ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

মিঠুন কেন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেন?

সংস্কৃতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:০৯, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

মিঠুন কেন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেন?

মিঠুন চক্রবর্তী।

ভারতের সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী। রাজনীতি অঙ্গনে প্রবেশের পর পত্রিকায় তেমন সাক্ষাৎকার দেন না।মুক্তির অপেক্ষায় চলতি বছরে তাঁর দ্বিতীয় বাংলা ছবি ‘সন্তান’। সে কারনে শুধুমাত্র সন্তান প্রসঙ্গে ভারতীয় এক গনমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেন। কথা ছিল রাজনীতি নিয় কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। আধ ঘণ্টায় খোলস ছেড়ে ‘ব্যক্তি’ মিঠুনই যেন বেশি করে ধরা দিলেন। কখনও শৈশবের দিন থেকে সুপারস্টার হওয়ার যাত্রাপথ, কখনও আবার স্ট্রাগলের কঠিন দিন থেকে পরিবার এবং অবশ্যই আগামীর পরিকল্পনা— খোলা মনে কথা বললেন অভিনেতা।

তিনি বললেন, মোবাইল তো ব্যবহার করি না। আর যে মোবাইলটা মাঝে মধ্যে আমার হাতে আপনারা দেখেন, সেটা আমার স্ত্রীর ফোন। আউটডোরে এলে আমার হাতে দিয়ে দেন। তাতে কোথায় রয়েছি, কী করছি, ট্র্যাক করতে পারেন (হাসি)। শুটিং না থাকলে বাড়িতে যখন থাকি আমার ছেলেমেয়েদের জন্য অন্তত একটা পদ রান্না করতেই হবে। তা ছাড়া বাড়িতে আমার ১৮টা বাচ্চা (সারমেয়) রয়েছে।

আমার বাড়িতে প্রায় ৭০০টা গাছ রয়েছে। সেগুলোর পরিচর্যা নিজের হাতে করি। এই সব নিয়ে দিব্যি সময় কেটে যায়। "সন্তান 'ছবি প্রসঙ্গে নিজের বাবা বসন্ত কুমার চত্রবর্তী সম্পর্কে মিঠুন বলেন, এক সময় মনে হত, লোকটা আমার জীবনে ভিলেন! তবে এখন বুঝতে পারি, তিনি যদি কড়া না হতেন, তা হলে আমি হয়তো মিঠুন চক্রবর্তী হতে পারতাম না। এখন মনে হয়, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ যদি কিছু হয়, তিনি আমার বাবা। তবে এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আমি বাবা-মায়েদের প্রসঙ্গে আরও একটা কথা বলতে চাই। আমরা ভাবতাম, মা-বাবা যে শিক্ষা দেন, সেটাই শ্রেষ্ঠ। আমি অন্তত সেটাই মনে করে বড় হয়েছি। কিন্তু এখন সমাজ বদলে গিয়েছে। মানুষের চিন্তাধারা বদলে গিয়েছে।

অনেক মূল্যবোধ আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তাই সমাজের বয়স্ক মা-বাবাদের সঙ্গে আজকে যে ভাবে অন্যায় বেড়ে চলেছে, সেটাই এই ছবিতে আমরা দেখাতে চেয়েছি। আর সবচেয়ে বড় বিষয়, এই ছবির বাবা সব কিছু মাথা নিচু করে মেনে নেয় না, সে ছেলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এবং শেষ পর্যন্ত মামলাও করে।তিনি বলেন, এই ছবিটার গল্পটা অসাধারণ। রাজ বলতেই আমি রাজি হয়ে যাই। ও খুবই শান্ত এবং কাজটা ভাল বোঝে। ‘সন্তান’-এর মতো ছবি কিন্তু পরিচালনা করা সহজ কাজ নয়। রাজ অসাধারণ কাজ করেছে। বিশেষ করে বলেই দিচ্ছি, ছবির ক্লাইম্যাক্স কিন্তু দর্শককে কাঁদাবেই। সব বাবার চরিত্র তো এক রকম নয়।

এই ছবিতে যে বাবা, সে তো অন্য ছবির থেকে আলাদা। এটা ‘প্রজাপতি’র বাবা নয়। তাই আমাকে আলাদা করে ভাবতেই হয়। নিজের ছেলে মেয়ে  সম্পর্কে মিঠুন বলেন, আমাকে তো সবাই বকাবকি করে (মুচকি হাসি)।সবচেয়ে কে বেশি বকেন?এমন প্রশ্নে বলেন,  (হেসে) মেয়ে (দিশানী চক্রবর্তী) বেশি বকাবকি করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা, মেয়ের কাছে বকুনি খাই। আমার তো একটাই মেয়ে। তাই কিছু করার নেই (হাসি)। যাঁদের একটিই মেয়ে রয়েছে, তাঁরা হয়তো বিষয়টা আরও ভাল বুঝতে পারবেন।

