ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১

শেক্সপিয়ারের কালজয়ী সৃষ্টি ‘জুলিয়াস সিজার’ নাটকের মঞ্চায়ন

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:২৩, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

শেক্সপিয়ারের কালজয়ী সৃষ্টি ‘জুলিয়াস সিজার’ নাটকের মঞ্চায়ন

.

বিশ্বখ্যাত নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ার। তার কালজয়ী সৃষ্টি ‘জুলিয়াস সিজার’। বিখ্যাত রোমান সেনাপতি জুলিয়াস সিজারকে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে বিয়োগান্তক নাটকটি। যে নাটকের পরতে পরতে মিশে আছে আনুগত্য, খুন, রাজনীতি ও ষড়যন্ত্রের কাহিনী। অধ্যাপক আবদুস সেলিমের অনুবাদে প্রযোজনাটি মঞ্চে এনেছে নাট্যদল নাট্যতীর্থ। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যতীর্থের দলপ্রধান তপন হাফিজ। শুক্রববার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। জুলিয়াস সিজারের যুদ্ধ জয়ের সমান্তরালে ব্রুটাস এবং অন্যদের সিজারকে হত্যার ষড়যন্ত্র উঠে এসেছে কাহিনীতে। অ্যান্টোনির ভাষণের মাধ্যমে রোমের মানুষের সত্য উপলব্ধি, অতঃপর যুদ্ধ এবং চক্রান্তকারীদের পরাজয়। এভাবেই নাটকের ঘটনাপ্রবাহ এগিয়ে যায়। এই নাটকের মুখ্য চরিত্র সিজার, ব্রুটাস এবং অ্যান্টোনি।  রোমের নেতা জুলিয়াস সিজার যুদ্ধ জয় করে  দেশে ফিরেছেন। চারদিকে চলছে উৎসব। সিজারও উৎসবে যোগ দিতে চলেছেন। সঙ্গে বন্ধু অ্যান্টোনি। হঠাৎ পথের মাঝে এক দৈবজ্ঞ এগিয়ে এসে সিজারকে বলে আগামী ১৫ মার্চ আপনার সতর্ক থাকার দিন। সিজার দৈবজ্ঞের কথার গুরুত্ব দেন না। কিন্তু দেশের একদল অভিজাত মানুষ তার এই খ্যাতি ও গৌরবে ঈর্ষান্বিত  হয়ে ওঠে। তারা সিজারের প্রিয় বন্ধু ব্রুটাসকে উত্তেজিত করতে থাকে। সিজারের এই অপ্রতিহত ক্ষমতা যেমন করেই হোক খর্ব করতেই হবে। না হলে একদিন সিজার সকলকে ক্রীতদাসে পরিণত করবে। কিন্তু ব্রুটাস কোনো ষড়যন্ত্রে যোগ দিতে চাইছিলেন না। ষড়যন্ত্রকারীর দল নানাভাবে ব্রুটাসকে প্ররোচিত করতে থাকে। মানসিক দিক থেকে দুর্বল ব্রুটাস শেষ পর্যন্ত অসহায়ের মতো ষড়যন্ত্রকারীদের ইচ্ছার কাছেই আত্মসমর্পণ করেন। ১৫ মার্চ সিনেটের অধিবেশনের দিন। সকল সদস্য সেই দিন সিনেটে উপস্থিত থাকবে। কিন্তু আগের রাতে বারবার দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন সিজারের স্ত্রী কালপুর্নিয়া। তার নিষেধ সত্ত্বেও বীর সিজার সিনেটে গেলে সুযোগ বুঝে বিদ্রোহীর দল একের পর এক ছোরার আঘাতে বিদ্ধ করে সিজারের দেহ। শেষ আঘাত করে ব্রুটাস। প্রিয় বন্ধুকে বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখে আর্তনাদ করে ওঠে সিজার, ব্রুটাস তুমিও! সিজারের মৃত্যুতে উল্লাসে ফেটে পড়ে ষড়যন্ত্রকারীর দল। শুধু একজন প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে, সে অ্যান্টোনি। প্রকাশ্য রাজপথে দাঁড়িয়ে জনসাধারণের কাছে সিজারকে হত্যার কারণ বিশ্লেষণ করে ব্রুটাস। তার বক্তব্যে মোহগ্রস্ত  হয়ে পড়ে জনগণ। তারা ব্রুটাসের জয়ধ্বনি করে ভুলে যায় সিজারের কথা। ব্রুটাস চলে যেতেই বক্তৃতা শুরু করে অ্যান্টোনি। সে সুকৌশলে সিজারের প্রতি জনগণের ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে। তাদের কাছে প্রমাণ করে সিজার একজন মহান মানুষ। তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে ব্রুটাস ও অন্যরা। সমস্ত মানুষ ক্ষিপ্ত  হয়ে ওঠে। ষড়যন্ত্রকারীর দল প্রাণভয়ে দেশত্যাগ করে। কিন্তু যুদ্ধে সকলে নিহত হয়। জুলিয়াস সিজার নাটকে ব্রুটাস হত্যাকারী বিশ্বাসঘাতক হলেও তার অন্তর্র্ন্দ্বন্দ্ব মানসিক দুর্বলতা ও অন্তিম পরিণতি দর্শকের মনকে বিষণ্ণ করে তোলে।
প্রযোজনাটির  মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন ফয়েজ জহির। আবহ সংগীত পরিকল্পনা করেছেন পরিমল মজুমদার। পোশাক পরিকল্পনা করেছেন আইরিন পারভীন লোপা। কোরিওগ্রাফি করেছেন সামি।

×