বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে অভিনেত্রী নিপুণ আক্তারকে। জালিয়াতির অভিযোগে অভিনেত্রীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জানা গেছে, অনৈতিকভাবে সমিতির প্যাড ব্যবহার করে মনগড়া বিবৃতি প্রদান করার অভিযোগে সম্প্রতি কার্যনির্বাহী পরিষদের মিটিংয়ে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
বহিষ্কারের পরপরই আবারো আলোচনায় নিপুণ। নিপুণ আক্তার পেশায় চিত্রনায়িকা। তবে এই পরিচয় ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন শেখ ফজলুল করিম সেলিমের প্রেমিকা। তাদের অবৈধ মেলামেশার বিষয়টি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ছিল ওপেন সিক্রেট। এমনকি সহকর্মীদের মধ্যেও চলত রসালো গল্প। তবে মাথার উপর শেখ পরিবারের সদস্য সেলিমের ছাতা থাকায় কেউ টু শব্দও করতে পারেননি। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিপুণ হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য।
নিপুণের প্রভাবের উৎস কী? নেপথ্যে থেকে বিষয়টি অনেকেরই জানা। তবে মুখ খোলার সাহস দেখাননি কেউ। কিন্তু নিপুণের পেছনে যে বড় শক্তি আছে, এ কথা বারবারই বলেছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান, ডিপজল সহ আরো অনেকে।
নায়ক জায়েদ খান এ বিষয়ে বলেন,নিপুণের পেছনে কোনো শক্তি আছে? অদৃশ্য শক্তি এর আরও অন্য কারও নাই। নিপুণের শক্তির কারণে এগুলো হচ্ছে অনেক কিছু। নায়িকা অনেক কিছু বলতে পারি না। খোলাখুলি বলে দেই, অনেক কিছুই বের হয়ে আসবে।
এ বিষয়ে একজন বলেন, সেলিম সাহেবের নাম বলে আমাকে ডিসি হাবিব স্যারের ওখানে পাঠান নিপুণ।
নিপুণের ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরেও শেখ সেলিমের সঙ্গে একাধিক ছবি পাওয়া গেছে। নিপুণের বাড়িতেও একাধিক পারিবারিক অনুষ্ঠানেই অংশগ্রহণ করেছিলেন শেখ সেলিম। নিপুণের মেয়ের জন্মদিনেও একটি ছবিতে শেখ সেলিমকে দেখা গেছে নিপুণ ও তাঁর মেয়ের পাশে। হাতে সিনেমার কাজ না থাকার পরেও খুব অল্প সময়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন নিপুণ আক্তার। ২০১৬ সালে রাজধানীর বনানীতে টিউলিপ নেইলস অ্যান্ড স্পা নামের একটি পার্লার খুলে বসেন তিনি। উদ্বোধন করেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেখ সেলিম। অনেকেই বলেন, এই পার্লার টি শেখ সেলিম উপহার হিসেবে দিয়েছেন নিপুণকে। শুধু পার্লার নয়, নিত্য নতুন গাড়ি বিদেশে ভ্রমণ, মেয়েকে বিদেশে পড়ানো সব কিছুই নাকি আসতো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাত দিয়ে। বছরের বেশিরভাগ সময় কাটাতেন বিদেশের মাটিতে। শেখ সেলিমের ভালোবাসায় আশীর্বাদে অবৈধ প্রস্তাব বিস্তার করেছিলেন নিপুণ। সরকারি বেশ কয়েক দপ্তরে ছিল নিপুণের রাজত্ব। নিপুণের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানান, রাজউক থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই নায়িকা। এছাড়াও সংশ্লিষ্টরা জানান, ড্রইং অ্যাপ্রুভাল এর ক্ষেত্রে আটতলা ভবনের জন্য বিশ থেকে পঞ্চাশ লাখ, দশ তলার জন্য পঞ্চাশ লাখ টাকা নিতেন নিপুণ। এছাড়াও নিপুণকে নিয়ে তার প্রাক্তন স্বামী অপু বলেন, নিপুণ মূলত শেখ সেলিমের রক্ষিতা। এসব কারণেই দুহাজার তিন সালে নিপুণ আমাকে ছেড়ে চলে যায়। পরবর্তীতে আমি তাকে ডিভোর্স দেই।
এ বিষয়ে তাঁর প্রাক্তন স্বামী বলেন, ও ছিল রক্ষিতা। তার আর এই অপকর্মের কোনো শেষই নাই এবং সে শেখ সেলিমের ভয় দেখাইয়া আমাকে ছেড়ে যেতে পারতাম না। বলেছেন, শেখ সেলিমের খালি ভয় দেখায়।
এফডিসিতে গিয়েও নিপুণকে বিশাল প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দিয়েছিলেন শেখ সেলিম। আর এ কারণেই হেরেও হারেন না নিপুণ। ২০১০ সালের আটাশে জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের কাছে সাধারণ সম্পাদক পদে হেরে যান নিপুণ। তারপর প্রভাব খাটিয়ে নানা খেলা দেখান তিনি।
পরবর্তীতে বিজয়ী প্রার্থী জায়েদ খানকে অযোগ্য ঘোষণা করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির আপিল বোর্ড। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান নিপুণ আক্তার। কোনো নিয়ম কানুনের বালাই নেই। শেখ সেলিমের নির্দেশেই এমনটি হয়েছিল বলে জানিয়েছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ গত আটাশে জানুয়ারি নির্বাচনে খল অভিনেতা ডিপজলের কাছে পরাজিত হন নিপুণ। সেখানেও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন এই নায়িকা। ওই সময় খল অভিনেতা ডিপজল বলেছিলেন, নিপুণের পেছনে অবশ্যই বড় শক্তি আছে। ওই সময় নিপুণের অর্থনৈতিক বাণিজ্য নিয়েও কথা বলেন ডিপজল। নিপুণের মূল ব্যবসাটা কী? প্রশ্ন রেখে ডিপজল বলেন, তো ওনার ব্যবসাটা কি? আপনার হাতায় দেখেন না কি? উনি পার্লার দিয়েছেন শুনলাম। কী পার্লার ওইটা? একদিন যান ঢোকেন। গিয়ে দেখেন ওটা কী পার্লার। আপনার? বুঝতে পারবেন।
এসব বিষয়ে। বক্তব্যের জন্য বারবার চেষ্টা করেও নিপুণ আক্তারকে পাওয়া যায়নি।
ফুয়াদ