ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ছাপাই ছবিতে বিপর্যস্ত বুড়িগঙ্গার প্রতিচ্ছবি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ১৭ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২১:০০, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

ছাপাই ছবিতে বিপর্যস্ত বুড়িগঙ্গার প্রতিচ্ছবি

আলিয়ঁস ফ্রসেজেঁর লা্ গ্যালারিতে ডাউনওয়ার্ডস সারফেস শীর্ষক ছাপচিত্র প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন দর্শনার্থীদ্বয়।

বুড়িগঙ্গা নদী নিয়ে রয়েছে রাজধানীবাসীর বিশেষ আবেগ-অনুভূতি। কারণ  ৪০০ বছর আগে এই নদীর তীর ঘেঁষেই গড়ে উঠেছিল শহর ঢাকা। তবে দূষণে-দখলে জর্জরিত এই নদীর হারিয়েছে নাব্যতা। নষ্ট হয়েছে নদীর সৌন্দর্য।  সংকুচিত হয়েছে শহরের নৌপথ। আর নদীর বিপর্যয়ের  সেই বিয়োগান্তক অধ্যায় থেকে পুরনো স্মৃতি উঠে এসেছে ক্যানভাসে। একঝাঁক চিত্রশিল্পীর চিত্রপটে মূর্ত হয়েছে বুড়িগঙ্গা নদনির্ভর নানা দৃশ্যকল্প। ছাপচিত্র মাধ্যমের আশ্রয়ে ছবিগুলো এঁকেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রিন্টমেকিং বিভাগের ২৪ চারুশিক্ষার্থী। সেসব চিত্রকর্ম নিয়ে ফরাসি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী। শিরোনাম  ‘ডাউনওয়ার্ডস সারফেস’।


দশ দিনের একটি কর্মশালার মাধ্যমে চিত্রিত হয়েছে শিল্পায়োজনটির চিত্রকর্মসমূহ। সে কর্মশালাতেই আঁকা হয়েছে ঢাকার  গুরুত্বপূর্ণ অথচ উপেক্ষিত নিদর্শন  বিপর্যস্ত বুড়িগঙ্গা নদীর অন্তর্গত তাৎপর্যময় ছবিগুলো। ছাপচিত্রের উডকাট, লিথোগ্রাফি ও এচিংসহ নানা পদ্ধতির সম্মিলনে  শিক্ষার্থীবৃন্দ নিপুণ শৈল্পিক সুষমায় সৃজন করেছেন দৃশ্যকল্পসমূহ।  সেসব দৃশ্যের মাঝে গভীরতর রয়েছে উপলব্ধি। যার মাধ্যমে শিল্পরসিক বিচরণ করেন   ঋদ্ধ জমিন আর স্পন্দনশীল রঙের  ভুবনে। চিত্রশিবিরটি পরিচালনা করেছিলেন বেলজিয়ামের এনস্লেভ লা শমবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জুলিয়া লেব্রাও সেন্দ্রার। ডেলয়ুজিয়ান দশননির্ভর কর্মশালাটি ছিল দৃশ্যগত ও প্রতীকধর্মী জগতের সহজ প্রতিরূপকে আবদ্ধ করার  এক প্রয়াস।
প্রদর্শনীর প্রতিটি ছবি একটি মর্মভেদী শাণিত সচেতনতার  স্লোগানরূপে আবির্ভূত হয়েছে। রং ও রেখায় সৃজিত ক্যানভাসসমূহ যেন হয়ে উঠেছে নীরব অথচ শক্তিশালী নদীর নিজেরই স্মৃতিচারণা। যা কিনা দর্শককে  েেন নিয়ে যায় তার কথা শোনাতে। আলোড়ন তোলে অনুভূতি ও উপলব্ধির জগতে। পাশাপাশি নদীকে রক্ষার মাধ্যমে অসীম সম্ভাবনার ভবিষ্যতকে  মেলে ধরে। 
প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ধুঁকতে থাকা নদীর অস্তিত্বকে জানান দেয় চিত্রকর্মগুলো। মনে করিয়ে দেয়  পুরনো সময়ের স্রোতস্বিনী নদীর গতিধারার। যে নদী ঘিরে রয়েছে কতশত মিথ, কত পুরাণ আর বুকে ধারণ করে স্মৃতি। সেই স্মৃতি প্রতিবিম্বিত  নদীর  দুই তীরে বাস করা মানুষের জনজীবনকে। এই নদী  যেন এক প্রতীক, এই নগরীর, এই রাজধানীর, এই জাতির, যারা ভুলে গেছে কীভাবে নিজেকে ভালবাসতে হয়। এভাবেকই শৈল্পিক প্রচেষ্টাটি প্রাত্যহিক দৃশ্যগত উপস্থাপনাকে তুলে ধরেছে। পারস্পরিক সহাবস্থান, সহনশীলতা ও হারানোর শূন্যতা  নিয়ে একটি কথোপকথনকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে। 
প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পী হলেন- আবু আল নাঈম, আনিকা তাবাসসুম হৃদয়, ডেরিল অদ্রি রায়, দীপঙ্কর বিশ্বাস, ফাহিম খান তামীম, জাহরা নাজিফা, মিফতাহুল জান্নাত নাবেরী, শান্তা ইসলাম, পিনাক চন্দ্র দাস, প্রজ্ঞা মিঠান্ডা করেয়া, প্রসেনজিৎ ভদ্র, কাজী অর্চি রহমান, ঋতুরূপা তালুকদার সাথী, এস এম ওয়াশিফ উদ্দিন চৌধুরী, সহদেব বিশ্বাস, সাহেব চৌধুরী, শিমুল পাল, স্পর্শপ্রিযয় বর্ষণ রায়, সুব্রত চন্দ্র, সুমাইয়া বিনতে হাসান,  শুভ্র সরকার, তাজরিবা আক্তার ও  তৌহিদ আহমেদ সাকিব। প্রদর্শনীর আনুসঙ্গিক কাজে সহযোগিতা করেছেন চারুকলা অনুষদের প্রিন্টমেকিং বিভাগের প্রভাষক আবদল্লাহ আল বশির।
আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।

মনোয়ার/এমএম

×