বাঙালির মনন ও সৃজনশীলতার পরিচয়বহ প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে ভাষাশহীদদের রক্তের ঋণকে ধারণ করে ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানটি। সময়ের স্রোতধারায় কাল মঙ্গলবার বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক প্রতিষ্ঠানটির ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে একাডেমির পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহিদদের স্মৃতির প্রতি এবং বাংলা একাডেমির স্বপ্নদ্রষ্টা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এরপর বেলা তিনটায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বক্তৃতার আয়োজন করা হয়েছে। এতে বক্তৃতা দেবেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মনসুর মুসা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক =উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। স্বাগত ভাষণ দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
ইতিহাসের তথ্যসূত্রে জানা যায়, ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন বর্ধমান হাউসে বাংলা একাডেমির পথচলা শুরু হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, গবেষণা ও প্রচারের লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠার ৬২ বছর পরও সে লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে বাংলা একাডেমি।
বাংলা একাডেমির প্রথম সচিব ছিলেন মুহম্মদ বরকতুল্লাহ, তার পদবি ছিল বিশেষ কর্মকর্তা বা স্পেশাল অফিসার। প্রথম পরিচালক হিসেবে অধ্যাপক মুহম্মদ এনামুল হক, প্রথম মহাপরিচালক ছিলেন অধ্যাপক মাযহারুল ইসলাম। একাডেমি থেকে প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ হলো আহমদ শরীফ সম্পাদিত দৌলত উজির বাহরাম খানের ‘লাইলী মজনু'। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ছয় হাজার বই। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র ‘আঞ্চলিক ভাষা অভিধান', ‘বিবর্তনমূলক অভিধান', ‘লোকজ সাংস্কৃতিক ইতিহাস', ‘রবীন্দ্র জীবনী', ‘বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস', ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস', ‘বিজ্ঞানকোষ', ‘প্লেটোর আইন-কানুন' ইত্যাদি। এ ছাড়া 'বাংলা একাডেমি পত্রিকা', ‘উত্তরাধিকার', ‘বাংলা একাডেমি বার্তা', ‘বাংলা একাডেমি বিজ্ঞান পত্রিকা', ‘বাংলা একাডেমি জার্নাল' ও ‘ধানশালিকের দেশ’ নামে ছয়টি নিয়মিত প্রকাশনা রয়েছে।
চারটি বিভাগের মাধ্যমে বাংলা একাডেমি বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করছে। সেগুলো হলোÑ গবেষণা, সংকলন ও ফোকলোর বিভাগ; ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও পত্রিকা বিভাগ; পাঠ্যপুস্তক বিভাগ এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ বিভাগ। একাডেমি প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন করে। সেই সঙ্গে প্রদান করে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, যা দেশের অন্যতম সম্মানের এক পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত। এ ছাড়া রবীন্দ্র পুরস্কার, মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার ও প্রবাসী সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে থাকে। এসবের পাশাপাশি বর্ধমান হাউসে ভাষা আন্দোলন জাদুঘর জাতীয় সাহিত্য ও লেখক জাদুঘর এবং লোকঐতিহ্য জাদুঘর পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ভাস্কর নভেরা প্রদর্শনালয় নামে একটি গ্যালারিও রয়েছে একাডেমির অধীনে।
মনোয়ার