স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়
ছোটবেলা থেকে দেখেছি, বাবা একটু বেশি মনোযোগ দিয়ে কথা বললে চোখটা কেমন অন্য রকম হয়ে যেত বা অন্যমনস্ক হয়ে রইলে চোখটা সেই অন্য রকম। আনমনে কথা বললেও দেখতাম চোখের মনিটা কেমন যেন ফট করে আলাদা হয়ে যেত। হটাৎ ডাকলে যদি তাকায়, সেই চোখ টা আবার আলাদা। একটু বড় হতে বুঝলাম একে বলে ~ লক্ষ্মী ট্যারা। চাহনিটা খালি একটু খানি, একটু খানি অন্য রকম। বাবা কে কী মিষ্টি লাগত। “ ওই রকম করো না চোখটা “ এটা বললেই বাবা বলত, আরে ওরম ইচ্ছে করলেই হয়না, করা যায় না।
“ট্যারা হব দেখবি ?”
সে ট্যারা তো সবাই হতে পারে। নাকের ডগায় আঙুল রেখে, বা ভুরু যুগলের মধ্যে আঙুল রেখে তাকানোর চেষ্টা করলেই ট্যারা। কিন্তু লক্ষ্মী ট্যারা ব্যাপার টা স্পেশাল।
বাবা চলে যাওয়ার পর, অনেক রাত অব্দি বোনের সঙ্গে গল্প করলে বোন মাঝে মাঝে বলত, এই দিদি চোখ টা ঠিক কর, বাবার মতন হয়ে গেছে। বা বলত, দিদি পুরো বাবার মতন তাকালি, বা বলত, পুরো বাবা মনে হলো চোখটা, ওরম করে তাকাস না আহারে , এই দিদি চোখটা ঠিক কর। আমি পাতা ফেলে, চোখ পিটপিট করে ঠিক করে নিতাম আর মনে মনে স্বস্তির হাসি হাসতাম।
আমরা তো সবাই চাই, এটাই আমাদের সুপ্ত বাসনা, আমরা যেন আমাদের বাবা মায়ের মতন হই। তাদের সবটা যেন আমাদের মধ্যে থেকে যায়। ঠিক যেমন আমি চাই, আমার আমিটা যেন আমার মেয়ের মধ্যে আশ্রয় পায়।
গতকাল ফ্লাইট এ আসার সময় হটাৎ দেখি সূর্যটা অস্ত যাওয়ার আগে রমরমিয়ে জ্বলে উঠেছে, সারা আকাশ কমলা রং এ উজ্জল আর সেই এক ফালি রোদ এসে আমার চোখ টা প্রায় ঝলসে দিচ্ছে। এত সুন্দর আলো অনেকদিন পর দেখলাম। ভাবলাম, সূর্যের এত কাছে আছি কটা ছবি তুলি, নিজস্বি।
ঠিক দুটো তুললাম।
ওমা ফটো টায় তাকিয়ে দেখি সেই বাবার মতন হয়ে আছে চোখটা। সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকটা তুললাম যাতে বাবার মতন হয়ে থাকতে থাকতে আরও কটা ছবি থেকে যায়। এক ফোটা নড়িনি চড়িনি, চোখের পাতাও ফেলিনি। হলো না। আর একটাও হলো না।
প্লেনটা নামা অব্দি ভাবলাম, এই আকাশে বাবা থাকে, মেঘের মধ্যে, সূর্যের কিরণের মধ্যে। আমিও আছি দেখে বোধহয় টুক করে এসে জানান দিয়ে গেল।
এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয়ে আলোয়ে…
শহীদ