তবে আমার ছেলেরাও কিন্তু আমার প্রতি ততটাই দায়িত্বশীল। আসলে আমার সঙ্গে আমার সন্তানদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক।  আমি সব সময়েই ওদের বলেছি, তোমাদের নিজের লড়াই লড়তে হবে। আমি জানি, ওরা এখনও লড়াই করছে, খুব কষ্ট করছে। পাশাপাশি এটাও জানি, ওরা সময়ের সঙ্গে আরও শক্ত হয়েছে। কেউ বেশি পেয়েছে, কেউ কম। যেমন, নমশি এখন বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দিল্লি ফাইল্‌স’-এ অভিনয় করছে। মিমো আবার নীরজ পাণ্ডের ‘খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’ এবং বিক্রম ভট্টের ‘হন্টেড ২’-এ অভিনয় করছে। ওরা সকলেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। কাজ নিয়ে আলোচনা হয়।

মতামত বা পরামর্শ দিই। আমি গাইড করি। কিন্তু বলি, ফ্লোরে শট দেওয়ার সময় নিজেকেই সেই চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে হবে। ওরা আমার কাছে আদরও পেয়েছে, শাসনও পেয়েছে। মা-বাবার মূল্যবোধটাও পেয়েছে। বিশেষ করে পিঙ্কি (মিঠুনের স্ত্রী যোগিতা বালি) একজন অসাধারণ মা। আমি যখন শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকতাম, তখন ও একা হাতে পরিবারটাকে আগলে রাখত। শিডিউল থাকলে, মাঝে হয়তো এক মাস ছুটি নিয়ে নিতাম। তার পর, পরিবারকে নিয়ে বিদেশে ঘুরতে চলে যেতাম। চার-পাঁচটা দেশ ঘুরে একসঙ্গে সময় কাটিয়ে আবার ফিরে আসতাম। তবে আদর দিয়ে সন্তানদের মাথায় তোলার মতো বাবা আমি নই (হাসি)। তাই আমার মধ্যে কোনও আক্ষেপ নেই।  

স্ত্রী কি বকুনি দেয়? এমন প্রশ্নে মিঠুন বলেন, (হেসে) আগে ও খুবই শান্ত ছিল। খুবই শান্ত মেয়ে। এখন জানি না কী হয়েছে, সব কথাতেই একটু চেঁচামেচি শুরু করে দেয়! আগে মনে হত, এ রকম বৌ ভাবাই যায় না। আর এখন মনে হয়, ওরে বাবা! এ তো ডেঞ্জারাস! এখন একটু ভয় পেতে শুরু করেছি (হাসি)। স্বপ্নের চরিত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনও দিনই ভাবিনি। যা এসেছে, সেই ভাবেই নিজেকে ভেঙেছি এবং কাজ করেছি। তবে প্রত্যেক বারেই নতুন নতুন চরিত্র পেয়েছি। আর এখন তো সিনেমাও অনেকটাই বদলে গিয়েছে। আগে তো একই রকমের ছবি করতাম। নাচ, গান আর অ্যাকশন।

একটু ভালবাসা, একটু কমেডি— ব্যস ছবি শেষ! এখন অর্থপূর্ণ চরিত্র করছি বলে অনেক বেশি প্রস্তাব আসে। আমার মনকে নাড়া দিতে হবে। আমি চাইলে প্রতি দিন ১০টা ছবি সাইন করতে পারি— হিন্দি-বাংলা মিশিয়ে এত বেশি প্রস্তাব আসে। কিন্তু আমি রাজি হই না। বলি, পারব না। কখনও শরীর ভাল নেই-গোছের মিথ্যাও বলি। এড়িয়ে যাই। আসলে এখন আমার গল্প পছন্দ না হলে, আমি সেই ছবি করব না। অনেকে আমার বায়োপিক করতে চায়,  আমি না বলে দিই। আমি চাই না, আমার বায়োপিক তৈরি হোক। কারণ সেখানে শুধুই দুঃখ! আমার প্রত্যেকটা দিন স্ট্রাগল।

নতুন প্রজন্মের যাঁরা মন শক্ত করে পায়ের নীচের জমি শক্ত করার জন্য লড়াই করছেন, আমার বায়োপিক দেখলে তাঁদের মন ভেঙে যাবে। কেউ কেউ হয়তো অভিনয় ছেড়েই দেবেন। আর আমি সেটা চাই না। আমি শুধু একটাই কথা বলি— আমি যদি পারি, তা হলে তুমিও একদিন পারবে। আমার প্রাপ্তি আছে কিন্তু ৯৭ শতাংশ যন্ত্রণা এবং আমার লড়াই। আমি নিশ্চিত, এতটা কষ্ট কেউ মেনে নিতে পারবে না।নতুন নতুন চরিত্র আমাকে আরও বেশি অভিনয় করার মনোবল জোগাচ্ছে। আমার মোটিভেশন এখনও বেঁচে রয়েছে। আজকে কখনও আপনার লড়াইয়ের দিনগুলোকে ফিরে দেখলে  কি মনে হয়?

এমন প্রশ্নের জবাবে সুপারস্টার বলেন, খুব ভয় লাগে। হাত-পা কাঁপে! নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকি।  মনে হয়, আবার যেন সেই জীবন ফিরে না আসে। আমার ছেলেমেয়েরা যেন আমার মতো কষ্ট না পায়। সত্যিই বলছি, ভাবলে খুব...খুব ভয় পাই।

 

গৌতম/ আর কে

×