জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে ব্যান্ডদল জলের গান
সিনেমাপ্রেমীদের জন্য চমৎকার এক আয়োজন। দেশ-বিদেশের বিচিত্র বিষয়ের চলচ্চিত্রের সমাহারে সেজেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এবারের ফোকাস কান্ট্রি চীন। ২৩তম আসরে দর্শকরা দেখার সুযোগ পাবেন ৭৫টি দেশের পূর্ণ ও স্বল্পদৈর্ঘ্য ২২০টি ছবি। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৪৪টি সিনেমা প্রদর্শিত হবে।
রাজধানীর ছয়টি ভেন্যুতে দেখানো হবে এসব সিনেমা। এই কেন্দ্রগুলো হলো জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তন, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি ও গ্রিন ইউনিভার্সিটির মিলনায়তন। বিনা দর্শনীতে দর্শকরা দেখতে পারবেন উৎসবের সিনেমাগুলো। সীমিত আসন সংখ্যায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হয়েছে।
সিনেমার সঙ্গে উৎসবের বর্ণিলতা যুক্ত করেছে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, চলচ্চিত্রনির্ভর মাস্টার ক্লাস থেকে নারী নির্মাতাদের অধিবেশন কিংবা জুলাই অভ্যুত্থাননির্ভর বিশেষ প্রদর্শনী। বরাবরের মতো রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত ত্রয়োবিংশতম উৎসবের স্লোগান ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ।’
গানের সুরে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে সুন্দরের প্রতিচ্ছবিময় এ উৎসবের সূচনা হয় শনিবার। ব্যান্ডদল জলের গানের পরিবেশনা মুগ্ধতা ছড়ায় দর্শক থেকে অতিথিদের মননে। শ্রোতার হৃদয়ে ভালোলাগার অনুভব ছড়িয়ে দলটি একে একে গেয়ে শোনায় ‘সোয়া যাও যাওরে তোপান্তর’ ‘চান্দের আলো লাগে চান্দনি পসর রাতে’, ‘এমন যদি হতো আমি পাখির মতো উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ’ ও ‘বকুল ফুল বকুল ফুল সোনা দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি’ শীর্ষক সংগীত।
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার শুরুতে জুলাই বিপ্লবে নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং চীনা চলচ্চিত্র প্রশাসনের আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক শু ইয়াং। স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসব কমিটির আহমেদ মুজতবা জামাল। সভাপতিত্ব করেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, এটা শুধুই সিনেমা দেখার উৎসব নয়। তাই সিনেমা দেখার পাশাপাশি ভিন্ন দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সন্ধান মিলবে এই উৎসবে। সেই সুবাদে সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘটবে। অন্যদিকে দেশের তরুণ নির্মাতাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এ আয়োজন। এই আয়োজনের মাধ্যমে তারা দেশের দর্শকের পাশাপাশি বিশ্ববাসীর কাছে নিজেদের সৃষ্টিকে মেলে ধরার সুযোগ পাবেন।
সব মিলিয়ে এই উৎসব আমাদের গৌরবের। কারণ, দেশের ছবিকে জাতীয় ও বৈশ্বিকভাবে উপস্থাপনের প্ল্যাটফর্ম এই উৎসব। তাই নানা বিষয়ের পাশাপাশি সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানসহ দেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে সিনেমায়। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকাকে আমরা বহুত্ববাদী সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে চাই? বিশ্বের নানা দেশের সঙ্গে আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক সংযোগ ঘটাতে চাই।
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, পৃথিবীর নানা দেশের নির্মাতাদের ভাবনার বিনিময় হবে এই উৎসবে। পাশাপাশি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অন্য দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির সম্পর্কে জানার সুযোগ ঘটবে। সেই বাস্তবতায় এ উৎসব বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি মাধ্যম। এ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পকের্র ৫০ বছর উদ্যাপনের মতো উপলক্ষ তৈরি করে দিয়েছে এই আয়োজন।
জালাল আহমেদ বলেন, প্রতিটি উৎসব আয়োজন করতে বেগ পেতে হয়। টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। এই সমস্যা নিরসনে অর্থ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দের জন্য যদি এই উৎসবকে তালিকাভুক্ত করতে হবে। স্বাগত বক্তব্যে আহমেদ মুজতবা জামাল উৎসবের জন্য একটি স্থায়ী ভেন্যুর দাবি জানান।
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রদর্শিত হয় চিউ ঝ্যাং পরিচালিত চীনা ছবি ‘মুন ম্যান’। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার আগে বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীনা চলচ্চিত্রের পোস্টার প্রদর্শনী কর্নার উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
আগামী ১৯ জানয়ারি পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। বরাবরের মতো এবারের উৎসবে রয়েছে এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন্স ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম সেকশন। সঙ্গে থাকছে একাদশ আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স ও মাস্টার ক্লাস।
এই মাস্টার ক্লাসে কথা বলবেন চীনের লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালক ঝাং ইউদি, সার্বিয়ার চলচ্চিত্র প-িত অধ্যাপক ড্রেগেন মিলিনকোভিচ, নরওয়ের চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক অগি হোফার্ট এবং বাংলাদেশের চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান। ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি দু’দিনব্যাপী এ মাস্টার ক্লাসে আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে নিবন্ধিত অতিথিরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
এ ছাড়া উৎসবে থাকছে জুলাই গণঅভ্যত্থানের শহীদদের স্মরণে বিশেষ প্রদর্শনী। ১২, ১৫, ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি এই প্রদর্শনীগুলো উৎসবের প্রতিটি ভেন্যুতে। সাতটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হবে। নবীন ও প্রবীণ শিল্পীদের শিল্পকর্ম নিয়ে ৯ থেকে ১৭ জানুয়ারি আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে চলবে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী।
চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকা নিয়ে ১২ ও ১৩ জানুয়ারি ঢাকা ক্লাবের স্যামসন লাউঞ্জে হবে একাদশ আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স। নারী নির্মাতারা তাদের কাজের প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায় নিয়ে বিশ্বের খ্যাতিমান নারী নির্মাতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে এই অধিবেশনে।
ঈশ্বরদীতে ‘নোঙর আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব’ ॥ স্টাফ রিপোর্টার ঈশ্বরদী থেকে জানান, চেতনায় কবিতা, মননে কবিতা, চল বহুদূর’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ঈশ্বরদীতে দেশ-বিদেশের কবি-সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণে দুই দিনব্যাপী ‘নোঙর আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব’ শনিবার সন্ধ্যায় শেষ হচ্ছে।
এতে বিভিন্ন বিষয়ে অবদান রাখার জন্য ২৬ জনকে নোঙর সাহিত্য স্মারক সম্মাননা প্রদান করা হয়। শুক্রবার সকালে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন নেপালী কবি ও নেপাল একাডেমির মেম্বার সেক্রেটারি ধনো প্রাসাদ সুবেদি।
উদ্বোধনের পর বাংলাদেশ, ভারত, নেপালসহ দেশ-বিদেশের ২০০ কবি-সাহিত্যিক বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করেন। নোঙর সাহিত্যগোষ্ঠীর আয়োজনে এ আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
শোভাযাত্রা শেষে অনুষ্ঠান মঞ্চে দেশ-বিদেশী কবি-সাহিত্যিক ও অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা প্রদান করা হয়।