রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার
গুরুতর অসুস্থ হয়ে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। প্যানক্রিয়াস ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন একুশে পদকজয়ী এই শিল্পী। ৭২ বছর বয়সী এই শিল্পী বিগত ১০ দিন ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে পাপিয়া সারোয়ারকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
পাপিয়া সারোয়ারকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে আরেক রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী বুলবুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বছরখানেক আগে ক্যান্সার আক্রান্ত হন পাপিয়া সারোয়ার। তিনি ক্যান্সারের চতুর্থ স্টেজে রয়েছেন। বর্তমানে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে পাপিয়া সারোয়ার দুই মেয়ের মা। মেয়ে জারা কলেজ অফ নিউ জার্সিতে জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক এবং জিশা কানাডীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন নির্বাহী। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে দুই মেয়ে এখন দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
১৯৫২ সালে ২১ নভেম্বর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন পাপিয়া সারোয়ার। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্র অনুরাগী পাপিয়া ক্লাস সিক্সে ছায়ানটে ভর্তি হন। পরে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সাল থেকে বেতার ও টিভিতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে পারফর্ম করেন তিনি।
পাপিয়া অবশ্য শুরুর দিকে গাইতেন নজরুলসংগীত আর আধুনিক গান। পরে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া শুরু করেন ১৯৭২ সালে। তার প্রথম অডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। অ্যালবাটির নামও ছিল শিল্পীর নামেই ‘পাপিয়া সারোয়ার’। এরপর রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই জীবনের পথ চলেছেন তিনি। তিনি ১৯৯৬ সালে ‘গীতসুধা’ নামে একটি গানের দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে শান্তি নিকেতনে অধ্যয়ন করেছেন পাপিয়া সারোয়ার। পাপিয়া সারোয়ার ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০২১ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক একুশে পদক পান এই শিল্পী।
শুধু রবীন্দ্রসংগীতই নয়, আধুনিক গানেও সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন পাপিয়া সারোয়ার। ‘নাই টেলিফোন, নাই রে পিয়ন, নাই রে টেলিগ্রাম’ গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফিরে। আধুনিক গান বাছাইয়ে বেশ খুঁতখুঁতে ছিলেন বলে তার অ্যালবামের সংখ্যা কম। তার সর্বশেষ অ্যালবাম ‘আকাশ পানে হাত বাড়ালাম’ প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে।
পাপিয়া সারোয়ার জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলিন পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন একসময়। এখন এই পরিষদের নির্বাহী কমিটির সদস্য তিনি। এ বছর পরিষদের এক আয়োজনে তাকে গুণীজন সম্মাননা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়।
আর কে