ছবি: সংগৃহীত।
সম্প্রতি, প্রাক্তন ক্রিকেটার নভজ্যোৎ সিংহ সিধু কাপিল শর্মা শো-তে এসে দাবি করেছেন যে, তাঁর স্ত্রীর ক্যান্সার প্রাকৃতিক চিকিৎসা এবং বিশেষ ডায়েটের মাধ্যমে পুরোপুরি সেরে গেছে। এই দাবির প্রেক্ষিতে রোজলিন খান নামের এক বলিউড অভিনেত্রী সহ ছত্তীসগঢ় সিভিল সোসাইটি (সিসিএস) চরম বিরোধিতা জানিয়েছে। সিধুর স্ত্রীর নাম নথিভুক্ত করেই ৮৫০ কোটি টাকার আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে এবং সিধুকে দাবি করা ভুল তথ্যের জন্য ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে, না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় জনপ্রিয় টেলিভিশন কমেডিয়ান কপিল শর্মাও জড়িত হয়েছেন, কারণ রোজলিন খান নামের এক বলিউড অভিনেত্রী সিধু এবং কপিল শর্মার বিরুদ্ধে ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করার জন্য আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। ক্যান্সার রোগীদের বিভ্রান্ত করে চিকিৎসা শুরু করার জন্য তিনি তাঁদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন।
রাজনীতিতে প্রবেশের পর থেকেই বিতর্কের শিকার হচ্ছেন নভজ্যোৎ সিংহ সিধু। এবার, তাঁর স্ত্রীর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার দাবি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সিধু জানান, তাঁর স্ত্রীর ক্যান্সার "স্টেজ ফোর" ছিল, তবে প্রাকৃতিক চিকিৎসা ও বিশেষ ডায়েটের মাধ্যমে তা পরাজিত হয়েছে।
গত ২১ নভেম্বর এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি দাবি করেন, স্ত্রীর চিকিৎসা হয়েছে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে। তিনি জানান, স্ত্রীর চিকিৎসকরা তাঁকে ৪০ দিনের বেশি সময় বাঁচতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন। সেই থেকেই সিধু নিজে ক্যান্সার সম্পর্কিত গবেষণা শুরু করেন এবং তিনি বুঝতে পারেন যে, দুধ, ময়দা, চিনির মতো খাদ্যসামগ্রী ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
সিধুর দাবি ছিল, চিনি ও কার্বহাইড্রেট পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে ক্যান্সারের কোষ মারা যায়। তিনি জানান, তাঁর স্ত্রীর ডায়েটে ছিল লেবুজল, কাঁচা হলুদ, নিমপাতা, অ্যাপল সাইডার ভিনিগার, তুলসিপাতা, কুমড়ো, বেদানা, আমলকি, বিটের রস এবং আখরোট। এছাড়া, নারকেল তেল এবং আমন্ড তেল দিয়ে রান্না করা খাবারই খাওয়ানো হয়েছিল। সিধু দাবি করেন, এই নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করেই তাঁর স্ত্রী ক্যান্সারকে হারিয়ে সুস্থ হয়েছেন।
তবে সিধুর এই দাবির সঙ্গে একমত নন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা। টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, "ক্যান্সারের রোগীকে অভুক্ত রেখে বা ডেয়ারি পণ্য না খাইয়ে রোগমুক্তির দাবি করা বিপজ্জনক।" বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার ধরা পড়লে তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি এবং অস্ত্রোপচার—এই চিকিৎসাগুলির কার্যকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত এবং এগুলোই ক্যান্সারের চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসায় সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা শুরু করা উচিত। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক চিকিৎসা এবং খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই রোগ জয় করা সম্ভব নয়।
এখন, সিধুর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের পথে হাঁটছেন ক্যান্সার চিকিৎসকরা, পাশাপাশি ছত্তীসগঢ় সিভিল সোসাইটি এবং রোজলিন খানও তাঁর বিরুদ্ধে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। তাঁরা সিধুর বক্তব্যকে বিপজ্জনক এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তিকর উপায়ে পথ দেখানোর জন্য দায়ী করছেন।
এবার সিধু এবং কপিল শর্মার বিরুদ্ধে ক্যান্সার চিকিৎসা সম্পর্কিত এই অস্বাভাবিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত পদক্ষেপগুলি আরও জোরালো হতে পারে, যা তাঁদের জন্য নতুন আইনি জটিলতা সৃষ্টি করবে।
নুসরাত