কবিতার পংক্তিমালায় রঙিন হয়ে উঠলো হালকা শীতল হেমন্তের সন্ধ্যাটি। কাব্যগ্রন্থ কিংবা কবিতার খাতার ভাঁজ ছেড়ে একগুচ্ছ কবিতা যেন সশরীরে হাজির হলো কবিতাপ্রেমীদের সামনে। ভালোলা ও মুগ্ধতায় প্লাবিত হলো তাদের হৃদয়।
কবিতার দোলায়িত ছন্দের শিল্পের উচ্চারণে উপস্থাপিত হলো কাব্যের অন্তর্নিহিত বিষয়। বৈচিত্র্যময় বিষয়নির্ভর সেসব কবিতার মাঝে মিশেছিল দ্রোহের কথা। আবৃত্তিশিল্পী কিংবা কবিকণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে বিপ্লবে রাজপথ রঞ্জিত হওয়ার করুণ আর্তনাদ। প্রকাশিত হয়েছে ক্ষতচিহ্ন জাগানিয়া অভ্যুত্থানের মর্মবেদনা। এর বাইরে কাব্যিক উচ্চারণে ভাস্বর হয়েছে আড়ালে থাকা ধর্ষকের প্রতি ধর্ষিতার ঘৃণার আক্ষেপ। উঠে এসে এসেছে সমাজ, দেশ কিংবা ইতিহাস আশ্রিত বিবিধ বিষয়। পঠিত হয়েছে চৈতন্যে কড়া নাড়া দেশ-বিদেশের কবিদের রচিত কবিতাসমূহ। রবিবার শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে কবিতাপাঠ ও আবৃত্তিবিষয়ক অনুষ্ঠানটি। ‘ওরা সবাই হঠাৎ ফোটা, শিমুলের ধবধবে তুলো’ প্রতিপাদ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রাবন্ধিক, গবেষক, সাহিত্য সমালোচক, সমাজ বিশ্লেষক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।
অতিথিদের সংক্ষিপ্ত কথন শেষে শুরু হয় না পরিবেশনা পর্ব। বৃন্দ কণ্ঠের আশ্রয়ে সূচনা হওয়া পরিবেশনায় ‘প্রজন্মের দ্রোহ’ শীর্ষক আবৃত্তি পরিবেশন করে ইউল্যাব বাংলা সংসদ। এরপর সুমন সোবহান রচিত ‘জুলাইয়ের রাজপথ’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন শহীদুল ইসলাম রাজু। কবিকন্ঠে কবিতাপাঠ করেন রুমীয়া রুমি। বাচিকশিল্পী শাহরিয়ার খান শিহাব আবৃত্তি করেন ‘সব ধর্ষক থাকে আড়ালে’ শিরোনামের কবিতা। অভ্র ভট্টাচার্যের লেখা ‘বিপ্লবের ক্ষতচিহ্ন থেকে গড়িয়ে গেছে রক্ত’ শিরোনামের কবিতা আবৃত্তি করেন কাজী বুশরা আহমেদ তিথি। ‘দীর্ঘশ্বাসের ইতিহাস’ শীর্ষক স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবিতা সাখাওয়াত টিপু। ভাস্কর চৌধুরী রচিত ‘আমার বন্ধু নিরঞ্জন’ ‘পরান মাঝি হাঁক দিয়েছে’ শীর্ষক কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী হাবীবা সুলতানা হ্যাপী। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কামরুজ্জামান কামু। সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা বিখ্যাত কবিতা ‘দেশলাই কাঠি’ আবৃত্তি করেন ফয়জুল আলম পাপপু। কবিকণ্ঠে ‘কবিতার তরুণেরা’, ‘লৌহজং’ ও ‘আত্মঘাতীর ট্রাউজার’ শিরোনামের কবিতা পাঠ করেন কবি কাজল শাহনেওয়াজ।
সব শেষে পরিবেশিত হয় ‘অনির্বাপিত দ্রোহ’ শীর্ষক বৃন্দ আবৃত্তি। প্রযোজনাটি পরিবেশন করে আবৃত্তি সংগঠন ধ্বনি। এটির প্রন্থনা ও নির্দেশনা দিয়েছে কবি মেহজাবীন প্রিয়ন্তী। পাঠে অংশ নেন প্রত্যাশা, প্রিয়ন্তী, ইমতিয়াজ, অনিতা, মিলি ও বারি।
ফুয়াদ