.
শিল্প ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের জন্য কেটেছে সুন্দরতম এক দিন। শুক্রবার ছুটির দিনে বহুমাত্রিক শিল্পিত পরিবেশনায় মুখরিত ছিল রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। শহর ঢাকার নানা প্রান্তজুড়ে হয়েছে বহুমাত্রিক অনুষ্ঠান। সেই সুবাদে সংস্কৃতিপ্রেমীরা শামিল হয়েছেন সেসব আয়োজনে। কেউবা ছুটে গিয়েছেন ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত রবীন্দ্র সৃষ্টির নির্যাসময় গানের আসরে। নাট্যপ্রেমীরা উপভোগ করেছেন শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা ও মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে মঞ্চস্থ নাটকসমূহ। চারুশিল্পের অনুরাগীরা ঢুঁ মেরেছেন ধানমন্ডির সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে। এই প্রদর্শনালয়ে তরুণ চিত্রশিল্পী জান্নাত কেয়া চিত্রিত ঢেউ-টু শীর্ষক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর সূচনা হয় শুক্রবার। শুধু কি তাই!
গানে গানে এদিন প্রকৃতিবিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে কাওরান বাজারের পান্থকুঞ্জ জনউদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়েছে পান্থকুঞ্জে গাইবে পাখি শীর্ষক সংগীতানুষ্ঠান।
নাট্যমঞ্চের নিবেদিতপ্রাণ এক মঞ্চশিল্পীর নাম ইশরাত নিশাত। থিয়েটার অঙ্গনে দ্রোহী কন্যা হিসেবে রয়েছে তার পৃথক পরিচিতি। বিদ্রোহী কণ্ঠস্বরের অধিকারী প্রয়াত এই অভিনেত্রী ও নির্দেশককে এদিন সন্ধ্যায় স্মরণ করেছে নাট্যদল দেশ নাটক। নাট্যদলটি প্রযোজিত জলবাসর শিরোনামের নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে ইশরাত নিশাতের প্রতি ভালোবাসা ও অনুরাগ প্রকাশ করা হয়। মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে মঞ্চস্থ নাটকটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন মাসুম রেজা। চান্নিপসর ও ডুবুদহ গ্রামের তিন বানিয়াকন্যা ও ছয় নদীর গল্প উঠে এসেছে জলবাসর নাটকে। যে গল্প শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে পুরো পৃথিবীর গল্প। আর সেই পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার নীরব দায় পালন করে তিন বানিয়াকন্যা হয়ে ওঠে প্রকৃতিরই অংশ। মানুষ তার চারপাশের জল, জঙ্গল, মাটি, গিরিশৃঙ্গ ধ্বংস করতে করতে কোন বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেই আখ্যানই বিম্বিত হয়েছে জলবাসরের পরতে পরতে।
এদিকে মাঘের শীতল সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার দুইটি নাট্যমঞ্চেও ছিল নাটকের প্রদর্শনী। নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হয়েছে নাট্যদল প্রাচ্যনাটের দর্শকনন্দিত প্রযোজনা ‘অচলায়তন’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন আজাদ আবুল কালাম। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে থিয়েটার আর্ট ইউনিটের ‘বলয়’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। দলের ৪০তম প্রযোজনাটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন মোকাদ্দেম মোরশেদ।
এদিন বিকেলে কাওরান বাজারের পান্থকুঞ্জ জনউদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়েছে পান্থকুঞ্জে গাইবে পাখি শিরোনামের সংগীতানুষ্ঠান। হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ ধ্বংস করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাতিলের দাবিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা প্রকল্প। প্রকৃতি ধ্বংসের প্রতিবাদী এ আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করে অরূপ রাহী, দ্বীপ রায়, কুশল, লিসান, রূপকল্পা, কেপি রাজিবসহ একঝাঁক শিল্পী ও কয়েকটি ব্যান্ডদল।
রাজধানীর সংগীতানুরাগীরা এদিন হাজির হয়েছিলেন ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে। এখানে চলমান জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের ৪৩তম বার্ষিক অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন ছিল শুক্রবার। এই অধিবেশনের সকালে গান শুনিয়েছেন আমিতা দেবনাথ, ঊর্মি রায় বর্ণা, শুশান্ত রায়, মানষী সাধু, সন্ধা অধিকারী, অর্চনা রায়, সঞ্চিতা রাখী, শিবেশ কীর্তনিয়া, রুমঝুম বিজয় রিসিল, রিনা বিশ্বাস, মিতা শর্মা, মীরা ম-ল, অমেয়া প্রতীতি, নির্ঝর চৌধুরী, প্রিয়াংকা রায় চৈতি ও রাজিন মুস্তাফা। নৃত্য পরিবেশন করেন বেনজির সালাম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন কৃষ্টি হেফাজ ও জহিরুল হক। বিকেলে প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারাদেশ থেকে আগত বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। সভাপতিত্ব করেন মফিদুল হক।
সান্ধ্য অধিবেশনে সংগীত পরিবেশন করেন তানজিনা পারভিন তমা, সেজুতি বড়ুয়া, কাঞ্চন মোস্তাফা, সুতপা সাহা, ইফফাত আরা দেওয়ান, অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত, সত্যম কুমার দেবনাথ, ফারহিন খান জয়িতা, দুলাল পোদ্দার, ছায়া কর্মকার, মিতা পাল, শহীদ হোসেন টিটু, স্বাতী বিশ্বাস, স্টিফ তূর্য বাড়ৈ, মকবুল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য, মাকসুরা আক্তার, দীপ্র নিশান্ত, তাহমিদ ওয়াসিফ রিভু, কাঁকন দাশ, আব্দুল ওয়াদুদ, চঞ্চল বড়াল, বাবুল চক্রবর্তী, মারুফা মঞ্জুরী সৌমি, অভয়া দত্ত, খায়রুল আনাম শাকিল, ইয়াকুব আলি খান, শারমিন সাথি ইসলাম, ইয়াসমিন মুস্তারী ও অনুস্কা চক্রবর্তী। আবৃত্তি উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞা লাবণী। সম্মেলক সংগীত পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সিরাজগঞ্জ শাখা।
আজ শনিবার বিকেল চারটায় অধিবেশনের সমাপনী আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। প্রয়াত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ারকে গুণী সম্মাননা প্রদান করা হবে। সন্ধ্যায় থাকবে গান, নাচ ও আবৃত্তির সমন্বিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।