৃঙ্খলা, সুরের গভীরতা এবং অভিব্যক্তির এক বিশেষ ধারা রয়েছে, যা তার গায়কীকে অনন্য করে তোলে। তিনি বাংলাদেশের সিনেমা, বিশেষত ১৯৭০-এর দশক থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু সুপারহিট সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।
তবে তার জীবনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ক্যানসারের সাথে তার সংগ্রাম। ২০০৭ সালে প্রথমবার ক্যানসার ধরা পড়লে তিনি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন এবং আবারও গানে ফিরেন। তবে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার শরীরে ক্যানসার ফিরে আসে এবং তাকে দীর্ঘ চিকিৎসা নিতে হয়। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার পর তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেন এবং গানে ফেরার প্রস্তুতি নেন।
তার ক্যারিয়ারে ১০,০০০-এরও বেশি গান গেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন, এবং বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে তার অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার অসীম ত্যাগ, কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং সাহসিকতা সকলের কাছে প্রশংসিত।
মুহাম্মদ ওমর ফারুক