ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিজয়ের মাসে শিল্পকলার একগুচ্ছ বর্ণিল কর্মসূচি 

সংস্কৃতি প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বিজয়ের মাসে শিল্পকলার একগুচ্ছ বর্ণিল কর্মসূচি 

বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে একগুচ্ছ বর্ণিল কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আর এই আয়োজনসমূহ রাজধানীর সমান্তরালে অনুষ্ঠিত হবে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে। যাত্রা উসব থেকে শুরু করে জাতীয় যন্ত্রসংগীত উৎসব, গণঅভ্যুত্থানের গান, নাট্য প্রদর্শনী, সাধু মেলা, কাওয়ালি গানের পরিবেশনা, জুলাই অভ্যুত্থানের পারফরমেন্স, মাল্টিমিডিয়া ভিআর প্রদর্শনী, বিভিন্ন জেলায় ভ্রাম্যমাণ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিক উপস্থাপনা, বিজয় দিবস উদযাপন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের স্মরণানুষ্ঠান, জাতী ভাস্বর্য প্রদর্শনীসহ শিল্পের বহুমাত্রিক শাখার আলিঙ্গনে সজ্জিত হয়েছে এই অনুষ্ঠানমালা। 

আমনজতাকে একাডেমির কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে থাকবে গার্মেন্টস শ্রমিকদের পরিবেশনা।  এসবের সঙ্গে থাকছে  আলোকচিত্র প্রশিক্ষণ, পাক্ষিক বাহাস সিরিজ, পোস্টারে জুলাই অভ্যুত্থান ও নতুন ওয়েব জার্নাল প্রকাশসহ নানা কার্যক্রম। শিল্পচর্চায় নতুনত্বের সন্ধান এবং গণমুখী  করে তোলা লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে এই এই বিশদ কর্মপরিকল্পনা। 

বুধবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর মাসজুড়ে নেওয়া বিশদ কর্মসূচি  তুলে ধরে একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, শিল্প-সংস্কৃতিকে আমরা সমাজের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চাই। গণমুখী শিল্প সৃষ্টির পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই। শিল্পের আশ্রয়ে নতুন চিন্তার ক্ষেত্রে তৈরি করতে চাই। পাশাপাশি বাহাসের মাধ্যমে যে কোনো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই। সাধারণ মানুষকে সঙ্গী করে  নতুন বাংলাদেশের পথ পরিক্রমা তৈরি করতে  চাই। 

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের ক্ষত এখনো মানুষের  মনে রয়ে গেছে। সে কথা চিন্তা করেই আপাতত অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া  কোনো ব্যক্তিকে শিল্পকলার মঞ্চে পরিবেশনা উপস্থাপন  থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  তবে এই ব্যক্তি কিংবা শিল্পীদের কোনো তালিকা করা হয়নি। এসময় তিনি জানান, শিল্পকলা একাডেমি থেকে চলচ্চিত্র বিভাগ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অধিকাংশের মতামতের   ভিত্তিতে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে। তাই একাডেমিতে চলচ্চিত্রবিষক পূণাঙ্গ বিভাগ থাকবে। 

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ, একাডেমির নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির, চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান, সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান প্রমুখ।  

ডিসেম্বর মাসের কর্মসূচি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিস্তৃত এই কর্মযজ্ঞের অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার সিলেটের চাঁদনী ঘাটে কাওয়ালি সংগীত পরিবেশন করবেন ঢাকার সমীর কাওয়াল ও তার দল এবং স্থানীয় কাওয়ালি শিল্পীরা। শুক্রবার গাজীপুরের রাজবাড়ী মাঠে অনুষ্ঠিত হবে হবে ‘গণঅভ্যুত্থানের গান’। শ্রুমিক জনতা বাহাসের মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠস্বরকে শ্রদ্ধা নিবেদনের এ আয়োজনে থাকবে গার্মেন্টস শ্রমিক ও জ্বীন ব্রাদার্সের শিল্পীদের পরিবেশনা।

একই দিনে নেত্রকোণার বিরিশিরি কালচাচারাল একাডেমি মিলনায়তনে আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসবের আয়োজন করা হবে। এছাড়া এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের চারুকলা অনুষদ, ছবির হাট, বটতলা ও হাকিম চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে ‘শোন মহাজন আমরা অনেকজন’ শীর্ষক গণঅভ্যুত্থানের পারফরমেন্স। শনি ও রবিবার জাতীয় যন্ত্রসংগীত উৎসব অনুষ্ঠিত হবে বিভাগীয় শহর সিলেট, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে।   

৮  থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত একাডেমির চিত্রশালা ভবনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে উপজীব্য করে গ্রাফিতিবিষক ‘জুলাই ২০২৪’ শীর্ষক নকশিকাঁথা তৈরির কর্মশালার আয়োজন করা হবে। ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স। এছাড়া ৯ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে গৃহশ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিক ও রিকশাচালকদের আলোকচিত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।  

১৩ ডিসেম্বর নাট্যদল দেশনাটকের ‘নিত্যপুরাণ’, যশোরের বিবর্তনের ‘মাতব্রিং’ নাটক দুটি মঞ্চস্থ হবে কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। ১৭ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বরগুনার মহিষকাটায় এবং ২৯ থেকে ২৫ ডিসেম্বর খুলনায় যাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন করা হবে ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে। ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ভিআর গ্যালারির উদ্বোধন করা হবে। ষষ্ঠ জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীর ৩৬০ ডিগ্রি মাল্টিমিডিয়া ভিআর প্রদর্শনীর মাধ্যমে এই গ্যালারির উদ্বোধন হবে। 

এছাড়া ডিসেম্বরের বিভিন্ন দিনে  ঠাকুরগাঁও, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ,  ফরিদপুর, পিরোজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নাট্য প্রদর্শনী, ভ্রাম্যমাণ সাংস্কতিক পরিবেশনা, সাধু মেলা,  ভাওয়াইয়া গানের আসর, হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

মনোয়ার/ এসআর

×