ওস্তাদ জাকির হোসেন
হঠাৎ খবর ছড়িয়ে পড়ে সঙ্কটজনক জ়াকির হোসেন। সকলেই প্রার্থনা করতে থাকেন সুস্থ হয়ে উঠুক প্রিয় শিল্পী। তবু শেষ রক্ষা হলো না। চিরনিদ্রায় জ়াকির। আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।
রবিবার সন্ধ্যায় হঠাৎই ছড়িয়ে পড়ে দুঃসংবাদ।
অনেকেরই অজানা তবলার বোলে যে মানুষটি মুগ্ধ করেছিল সকলকে, তাঁর বর্ণময় যাত্রাপথের শুরুটা খুব একটা মসৃণ ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাগ্যের চাকা ঘুরলেও, জ়াকিরের জীবন একটা সময় কেটেছে অভাব-অনটনে।
শুরুর সেই দিনগুলো ছিল একেবারে অন্যরকম। টাকার অভাবে একটা সময় ট্রেনের জেনারেল বগিতে যাতায়াত করতেন তিনি। সিট না পেলে মেঝেতে খবরের কাগজ বিছিয়ে ঘুমাতেন। তবে এমন চরম দুঃসময়েও কোলের মধ্যে তবলা আঁকড়ে রাত কাটাতেন তিনি। যাতে কারও পা না লাগে তাঁর সাধনার বাদ্যযন্ত্রে।
১৯৫১ সালের ৯ মার্চ মুম্বইয়ে জন্মগ্রহণ করেন উস্তাদ জ়াকির হুসেন। ১১ বছর বয়সে আমেরিকায় তাঁর প্রথম কনসার্ট। এবং ১৯৭৩ সালে তিনি ‘লিভিং দ্য মেটেরিয়াল ওয়ার্ল্ড’ নামে তাঁর প্রথম অ্যালবাম রিলিজ় করেন। পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ এবং পদ্মবিভূষণ ছাড়াও ২০২৪ সালে জ়াকিরের হাত ধরেই ভারতে আসে গ্র্যামি পুরস্কার।
মাত্র ১২ বছর বয়সে, জ়াকির হুসেন তাঁর বাবার সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। যেখানে পণ্ডিত রবিশঙ্কর এবং বিসমিল্লাহ খান-সহ অনেক সঙ্গীত দুনিয়ার নক্ষত্ররা উপস্থিত ছিলেন। সেই মঞ্চে জ়াকিরের পারফর্ম্যান্স মুগ্ধ করে সকলকে। সেদিনের অনুষ্ঠানে শিল্পী পারিশ্রমিক হিসেবে পেয়েছিলেন মাত্র ৫ টাকা।
একবার একটি সাক্ষাৎকারে জ়াকির বলেছিলেন, ওই ৫ টাকা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান পুরস্কার। সেই যাত্রাপথ সহজ না হলেও, তাঁর লড়াই ছিল মনের জোরে। পরিশ্রমই যে উত্থানের শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক তা বিশ্বাস করেই এগিয়ে গিয়েছিলেন উস্তাদ।
শহীদ