জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কারজয়ী নির্মাতা ও শিল্পীবৃন্দ
দেশ-বিদেশের সিনেমা দেখার আয়োজনের সূচনা হয়েছিল ১১ জানুয়ারি। নয় দিনব্যাপী সেই শিল্প সফর শেষ হলো রবিবার। শিল্পিত সেই সফরে রাজধানীর পাঁচ ভেন্যুতে দর্শকরা দেখেছেন দেশ-বিদেশের বিচিত্র বিষয়ের ছবি। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত উৎসবটিতে সিনেমাপ্রেমীরা উপভোগ করেছেন ৭৫ দেশের ২০৩টি ছবি। সুন্দরের হাত ছানিময় সেই ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে। দুই শতাধিক চলচ্চিত্রের মধ্যে বিচারকদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিভাগের সেরা চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রদান করা হয় পুরস্কার। উৎসবের সবচেয়ে আলোচিত এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগে সেরা ছবির পুরস্কার জিতে নেয় উজবেকিস্তানের সিনেমা ‘সানডে’। জলতরঙ্গ নৃত্যদলের মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে সমাপনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে এবং ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য বেশ কিছু ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের কথা জানান। উৎসবের পার্মান্যান্ট ভেন্যু, নির্দিষ্ট বাজেট এবং বছরব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া ভবিষ্যতেও এ ধরনের কাজের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সমাপনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। সমাপনী সিনেমা হিসেবে প্রদর্শিত হয় ইকবাল এইচ চৌধুরী পরিচালিত সিনেমা বলী। এটিই ছিল বলীর বাংলাদেশের প্রিমিয়ার শো।
এশিয়ান ফিল্ম কম্পিটিশন সেকশনের বেস্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডটি জিতে নেয় শোকির খোলিখভ নির্মিত উজবেকিস্তানের ছবি ‘সানডে’। পুরস্কারের অর্থ হিসেবে এই ছবির নির্মাতার হাতে এক লাখ টাকার চেক এবং সম্মাননা স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন অতিথিরা। এই বিভাগে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ নির্মাতার পুরস্কার পেয়েছে দুই চীনা পরিচালক হাওফেং ও জাওফেং জু। আর শ্রেষ্ঠ নির্মাতা হিসেবে বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছেন মাহমুদ কালার। এই বিভাগে জাপানিজ সিনেমা ‘পারফর্মিং কাউরো’স ফিউনারেল’-এর জন্য সেরা চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার পেয়েছেন তাকাতো নিশি ও নোরিকো ইউসা। হোয়েন দ্য ওয়ালনাট লিভস শীর্ষক তুরস্কের সিনেমার জন্য সেরা সিনোমাটোগ্রাফির পুরস্কার পেয়েছেন নির্মাতা মেহমেত আলী কোনার। এই শাখায় ইরান ও তুরস্কের যৌথ প্রযোজনার মেলোডি সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন ইরানী অভিনেত্রী দিমান জান্দি। ইরানি সিনেমায় অভিনয় করে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জয় করেছেন রায়ান সারলাক।
বাংলাদেশ প্যানোরামার ট্যালেন্ট শাখায় ৩টি সিনেমা পুরস্কৃত হয়। ফিপ্রেসি জুরি প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায় মনন মুনতাকা নির্মিত ছবি এ লেজি নুন। এই শাখায় প্রথম রানার আপ পুরস্কার আসিফ ইউ হামিদ নির্মিত ছবি ফুলেরা পোশাক পরে না। সেকেন্ড রানার আপ পুরস্কার পায় মোবারক হোসেন নির্মিত ছবি পৈতৃক ভিটা।
চিলড্রেন ফিল্ম সেকশনের বাদল রহমান পুরস্কার পেয়েছে মিখায়েল লুকাচেভস্কি নির্মিত রাশিয়ান সিনেমা হোয়্যার দ্য হোয়াইট ক্রেনস ড্যান্স। এই শাখায় বেস্ট অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে সৃজিত মুখার্জী পরিচালিত ভারতীয় সিনেমা পদাতিক। স্পেশাল অডিয়েন্স পুরস্কার পেয়েছে জোসেলিটো আল্টারেজোস নির্মিত ফিলিপিন্সের সিনেমা দ্য গার্ডিয়ান অব অনার। উইম্যান ফিল্মমেকার শাখায় শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে মারিয়া বোবেভা নির্মিত বুলগেরিয়ার সিনেমা স্কারলেট। স্পিরিচুয়াল ফিল্ম সেকশনের সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায় লুইস ক্যাম্পোস নির্মিত পরিচালিত পর্তুগিজ সিনেমা মনটে ক্লেরিগো।